WTC Final: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালে হতাশ করলো ভারতীয় দল। দক্ষিণ লন্ডনের কেনিংটন ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নাস্তানাবুদ হয়ে খেতাব হারালো ভারত। লাল বলের লড়াইতে পরাজয় এলো ২০৯ রানের ব্যবধানে। বছর দুই আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাউদাম্পটনের মাঠে ৮ উইকেটে হেরে টেস্টে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় নি ভারতের। ২০২৩-এও সেই স্বপ্ন অধরাই থেকেই গেলো। ওভালে টসে জিতে প্রথমে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠান ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। এক স্পিনার ও চার পেসারের ফর্মূলা ব্যবহার করে ম্যাচ হাতের মুঠোয় পুরে নিতে চেয়েছিলেন রোহিত। কিন্তু ব্যুমেরাং হয়ে ফেরে এই সিদ্ধান্ত। স্টিভ স্মিথ (Steve Smith) এবং ট্র্যাভিস হেডের (Travis Head) জোড়া সেঞ্চুরিতে ৪৬৯ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে নড়বড়ে ভারতের ইনিংস থামে ২৯৬ রানে। ১৭৩ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে ২৭০ রানের মাথায় ডিক্লেয়ার করে অস্ট্রেলিয়া। ৪৪৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভাত গুটিয়ে গেলো ২৩৪ রানেই। বিশাল ব্যবধানে হেরে মুখ পুড়লো ‘মেন ইন ব্লু’র। আইসিসি ট্রফির জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলো।
Read More: WTC Final: “দল নয়, চলে ব্যক্তিপুজো…” ভারতীয় দলের ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে গৌতম গম্ভীর নিশানা করলেন MS ধোনিকে !!
ভারতকে ডোবালো তাদের ব্যাটিং-

ওভালের বাইশ গজে ভারতের সামনে সমস্যার পাহাড় খাড়া করলো ব্যাটিং ব্যর্থতা। প্রথম ইনিংসে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) আউট হন ১৫ রান করে। আরেক ওপেনার শুভমান গিল (Shubman Gill) ফেরেন ১৩ রান করে। বিরাট কোহলি এবং চেতেশ্বর পূজারার ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান করে। একমাত্র অজিঙ্কা রাহানেকে (Ajinkya Rahane) দেখা গেলো খানিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। ৮৯ রান করেন তিনি। রবীন্দ্র জাদেজার (Ravindra Jadeja) ৪৮ এবং শার্দুল ঠাকুরের (Shardul Thakur) ৫১ রানের ইনিংসের বদান্যতায় সম্মানজনক রানে পৌঁছেছিলো ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসেও তারকাখচিত ব্যাটিং আক্রমণকে বেশ ভোঁতা মনে হলো। রোহিত-বিরাটরা অহেতুক স্যুইপ বা ড্রাইভের মত শট মারতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলেন। টেস্ট স্পেশ্যালিস্ট হিসেবে চেতেশ্বর পূজারার (Cheteshwar Pujara) থেকে অনেকটা আশা ছিলো ভারতের। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার লম্বা ইনিংস খেলেছেন তিনি। করেছেন দ্বিশতকও। ২০০০-এর বেশী রান রয়েছে ‘ব্যাগি গ্রিন’ বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময় ওভালে ২৭ রানের বেশী করতে পারলেন না তিনিও।
কাউন্টিতে সফল, WTC’তে হতাশ করলেন পূজারা-

ভারতের বাকি ব্যাটাররা যখন সকলেই আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত তখন নিভৃতে ইংল্যান্ড পাড়ি দিয়েছিলেন চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara) । পিচের স্যুইং,পরিবেশ, আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মনোনিবেশ করেছিলেন কাউন্টি ক্রিকেটে। অতীতে কেন্টের হয়ে খেলতে দেখা গিয়েছিলো রাহুল দ্রাবিড়কে (Rahul Dravid)। ল্যাঙ্কাশায়ার, গ্ল্যামারগনের হয়ে কাউন্টি খেলেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। শচীন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkkar) খেলেছেন ইয়র্কশায়ারের হয়ে। সেই পথ অনুসরণ করে পূজারা (Cheteshwar Pujara) যোগ দিয়েছিলেন সাসেক্সে। ২০২২ সালেও তাদের হয়ে কাউন্টিতে বেশ ভালো খেলেছিলেন পূজারা। গত মরসুমে সাসেক্সের হয়ে ৫টি শতরান-সহ ১০৯৪ রান ছিলো তাঁর। এবারও কাউন্টি ক্রিকেটে পূজারার ব্যাটে রানের রোশনাই দেখা গিয়েছিলো। মরসুমের প্রথম কয়েক ম্যাচেই তিনটি শতরান করেছিলেন তিনি। সাসেক্সের অধিনায়কও নির্বাচিত হন। এমনকি অস্ট্রেলিয়া তারকা স্টিভ স্মিথের (Steve Smith) সাথে একই দলে খেলেন।
পূজারার (Cheteshwar Pujara) কাউন্টি ফর্ম আশা জাগিয়েছিলো ভারতীয় সমর্থকদের মনে। ইংল্যান্ডের চেনা পরিবেশে বড় রানের ইনিংস খেলবেন ভারতীয় মিডল অর্ডারের স্তম্ভ। এমনটাই ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ব্যাট হাতে সেই আশাপূরণ করতে পারেন নি পূজারা। প্রথম ইনিংসে বলের স্যুইং বুঝতে না পেরে জাজমেন্ট দিতে গিয়ে উইকেট হারালেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। ক্যামেরন গ্রিনের (Cameron Green) ডেলিভারি ইনস্যুইং হয়ে অফস্টাম্প নড়িয়ে দেয়। একইভাবে আউট হন তরুণ ওপেনার শুভমান গিলও। তাঁদের আউট হওয়া দেখে ভারতীয় প্রাক্তনী রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri) বলেন, “শুভমান না হয় তরুণ, ও শিখবে ভবিষ্যতে। কিন্তু পূজারা? ও আর হবে শিখবে?” প্রসঙ্গত শাস্ত্রী নিজেও গ্ল্যামারগনের হয়ে কাউন্টি খেলেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও যেভাবে আউট হলেন পূজারা, তাকে কি ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় তা বুঝতে পারছেন না কেউই। প্যাট কামিন্সের (Pat Cummins) শর্ট বলে আপার কাট মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে বল তুলে দিলেন তিনি। এত অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হয়েও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কি করে এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীন শট মারতে পারেন তিনি? পূজারার (Cheteshwar Pujara) পারফর্ম্যান্সে বিরক্ত ভারতীয় সমর্থকেরা।