খেলোয়াড় জীবনে বিতর্ক তাড়া করে বেরিয়েছে মহম্মদ আজহারউদ্দীনকে (Mohammad Azharuddin)। হায়দ্রাবাদের ক্রিকেটার টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জার্সি গায়ে চাপিয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন ১৯৮৫ সালে। ২০০০ সালে গড়াপেটা কাণ্ডে জড়িয়ে নির্বাসিত হতে হয়েছিলো তাঁকে। অন্ধকার নেমে এসেছিলো ভারতীয় ক্রিকেটে। দেশের হয়ে ৯৯ টেস্ট, ৩৩৪ টি একদিনের ম্যাচ খেললেও বাইশ গজের দুনিয়ায় আজহারউদ্দীনের (Mohammad Azharuddin) ‘লেগ্যাসি’র একটা বড় অংশ এখনও আবর্তিত হয় নয়া শতাব্দীর গোড়ার দিকেই সেই গড়াপেটা কাণ্ডকে ঘিরেই। এছাড়াও তাঁর রাজনৈতিক জীবন, বলি অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানির (Sangeeta Bijlani) সাথে প্রেম, বাইক দুর্ঘটনায় পুত্র আয়াজউদ্দীনের মৃত্যু’র মত নানান কারণে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এবার আর্থিক তছরুপের অভিযোগ আজহারের বিরুদ্ধে।
Read More: শতকের হ্যাট্রিক অভিমণ্যু ঈশ্বরণের, টিম ইন্ডিয়ার দরজায় কড়া নাড়ছেন বাংলা’র ওপেনার !!
ইডি’র সমন পেলেন আজহারউদ্দীন-
গড়াপেটা কাণ্ডে নাম জড়ানোর পর বিসিসিআই-এর (BCCI) আজীবন নির্বাসনের মুখে পড়তে হয়েছিলো মহম্মদ আজহারউদ্দীনকে (Mohammad Azaharuddin)। টিম ইন্ডিয়া (Team India) কেরিয়ারে ইতি পড়ে সেখানেই। কলঙ্কের দাগ নিজের গা থেকে মুছতে এরপরে দীর্ঘ আইনি লড়াই লড়েছেন হায়দ্রাবাদের ক্রিকেটার। শেষমেশ ২০১২ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট তাঁর সেই আজীবন নির্বাসনের সিদ্ধান্ত রদের সিদ্ধান্ত জানায়। ক্রিকেট দুনিয়ার দরজা ফের খুলে গিয়েছিলো আজহারের সামনে। এর ৭ বছর পর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট সংস্থার (HCA) প্রধানের দায়িত্ব নেন তিনি। আজহার (Mohammad Azharuddin) পদে থাকাকালীনই হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে দুর্নীতি চলেছে বলে উঠেছে অভিযোগ।
হায়দ্রাবাদের দুর্নীতিদমন ব্যুরো’র (ACB) তিনটি এফআইআরের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থার সমন ইতিমধ্যে পেয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন ভারত (Team India) অধিনায়ক। সূত্রের খবর ২০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট সংস্থা’র বেশ কয়েকজন কর্তা’র বিরুদ্ধে। ২০২৩-এর নভেম্বর মাসে প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২-এর (PMLA) আওতায় তেলেঙ্গানার নয়টি জায়গায় অনুসন্ধান চালায় ইডি। হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট সংস্থার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও সচিব গাদ্দাম বিনোদ (Gaddam Vinod), শিভাল যাদব ও আর্শাদ আইয়ুর-এর বাসভবনে হানা দিয়ে ১০.৩৯ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করে কেন্দ্রীয় সরকারী এজেন্সি। এস এস কনসালট্যান্টস নামে একটি সংস্থা ও তার ম্যানেজিং ডায়রেক্টর সত্যনারায়ণা’র বাড়িতেও চলে অনুসন্ধান।
পছন্দের সংস্থাকে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশী দামে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ডিজেল জেনারেটর, অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র ও ছাউনি ক্রয়ের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। যে চার্জশীট ইডি (ED) পেশ করেছে তাতে জানানো হয়েছে যে নির্দিষ্ট ডেডলাইন মেনে কাজ হয় নি উপ্পলের স্টেডিয়ামে। ইচ্ছাকৃত কাজে দেরী করে বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ঠিকাদারী সংস্থাকে ‘অ্যাডভান্স পেমেন্ট’ করা হলেও কোনো কাজ করানো হয় নি। বেশ কিছু ভুয়ো সংস্থার নাম’ও সামনে এসেছে। গত নভেম্বর থেকে গোটা ঘটনার তদন্ত চললেও এই প্রথম নাম জড়িয়েছে আজহারের (Mohammad Azharuddin)। দুর্নীতির ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা কি ছিলো বা আদৌ কোনো ভূমিকা ছিলো কিনা তা স্পষ্ট করার জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট কার্যালয়ে হাজিরা দেওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাঁকে।
আজহারের কেরিয়ার পরিসংখ্যান-
মহম্মদ আজহারউদ্দীনের টেস্ট অভিষেক হয় ১৯৮৪’র ৩১ ডিসেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। একদিনের ক্রিকেটে প্রথম দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ১৯৮৫ সালের জানুয়ারিতে। প্রথম তিন টেস্টেই শতরান এসেছিলো তাঁর ব্যাট থেকে। ক্রিকেট ইতিহাসে এই কৃতিত্ব নেই আর কারও। ৯৯ টেস্ট ম্যাচে দেশের হয়ে তিনি করেছেন ৬২১৫ রান। শতকের সংখ্যা ২২। অর্ধশতক ২১টি। ৩৩৪টি একদিনের ম্যাচে ৩৬.৯২ গড়ে রয়েছে ৯৩৭৮ রান। ৭টি শতরান ও ৫৮টি অর্ধশতক রয়েছে তাঁর। গড়াপেটার অভিযোগে আচমকা কেরিয়ারে দাঁড়ি না পড়ে গেলে হয়ত প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওডিআই-তে ১০০০০ রানের মাইলস্টোন পেরোনোর অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করতে পারতেন আজহার। তিনটি ভিন্ন ওডিআই বিশ্বকাপে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এই কৃতিত্ব নেই টিম ইন্ডিয়ার (Team India) অন্য কোনো অধিনায়কের। ১৯৯০-৯১ ও ১৯৯৫ সালে আজহারের নেতৃত্বাধীন ভারত জেতে এশিয়া কাপ।