এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের ধনীতম বোর্ড ভারতের বিসিসিআই (BCCI)। সর্বোচ্চ ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা আইসিসিতেও অনেক সিদ্ধান্তই হয় বিসিসিআই-এর অঙ্গুলিহেলনেই। এমনকি আইসিসি বিভিন্ন টুর্নামেন্ট বা ইভেন্ট থেকে যে বার্ষিক রাজস্ব পায় তারও সিংহভাগটা আসে ভারতীয় বোর্ডের কোষাগারেই। সংবাদসংস্থা ইএসপিএন ক্রিকইনফোর রিপোর্ট অনুযায়ী মোট রাজস্বের প্রায় ৩৮.৫ শতাংশ পাচ্ছে বিসিসিআই (BCCI)। টাকার অঙ্কে যা ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের রাজস্ব লাভের শেয়ার যথাক্রমে ৬.৮৯ ও ৬.২৫ শতাংশ। চার নম্বরে থাকা পাকিস্তানের পাওয়া অর্থের পরিমাণ ৫.৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা তিন হেভিওয়েট একত্রেও অর্থের নিরিখে পাল্লা দিতে পারবে না বিসিসিআই-এর সাথে। ক্রিকেটদুনিয়ার শিখরে থাকা বিসিসিআই-ও নাকি নতিস্বীকার করেছে মুকেশ আম্বানির (Mukesh Ambani) কাছে, এমনটাই সন্দেহ অনেকের।
Read More: IPL 2025: দলবদলে সিলমোহর দিলেন ঋষভ পন্থ, মরসুম শুরুর আগেই ঘর ভাঙছে দিল্লী ক্যাপিটালসের !!
ক্রিকেটদুনিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার আম্বানিদের-
২০০৮ সালে প্রথমবার ক্রিকেটদুনিয়ায় প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ করেন রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কর্ণধার। আইপিএলে (IPL) সর্বোচ্চ দামে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI) দলের মালিকানা পান তিনি। এখনও অবধি পাঁচবার ট্রফি জিতেছে তাঁর দল। টুর্নামেন্টের সফলতম দলের তালিকায় রয়েছে সবার উপরে। মাঝেমধ্যে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত মুম্বইয়ের পক্ষে গেলে অনেকেই আঙুল তুলেছেন রিলায়েন্স কর্তার বিপুল ধনসম্পদের দিকে। গত সতেরো বছরে ক্রিকেটদুনিয়ায় নিজেদের পায়ের তলার জমি শক্ত করেছে মুকেশ আম্বানির (Mukesh Ambani) সংস্থা। বিদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগগুলিতে দল কিনেছেন তাঁরা। এছাড়া ভারতেও উইমেন্স প্রিমিয়ার লীগে (WPL) মুম্বই ইন্ডিয়ান্সেরই নারী দলের মালিকানা রিলায়েন্স রেখেছে নিজেদের হাতে। সেখানেও সাফল্যের জন্য বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয় নি আম্বানিদের। প্রথম মরসুমেই ট্রফি ঢুকেছে তাদের ক্যাবিনেটে। দ্বিতীয় মরসুমেও তারা খেলেছে ফাইনাল।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্রভাব স্পষ্ট ভারতীয় দলে-
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দুনিয়া থেকে বেরিয়ে টিম ইন্ডিয়াতেও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI) প্রভাব এখন স্পষ্ট বলে মনে করছেন ক্রিকেটজনতার একটা অংশ। ভারতীয় দলের বর্তমান গঠনতন্ত্রের দিকেই তাকালেই নাকি বোঝা যাচ্ছে তেমনটা। এখন ভারতের টেস্ট ও ওডিআই দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। যিনি কিনা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জার্সিতে মাঠে নামছেন শেষ ১৪ মরসুম। নানা সময় সাদা বলের ক্রিকেটে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। তিনিও রয়েছেন মুম্বইতে। রোহিতের টি-২০ অবসরের পর নতুন অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়েছে সূর্যকুমার যাদব’কে (Suryakumar Yadav)। ঘটনাচক্রে তিনিও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের খেলোয়াড়। এমার্জিং এশিয়া কাপ খেলতে ভারত-এ দল রয়েছে ওমানে। সেখানেও নেতার দায়িত্বে রয়েছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সেরই তিলক বর্মা। এমনকি টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জসপ্রীত বুমরাহ’র নাম। আম্বানি কানেকশন খুঁজে নিতে তাই বেগ পেতে হয় নি কাউকেই।
আম্বানি-BCCIজোট বাণিজ্যিক চুক্তিতেও-
দেশের টেলিকম বাজারে একাধিপত্য স্থাপনের পথে রিলায়েন্স সংস্থার মালিকানাধীন জিও। ধীরে ধীরে স্পোর্টস ব্রডকাস্টিং-এর ক্ষেত্রেও তেমনই একাধিপত্য স্থাপনের লক্ষ্যে এগোচ্ছেন মুকেশ আম্বানিরা (Mukesh Ambani)। ইতিমধ্যেই আইএসএল, ফিফা বিশ্বকাপ, ডায়মণ্ড লীগের মত টুর্নামেন্ট সম্প্রচারের দায়িত্ব পেয়েছেন তারা। বিসিসিআই-এর (BCCI) হাত ধরে ক্রিকেট সম্প্রচারের দুনিয়াতেও পা রেখেছে আম্বানিদের স্পোর্টস-১৮ চ্যানেল ও জিও সিনেমা অ্যাপ ও ওয়েবসাইট। প্রথমে আইপিএলের ডিজিটার স্বত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিলো তারা। পরে ভারতের হোম ম্যাচগুলি সম্প্রচারের জন্যও বিসিসিআই-এর (BCCI) সাথে বিশাল অঙ্কের চুক্তি সই করেছে তারা। জিও’র আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে নি স্টার স্পোর্টসের মত সংস্থাও। শেষমেশ জিও’র সাথেই নিজেদের হটস্টার স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম মার্জ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।