অস্ট্রেলিয়ায় টি-২০ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল হারের পর ক্রিকেট থেকে খানিক ছুটি নিয়েছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, কে এল রাহুলের মত ‘টিম ইন্ডিয়া’র মহাতারকারা। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তরুণ ব্রিগেড’কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটি সম্পূর্ণ ভেস্তে যায়। আর তৃতীয়’টি বৃষ্টিবিঘ্নিত হলেও ডাকওয়ার্থ ল্যুইস নিয়মে টাই হয়। মাউন্ট মাউঙ্গানুয়াতে দ্বিতীয় ম্যাচটি ভারত ৬৫ রানে জেতায় সিরিজ ১-০ ফলে পকেটে পুরে নেয় ‘মেন ইন ব্লু।’ সিনিয়রদের অবর্তমানে সঞ্জু স্যামসন, উমরান মালিকদের মত তরুণ প্রতিভাকে দলে দেখতে চেয়েছিলেন ভারতবাসী। তবে একটি ম্যাচেও প্রথম একাদশে জায়গা হয় নি তাঁদের। বরং ঋষভ পন্থ, ভুবনেশ্বর কুমারের মত প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের দেখা যায় নীল জার্সি গায়ে। প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেনো খেলানো হলো না তরুণদের? মঙ্গলবার ম্যাচ শেষে এই প্রশ্ন শুনলেন হার্দিক (Hardik Pandya)। জবাব দিতে গিয়ে খানিক মেজাজ’ও হারালেন তিনি।
নেপিয়ারে ‘টাই’ ম্যাচে প্রাপ্তি সিরাজ-

মাউন্ট মাউঙ্গানুয়া’তে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সূর্যকুমার যাদবের ৫১ বলে অপরাজিত ১১১ এবং দীপক হুডার ১০ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেটের স্পেলে ভর করে ভারত ৬৫ রানে উড়িয়ে দিয়েছিলো আয়োজক নিউজিল্যান্ড’কে। তৃতীয় ম্যাচে নেপিয়ারে ছিলো জয়ের হাতছানি। নিয়িমিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন না থাকায় কিউইদের নেতৃত্ব দেন টিম সাউদী। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ১৬০ রান করে নিউজিল্যান্ড। অর্শদীপ সিং ৪ উইকেট নেন। তবে মাতিয়ে দেন মহম্মদ সিরাজ(Mohammed Siraj)। নিজের ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন ৪ উইকেট। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৯ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত যখন ৭৫ এ তখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামায় খেলা শেষ করা যায় নি। ডাকওয়ার্থ ল্যুইসের জটিল হিসাব শেষে দেখা যায় পার স্কোর ৭৫। ম্যাচ ‘টাই’ ঘোষিত হয়। দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের দরুণ সিরিজ জিতলেও ভারত’কে তাড়া করে বেড়াচ্ছে বিতর্ক। নিউজিল্যান্ডের গতিময় পিচে অনেকেই স্পিডস্টার উমরান মালিক’কেUmran Malik) চেয়েছিলেন। পন্থের ফর্ম সমস্যার কারণে চেয়েছিলেন সঞ্জুকে(Sanju Samson)। রবি শাস্ত্রীর মত কেউ কেউ বলেছিলেন, “প্রয়োজনে বাকিসের বাইরে বসাও, কিন্তু সঞ্জুকে খেলাও।” সেই কথায় কর্ণপাত করে নি ভারতীয় দল। জায়গা হয় নি দুজনেরই। এই নিয়ে কঠিন প্রশ্নের সামনে পড়তে হয় অধিনায়ক’কে।
“বেশি অদলবদলে বিশ্বাস করি না” রুষ্ট পান্ডিয়ার সোজা জবাব-

বলা হয়েছিলো নতুন ভারতীয় দল খেলা যাবে, আগামীর প্রতিভাদের সুযোগ দেওয়া হবে, কিন্তু কোথায় কি? মোটামুটি অভিজ্ঞদের নিয়েই দল গড়েছিলেন অধিনায়ক হার্দিক(Hardik Pandya) এবং কোচ লক্ষ্মণ। প্রশ্নের মুখে পড়ে হার্দিক সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন, “ প্রথম কথা হলো বাইরে কে কি বলছে তাতে পেশাদার ক্রিকেটে কিছু এসে যায় না। এটা আমার টিম। আমার এবং কোচের যা ঠিক মনে হবে, যে দল আমরা মনে করবো যে আমাদের প্রয়োজন, সেই একাদশ’ই খেলানো হবে।” সুযোগ না মেলায় হতাশ হওয়ার কারণ নেই কারও, জানাচ্ছেন অধিনায়ক। “অনেক সময় আছে এখনও। সবাই সুযোগ পাবে, আর যখন পাবে তখন লম্বা খেলবে।” সিরিজে মাত্র তিনটি ম্যাচ ছিলো, তার মধ্যে একটা ভেস্তে যায় বৃষ্টিতে। সবাইকে সুযোগ দিতে না পারার সেটাও একটা কারণ বলেছেন তিনি। “ এটা যদি বড় সিরিজ হত, ম্যাচ বেশী থাকত, তাহলে অবশ্যই সবাইকে খেলানোর সুযোগ বেশী পাওয়া যেত। যেহেতু ছোটো সিরিজ ছিলো, সবাইকে সুযোগ দিতে পারি নি। আর আমি বিশেষ কাটছাঁট, অদলবদলে বিশ্বাস করি না, আগেও করি নি, ভবিষ্যতেও করবো না।” আত্মবিশ্বাসী সুরে জানিয়ে দিয়েছেন পান্ডিয়া (Hardik Pandya)।
কেন বাইরে উমরান-সঞ্জু? ব্যাখ্যা দিলেন হার্দিক-

বিগত আইপিএলে ১৫০ কিমি/ ঘন্টা গতিতে বল করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের উমরান মালিক (Umran Malik)। উমরান’কে ভারতীয় দলে দেখতে চেয়ে তখন থেকেই সরব ক্রিকেটমহল। আন্তর্জাতিক আঙিনায় আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কিছু সুযোগ পেলেও বিশেষ সফলতা পান নি তিনি। নিউজিল্যান্ড হতে পারত তাঁর কামব্যাকের মঞ্চ। অন্যদিকে সঞ্জু স্যামসনের (Sanju Samson) দুর্ভাগ্য চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। মাঝেমধ্যে এক-দুটো ম্যাচ খেলেন তিনি। ভালো খেললেও তারপর দীর্ঘদিন বাইরে থাকতে হয় তাঁকে। নিউজিল্যান্ডে সিনিয়র’রা না থাকলেও কেনো খেললেন না তাঁরা? ব্যাখ্যা দিয়ে হার্দিক (Hardik Pandya) জানালেন যে দলের ভারসাম্য রাখতেই অন্য খেলোয়াড়দের খেলানো হয়েছে। “ আমাদের একজন ষষ্ঠ বোলিং বিকল্প দরকার ছিলো। এই সিরিজে সেই কাজটা চমৎকার করেছে দীপক হুডা। এইভাবে ব্যাটসম্যান’রা যদি কয়েক ওভার হাত ঘোরাতে থাকে আমাদের কাছে বিকল্প বাড়বে বোলিং-এ বৈচিত্র এনে প্রতিপক্ষ’কে চমকে দেওয়ার।” বৃষ্টিতে ম্যাচ ‘টাই’ হওয়ায় হতাশ, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। বলেন, “পুরো ম্যাচ খেলে জিততেই বেশী ভালো লাগত। তবে যা হয়েছে তা মানতে হবে। পিচের যা অবস্থা,তাতে এখানে আক্রমণ’ই একমাত্র পন্থা ছিলো।” কুড়ি-বিশের ক্রিকেট শেষে এখন একদিনের সিরিজ খেলবে দল। সেইদলে অবশ্য নেই হার্দিক (Hardik Pandya)। নেতার ভূমিকায় দেখা যাবে শিখর ধাওয়ান’কে।