এন শ্রীনিবাসন ও শশাঙ্ক মনোহরের পর তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে আইসিসি’র চেয়ারম্যান পদে বসতে চলেছেন জয় শাহ (Jay Shah)। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পুত্রের বর্তমান বয়স ৩৫। কনিষ্ঠতম ব্যক্তি হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে চলেছেন তিনি। ২০০৯ সালে গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য হিসেবে ক্রিকেট প্রশাসনে পা রেখেছিলেন তিনি। এরপর থেকে কেবল উপরের দিকেই গিয়েছে তাঁর কেরিয়ার গ্রাফ। প্রথমে জিসিএ সহ-সচিব, পরে বিসিসিআই ফিনান্স কমিটির সদস্য হয়েছেন। ২০১৯-এ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ভারতীয় বোর্ড সচিবের দায়িত্ব, এখনও সেই পদেই রয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ ফুরোতে বাকি এখনও এক বছর, কিন্তু তার আগেই আরও একধাপ উঁচুতে উঠছেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেট ছেড়ে এবার শাসন করবেন বিশ্ব ক্রিকেটকে।
নিউজিল্যান্ডের গ্রেগ বার্কলে (Greg Barclay) যে আইসিসি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিচ্ছেন তা জানা গিয়েছিলো ২০ অগস্ট। তাঁর উত্তরসূরি’র খোঁজ শুরু করেছিলো বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারিত হয় ২৭ অগস্ট। জয় শাহের (Jay Shah) বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী না দাঁড়ানোয় ভোটাভুটির প্রয়োজন হয় নি। সর্বসম্মতিক্রমেই নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। মোট ১৬টি দেশের মতদানের ক্ষমতা রয়েছে চেয়ারম্যান নির্বাচনে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে যে ১৫টি দেশ সরাসরি সমর্থন জানিয়েছে ভারতীয় প্রশাসক’কে। এর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মত দেশ’ও। তিনি পাশে পান নি কেবল পাকিস্তানকে। তবে তারা কেবল নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। ফলে তাদের মৌনতাকেই সম্মতি বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। ৩০ নভেম্বর মেয়াদ ফুরোচ্ছে বার্কলের। ডিসেম্বরের শুরুতেই জয় শাহ বসছেন কুরসীতে।
Read More: জাতীয় দলে জায়গা পেলেন সমিত দ্রাবিড়, কিংবদন্তি পিতার পথেই হাঁটছেন পুত্র !!
ভারত-পাক সম্পর্কে ইতিবাচক মোড় ?
রাজনীতির যূপকাষ্ঠে বারবার বলি হতে হয়েছে ভারত-পাকিস্তান (IND-PAK) ক্রিকেটীয় সম্পর্ককে। ২০০৮ সালের পর আর ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে পড়শি দেশে পা রাখে নি টিম ইন্ডিয়া। ২০১২-১৩ মরসুমের পর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ভারতে আসে নি পাকিস্তান’ও। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে শেষবার কোনো দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজ খেলা হয়েছে সেই ২০০৭ সালে। ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ, ২০২৩-এর ওডিআই বিশ্বকাপ খেলতে পাক দল ভারতে এলেও, কোনো সময়ই ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রে যেতে রাজী হয় নি। জয় শাহ (Jay Shah) বিসিসিআই-এর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যেন আরও নেতিবাচক হয়েছে পারস্পরিক সম্পর্ক। গত বছরের এশিয়া কাপ পাকিস্তান থেকে সরাতে চাপ দিয়েছিলেন তিনি। শেষমেশ যদিও ৪টি ম্যাচ আয়োজন করতে পেরেছিলো পাকিস্তান। ভারত নিজেদের ম্যাচগুলি খেলেছিলো শ্রীলঙ্কাতে। একইসাথে ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ক্ষেত্রেও এতদিন একই অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।
বিসিসিআই-এর অন্দরেও জয় শাহের (Jay Shah) ভিন্ন মতের মানুষ’ও যে রয়েছেন তাও স্পষ্ট হয়েছে গত বছর। বোর্ড সভাপতি রজার বিনি (Roger Binny) ও সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা পাকিস্তানের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রতিবেশী দেশে গিয়েছিলেন এশিয়া কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। দেশে ফিরে তাদের আতিথেয়তার প্রশংসাই করেন তাঁরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাক ভূমিতে পা রাখা নিয়ে জয় শাহ যখন স্পষ্ট নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছেন, তখন রাজীব শুক্লার (Rajiv Shukla) মন্তব্য অনেকটাই নমনীয় লেগেছে ক্রিকেটজনতার। তিনি জানিয়েছেন এখনও আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। BCCI-তে জয় শাহ’র (Jay Shah) উত্তরসূরি হতে পারেন রোহন জেটলি। মনে করা হচ্ছে যে তিনি সদর্থক ভূমিকা নিলে ফের দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে। পড়শি দেশে যেতেও পারেন ভারতীয় খেলোয়াড়’রা।
IPL-এ দেখা যেতে পারে পাক ক্রিকেটারদের-
২০০৮ সালে যখন আইপিএল (IPL) শুরু হয়েছিলো, তখন অন্যান্য সব ক্রিকেটখেলিয়ে দেশের মত পাক খেলোয়াড়দের জন্যও উন্মুক্ত ছিলো টুর্নামেন্টের দরজা। শোয়েব আখতার, সলমন বাট, কামরান আকমল, শাহীদ আফ্রিদিদের মত খেলোয়াড় অংশও নিয়েছিলেন বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে। সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে পার্পল ক্যাপ জিতেছিলেন পাকিস্তানেরই সোহেল তনবীর। কিন্তু ঐ বছরই ২৬/১১’র নাশকতা ঘটায় পরবর্তী মরসুম থেকে নির্বাসিত করা হয় পড়শি দেশের খেলোয়াড়দের। সেই নির্বাসন দেড় দশক পরেও আর ওঠে নি। যদি জয় শাহের (Jay Shah) বিদায়ের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়, তখন তুলে নেওয়া হতে পারে সেই ব্যান। সেক্ষেত্রে বাবর আজম, শাহীন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফদের মত টি-২০ ক্রিকেটের পরিচিত নামদের আইপিএলের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির জার্সিতে ভারতের মাটিতে দেখতে পারেন ক্রিকেটজনতা।