ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যান পৃথ্বী শ বিজয় হাজারে ট্রফিতে মুম্বাইয়ের হয়ে খেলে যথেষ্ট ভালো প্রদর্শন করেছেন, যারপর পৃথ্বীর ১৬৫ রানের ইনিংসের সৌজন্যে মুম্বাইয়ের দল বিজয় হাজারে একদিনের টুর্নামেন্টে কর্ণাটককে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছতে পেরেছে। জানিয়ে দিই যে ২০২১ সালের বিজয় হাজারে ট্রফিতে পৃথ্বী মোট ৭৫৪ রান করেছেন। এই মরশুমে বিজয় হাজারেতে সবচেয়ে বেশি রান করা খেলোয়াড়ও হয়েছেন তিনি। এখন মুম্বাইয়ের ফাইনালে পৌঁছনোর পর আগামী রবিবার তারা ফাইনালে মুখোমুখি হতে চলেছে উত্তরপ্রদেশের।
পৃথ্বী শকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চার টেস্ট ম্যাচের সিরিজে দলে শামিল করা হয়নি। আসলে অস্ট্রেলিয়া সফর চলাকালীন অ্যাডিলেড টেস্টে ০ আর ৪ রানের স্কোরে আউট হওয়ার পর তাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও তাকে আর সুযোগ দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় পৃথ্বী অস্ট্রেলিয়া সফরে বাদ পড়া নিয়ে নিরাশা প্রকাশ করেছেন।
মনকে শান্ত করার জন্য নিজের সঙ্গে কথা বলেছি
ভারতীয় দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান পৃথ্বী শ এই ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “অস্ট্রেলিয়া সফরে ভালো প্রদর্শন করতে অসফল হওয়ায় আর তারপর দল থেকে বাদ পড়ার পর আমি অনেক বেশি কনফিউজ ছিলাম। আমি নিজেকে এই প্রশ্ন করছিলাম যে এসব কেন হচ্ছে? আমার ব্যাটিংয়ে কি সমস্যা হচ্ছে? সেই সময় আমি নিজের মন শান্ত করার জন্য নিজের সঙ্গে বেশকিছু কথা বলি। আমি নিজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এটাও বলেছি যে গোলাপী বল ম্যাচের সময় বিশ্বজুড়ে বেশকিছু দুর্দান্ত ব্যাটসম্যানের সামনে ছিলাম। মনে এই প্রশ্ন ছিল যে আমি কেনো আউট হয়েছিলাম”।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে করেছি প্রশ্ন
ওই সাক্ষাতকারে পৃথ্বী আরও বলেন, “আমি স্বয়ং আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই বলছিলাম যে, আমি এত খারাপ খেলোয়াড় তো নই যতটা আমাকে বলা হচ্ছে। রবি শাস্ত্রী স্যার আর বিক্রম রাঠোর স্যার আমাকে এই ব্যাপারে অনুভবও করিয়েছেন যে আমি কোন জায়গায় ভুল ছিলাম। এর জন্য আমাকে যে কোনো সমাধান বের করতে হত আর নেটে প্রত্যাবর্তন করতে হত। আমি একটা ছোটো ভুল ছিল, যা আমি করছিলাম। অ্যাডিলেড টেস্টের ইনিংসগুলির সময় আমাকে খারাপ করা হয়েছিল। আমার ব্যাট আমার শরীরের সামান্য নীচে আসছিল। শুরুতে এটাই বিষয় ছিল। ব্যাটকে আমার নিজের কাছাকাছি রাখার প্রয়োজন ছিল। আমার ব্যাকলিফট ওইখানেই ছিল”।
শচীন স্যার বুঝিয়েছেন
পৃথ্বী শ আরও জানিয়েছেন যে, “আমি এরপর নিজের রুমে যাই আর খুব কাঁদি। আমার মনে হচ্ছিল যে কিছু তো আমার সঙ্গে ভুল হচ্ছে আর দ্রুতই আমাকে সমস্ত উত্তর পেতে হত। আমার কাচ্ছে সকলের ফোন আসছিল কিন্তু আমি তাও কারও সঙ্গে কথা বলিনি।। আমি সেই সময় এত চিন্তিত ছিলাম যে আমি কারও সঙ্গে কথা বলতেও সক্ষম ছিলাম না। আমার মনের মধ্যে বেশকিছু ব্যাপার চলছিল, আর আমি সমস্যায় ছিলাম যে আমি আউট হচ্ছিলাম। যা খুব দ্রুত ঠিক করতে হত। আমি ফিরে আসার পর শচীন তেন্ডুলকর স্যারের সঙ্গেও দেখা করি। তিনি আমাকে বোঝান যে খুব বেশি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। স্রেফ নিজের শরীরের কাছে খেলতে পারো তো খেলতে থাকো”।
আমি বিরারের ছেলে, হার মানতে শিখিনি
পৃথ্বী আগে আরও বলেন, “আমি বিরারের গলি থেকে এসেছি। আমি দ্রুত হার মানার পাত্র নই। আমি জানি যে কীভাবে বাউন্স ব্যাক করতে হবে, তা সে ক্লাব হোক বা মুম্বাই বা ভারতের হয়ে, আমি সবসময়ই নিজের থেকে দলকে উপরে দেখেছি। যদি আপনি এটা চাইবেন যে আমি ১০০ বলে ১ রন করব, তো এটা একদমই হতে পারে না। এটা আমার খেলা নয়। আমি এভাবে কখনও খেলতে পারব না। আমি কখনও এমন পরিস্থিতিতে আসিনি, যেমনটা অস্ট্রেলিয়ায় হয়েছে। আমি এখন যথেষ্ট মেহনত করেছি আর নেটে প্র্যাকটিসের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছি। যখন আপনাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয় তো ভালো প্রদর্শন করার জন্য প্রত্যাবর্তনের সময় অনেক বেশি চাপ থাকে। কোয়ার্টার ফাইনালের সময় আমার শরীর ভালো ছিল না। আমার পিঠেও অনেক বেশি ব্যাথা হচ্ছিল। আমাদের ফিজিও আর টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে ড্রেসিং রুমে যেতেও বলেছিল। কিন্তু আমি মানা করে দিই। ওরা পরে আমাকে ওষুধ দেন আর আমি নিয়মিত খেলতে থাকি। আমার ফোকাস ছিল অপরাজিত থাকার, যখন আমি খেলি, তো ব্যাটিং করার সময় সমসময় পরিস্থিতিকে সামলানোর জন্য এওং ভালো প্রদর্শনের জন্যও চেষ্টা করি। আমি নিয়মিত ভালো প্রদর্শন করতে আর রান করার জন্য অনেক বেশি উৎসুক থাকি”।