চলতি ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া (IND vs AUS) টেস্ট সিরিজের আবিষ্কার বলা যেতে পারে নীতিশ কুমার রেড্ডি’কে (Nitish Kumar Reddy)। বিশাখাপত্তনমের ২১ বর্ষীয় অলরাউন্ডারকে যখন দলে নেওয়া হয়েছিলো, তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর অভিজ্ঞতা আদৌ যথেষ্ট কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই। কোচ গম্ভীরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও আনেন কেউ কেউ। কিন্তু যাবতীয় সমালোচনা্র জবাব নিজের পারফর্ম্যান্স দিয়েই দিয়েছেন নীতিশ। পার্থ, অ্যাডিলেডে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বেশ কিছু কার্যকরী ইনিংস খেলেছিলেন। পিঙ্ক বল টেস্টে তিনি দুই ইনিংসেই ছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। পালন করেছিলেন চতুর্থ বোলিং বিকল্পের ভূমিকা। গতকাল মেলবোর্নের বাইশ গজে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেন নীতিশ (Nitish Kumar Reddy)। কেরিয়ারে প্রথমবার পেরোলেন শতকের গণ্ডী।
Read More: IND vs AUS 4th Test: “বিরাট, আমি তোমার বাবা…” ফের বেলাগাম অজি মিডিয়া, কনস্টাস কাণ্ডে ‘স্টার ওয়ার্স’ খোঁচা কোহলিকে !!
মেলবোর্নে দুর্ধর্ষ শতক নীতিশ রেড্ডি’র-
নীতিশ (Nitish Kumar Reddy) যখন ব্যাট করতে নামেন, তখন বেশ চাপে ভারতীয় ব্যাটিং। ৬ উইকেট হারিয়ে বসা টিম ইন্ডিয়াকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিলেন কামিন্স-স্টার্করা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সাজঘরে ফেরেন রবীন্দ্র জাদেজাও (Ravindra Jadeja)। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দরকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার কাজটা শুরু করেন তরুণ অলরাউন্ডার। প্রথম লক্ষ্য ছিলো ফলো-অন রক্ষা করা। ধৈর্য্য, সংযম আর অধ্যবসায়কে সঙ্গী করে তা পূরণ করেন দু’জনে। এরপর স্কোরবোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে ব্রতী হন তাঁরা। দিনের দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট তুলতে পারে নি অস্ট্রেলিয়া। প্রতিপক্ষকে হতদ্যম করে দেন নীতিশ (Nitish Kumar Reddy)। কাট, পুল বা ড্রাইভ-নিখুঁত দক্ষতায় চালান পাল্টা আক্রমণ। চা পানের বিরতিতে তাঁর নামের পাশে ছিলো ৮৫ রান।
তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে অর্ধশতক সম্পূর্ণ করেন ওয়াশিংটন (Washinton Sundar)। নীতিশ তখন ‘নার্ভাস নাইন্টিজে।’ তাঁর শতক সম্ভাবনার পথে আচমকাই বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভাগ্য। পরপর ওয়াশিংটন ও জসপ্রীত বুমরাহ ফেরেন সাজঘরে। প্যাট কামিন্সের ওভারের তিনটি বল রুখতে হত এগারো নম্বর ব্যাটার মহম্মদ সিরাজকে (Mohammed Siraj)। মেলবোর্নের ৭০০০০ জনতার সম্মিলিত উৎকন্ঠার ছবি যেন ধরা পড়েছিলো নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে থাকা নীতিশের শরীরী ভাষাতে। শেষমেশ কামিন্সের চ্যালেঞ্জ সামলে দেন সিরিজ। ধরে প্রাণ ফেরে বিশাখাপত্তনমের ওপেনারের। স্ট্রাইক ফিরে পেয়েই তাড়াহুড়ো করেন নি তিনি। স্কট বোল্যান্ডের প্রথম দুটি বল ‘ডিফেন্ড’ করেন। তৃতীয় ডেলিভারিটিকে মিড অনের উপর দিয়ে চিপ করে বাউন্ডারিতে পাঠাতেই হয় স্বপ্নপূরণ। ব্যাট আকাশে তুলে যখন অভিবাদন গ্রহণ করছেন নীতিশ (Nitish Kumar Reddy), তখন গ্যালারিতে অঝোরে কাঁদছেন তাঁর ‘গর্বিত’ পিতা।
দেখুন শতরানের মুহূর্ত-
NITISH CENTURY!
A glorious lofted drive brings up the milestone!
His dad in tears in the stands, what a moment 🙌#AUSvIND pic.twitter.com/W1SJNHlN4J
— 7Cricket (@7Cricket) December 28, 2024
নীতিশের বাবা’কে শুভেচ্ছা রবি শাস্ত্রী’র-
নীতিশ কুমার রেড্ডি’র (Nitish Kumar Reddy) সাফল্য আবেগাপ্লুত ভারতের ক্রিকেটমহল। যখন শতকের মাইলস্টোন স্পর্শ করেন বিশাখাপত্তনমের তরুণ, তখন স্টার স্পোর্টসের হয়ে হিন্দিতে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri)। টি-২০ বিশ্বকাপ বা ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ের সময় কমেন্ট্রির মাইক হাতে তাঁকে সাবলীল শুনিয়েছে। এক মুহূর্তের জন্যও আবেগে বুজে আসে নি গলা। কিন্তু গতকালের ঘটনা যেন ব্যতিক্রম। ভাষা হারিয়েছিলেন প্রাক্তন টিম ইন্ডিয়া (Team India) কোচ। মাইক হাতে মৌন’ই ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। চোখের কোণে জমেছিলো জল। তা মুছতেও দেখা যায় শাস্ত্রীকে। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে নীতিশ কুমার রেড্ডি’র পরিবারের সাথে দেখা করেন তিনি। সেই সময়ই শতকের মুহূর্তের স্মৃতি রোমন্থন চলে বেশ কিছুক্ষণ। নীতিশের বাবা’কে আলাদা করে ধন্যবাদ জানান তিনি।
হিন্দুস্থান জিঙ্ক সংস্থায় কাজ করতেন নীতিশ কুমার রেড্ডি’র (Nitish Kumar Reddy) বাবা। কেবলমাত্র পুত্রের ক্রিকেটের কারণে আজ থেকে আট বছর আগে সেই চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। ব্যাট হাতে মেলবোর্নের মাঠে পিতার সেই আত্মত্যাগেরই যেন প্রতিদান দিলেন নীতিশ। জীবনযুদ্ধের এই কাহিনী যে তাঁকে আরও বেশী আবেগাপ্লুত করেছে তা স্বীকার করে নেন শাস্ত্রী (Ravi Shastri)। স্টার স্পোর্টসের উপস্থাপক যতীন সপ্রু’কে (Jatin Sapru) তিনি বলেন, “আমি সত্যিই ভাষা হারিয়েছিলাম। আমার চোখে সাধারণত জল আসে না, কিন্তু সেই সময় এসেছিলো। ইরফান (পাঠান) ও আপনাকে বলার সুযোগ দিয়েছিলাম।” একা শাস্ত্রী নয়, আবেগে ভাসেন সুনীল গাওস্কর’ও (Sunil Gavaskar)। এমনকি ইংরেজিতে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় জাস্টিন ল্যাঙ্গার, দীপ দাশগুপ্ত, মার্ক নিকোলাসের গলাতেও ধরা পড়ে আবেগের সুর।