সামনের কয়েক মাসে ঠাসা ক্রিকেট সূচি ভারতের। বর্তমানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ খেলছে দল। এরপর আয়ারল্যান্ডে উড়ে যাবে টিম ইন্ডিয়া (Team India)। তারপর রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ, এশিয়া কাপ এবং ওডিআই বিশ্বকাপ। এরপর অজিদের বিপক্ষে একটি পাঁচ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলে সটান দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যাবে ভারতীয় দল। সেখানে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই মাঠে নামবে ভারত। ডিসেম্বরের ১০, ১২ এবং ১৪ তারিখ রয়েছে তিনটি টি-২০ ম্যাচ। এরপর ওডিআই এবং টেস্ট সিরিজও খেলবে ভারত।
এই বছর টি-২০ ক্রিকেটে পরীক্ষানিরীক্ষার পথে হেঁটেছে টিম ইন্ডিয়া। সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাইরে রেখে সুযোগ দিয়েছে নতুন মুখেদের। বরং একদিনের ক্রিকেটে জোর দিয়েছে দল। কিন্তু দেশের মাঠে একদিনের বিশ্বকাপের পর ফের ফোকাস ফিরবে কুড়ি-বিশের খেলার উপর। ২০২৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বসতে চলেছে টি-২০ বিশ্বকাপের আসর। ২০০৭ সালের পর দেড় দশক কেটে গেলেও এই ট্রফি মুঠোয় আসে নি টিম ইন্ডিয়ার। ২০২১ সালে ফিরতে হয়েছিলো গ্রুপ পর্ব থেকে আর ২০২২ সালে সেমিফাইনালে গিয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জুটেছিলো হার। সেই ধারাবাহিক ব্যর্থতার ছবিটা বদলানোর মরিয়া প্রয়াস থাকবে ২০২৪ সালে।
২০২২-এর সেমিফাইনালে হারের পরেই স্ট্র্যাটেজি বদলেছিলো বিসিসিআই। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের মত সিনিয়রদের ছেঁটে ফেলে নতুনদের সুযোগ দিয়েছিলো তারা। নেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো হার্দিক পান্ডিয়াকে। আগামী টি-২০ বিশ্বকাপে যাতে তারুণ্যে ভরপুর এক দলকে মাঠে নামানো যায়, সেটাই লক্ষ্য বোর্ডের। আগামী বিশ্বকাপের আগে ‘নিউ লুক’ টিম ইন্ডিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে ফেললে বিশ্বকাপে আর ফেরানো নাও হতে পারে বিরাট-রোহিতকে। বছরের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ হতে চলেছে আগামী বছরের কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের ‘গ্র্যান্ড অডিশন।’
Read More: World Cup 2023: বিশ্বকাপের নতুন সূচি প্রকাশ করল আইসিসি, পাল্টে গেল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের তারিখ !!
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ও টি-২০ বিশ্বকাপের সম্ভাব্য ভারতীয় দল-
ওপেনার-
শুভমান গিল, কে এল রাহুল এবং ঈশান কিষণ-
অধিনায়ক হিসেবে হার্দিক পান্ডিয়ার অন্যতম পছন্দের পাত্র শুভমান গিল। টি-২০তে ইতিমধ্যেই শতরান করেছেন শুভমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এখনও অবধি রানের মুখ না দেখলেও আগামী দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ওপেনার হিসেবে তাঁকে সুযোগ দিতে পারে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট। শুভমান ছাড়া ওপেনার হিসেবে দেখা যেতে পারে ঈশান কিষণকে। তাঁর সাম্প্রতিক টি-২০ ফর্ম ভালো নয়। তবে বছর শেষের আগে ঈশানের ফর্মে ফেরার আশায় থাকবে ভারতীয় শিবির। চোট সারিয়ে ফিরে টি-২০ দলে ফের ডাক পেতে পারেন কে এল রাহুলও। তবে সম্ভবত শিকে ছিঁড়বে না যশস্বী জয়সওয়ালের ভাগ্যে।
মিডল অর্ডার-
সূর্যকুমার যাদব, তিলক বর্মা, রিঙ্কু সিং, শ্রেয়স আইয়ার-
বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে ভারতীয় দলের মিডল অর্ডারের মূল স্তম্ভ হতে চলেছেন সূর্যকুমার যাদব। একদিনের ক্রিকেটে এখনও নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে না পারলেও কুড়ি-বিশের খেলায় তাঁর সমকক্ষ কেউ আপাতত নেই গোটা বিশ্বে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে তাঁর জায়গা পাওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। উইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক সিরিজেই দাপট দেখিয়েছেন তিলক বর্মা। তিন ম্যাচে তাঁর রান ৩৯, ৫১ এবং ৪৯*। ফর্ম আগামী এশিয়ান গেমসে ধরে রাখতে পারলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দলে থাকবেন তিনিও।
‘ফিনিশার’ হিসেবে দলের সাথে যুক্ত করা হতে পারে রিঙ্কু সিং’কে। আইপিএলে ব্যাট হাতে বেশ কিছু অবিশ্বাস্য পারফর্ম্যান্স দিতে দেখা গিয়েছে রিঙ্কুকে। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা হোক বা লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের বিরুদ্ধে ৩১ বলে ৬৭*, বিশেষজ্ঞদের নজর কেড়েছেন তিনি। আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজে প্রথম জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাবেন তিনি। ভালো পারফর্ম করলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিমানে জায়গা পাবেন তিনি। এছাড়া পিঠের চোট সারিয়ে ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে পারেন শ্রেয়স আইয়ার’ও।
অলরাউন্ডার-
হার্দিক পান্ডিয়া এবং রবীন্দ্র জাদেজা-
ভারতীয় টি-২০ দলে অলরাউন্ডার হিসেবে জায়গা পেতে পারেন স্বয়ং অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া এবং রবীন্দ্র জাদেজা। গত নভেম্বর থেকেই কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে দেশের অধিনায়কত্ব করছেন হার্দিক। মনে করা হচ্ছে ২০২৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপেও নেতার দায়িত্ব পাবেন তিনিই। ২০২২-এর এশিয়া কাপের পর আন্তর্জাতিক টি-২০তে মাঠে নামেন নি জাদেজা। এবারের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের পর কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারেন জাদেজা।
স্পিনার-
কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহাল-
স্পিন বিভাগ সামলাতে দেখা যাবে কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহালের কুল-চা জুটিকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ টি-২০ উইকেটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন চাহাল। পাশাপাশি গত ম্যাচেই আন্তর্জাতিক টি-২০তে দ্রুততম ভারতীয় হিসেবে ৫০ উইকেটের মাইলস্টোন স্পর্শ করেন কুলদীপ যাদব। আগামী দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও ভারতের স্পিন জুটি হতে চলেছেন তাঁরাই।
পেসার-
জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ, আর্শদীপ সিং, মুকেশ কুমার-
পিঠের চোট সারিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে অগস্টের মাঝামাঝি সময়ে মাঠে ফিরছেন জসপ্রীত বুমরাহ। সম্পূর্ণ ফিট হয়ে ওঠার পর আগামী টি-২০ বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করবেন তিনি। প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে বেছে নেবেন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজকে। সাদা বলের ক্রিকেটেও যে তিনি যথেষ্ট কার্যকরী তা বুঝিয়েছেন মহম্মদ সিরাজ। ২০২৩-এর আইপিএলে পাওয়ার-প্লে’তে দারুণ নিয়ন্ত্রণ দেখিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে সুযোগ দেওয়া হবে তাঁকেও। ‘ডেথ ওভারে’ মুকেশ কুমার দ্রুত আস্থা অর্জন করছেন দলের। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে টিম ইন্ডিয়ার বিমানের টিকিট কনফার্ম করার সুযোগ থাকছে তাঁরও। পাশাপাশি বাঁ-হাতি পেসার আর্শদীপ সিং ভারতীয় পেস আক্রমণে যোগ করবেন বৈচিত্র।
সম্পূর্ণ দল এক ঝলকে-
শুভমান গিল, কে এল রাহুল, ঈশান কিষণ (উইকেটরক্ষক), সূর্যকুমার যাদব, শ্রেয়স আইয়ার, রিঙ্কু সিং, তিলক বর্মা, হার্দিক পান্ডিয়া (অধিনায়ক), রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহাল, জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ, আর্শদীপ সিং, মুকেশ কুমার।