এগিয়ে আসছে বিশ্বকাপ। গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার নজর এখন ভারতের দিকে। ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১ সালের পর চতুর্থবারের জন্য ক্রিকেটবিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চলেছে ভারত। এই মধ্যে আইসিসি’র তরফে ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্বকাপের (ICC World Cup) সূচিও। ভারতের দশ শহরে ৪৬ দিন ধরে হবে বিশ্বকাপের ৪৮টি ম্যাচ। ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে টুর্নামেন্ট। ১৯ নভেম্বর হবে ফাইনাল। উদ্বোধনী ম্যাচ এবং ফাইনালের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দর্শকাসন বিশিষ্ট নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামকে। দুটি সেমিফাইনাল আয়োজন করবে যথাক্রমে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে এবং কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স। এছাড়াও আয়োজক শহরের তালিকায় থাকছে দিল্লী, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, পুণে, লক্ষ্ণৌ, ধর্মশালা এবং হায়দ্রাবাদ।
বিশ্বকাপকে (ICC World Cup) ঘিরে চড়েছে উত্তেজনার পারদ। মাঠের বাইরে সব আয়োজন যাতে সুচারু ভাবে হয় তা নিশ্চিত করতে জোরকদমে কাজ চালাচ্ছে বিসিসিআই। ঘোষণা করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প। আর দেশের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রস্তুতিতে কোনো খামিতি রাখছে না ভারতীয় দলও। তৃতীয় খেতাবের আশায় সেরা এগারো খুঁজে নেওয়ার কাজে ব্যপৃত কোচ রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা, হার্দিক পান্ডিয়ার মত তারকাদের পাশাপাশি ভারতীয় দলের পেস আক্রমণের অন্যতম মুখ হিসেবে বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাকা মহম্মদ শামির (Mohammad Shami)। ভালো পারফর্ম করতে মুখিয়ে থাকবেন তিনি, কারণ বাংলার ডান-হাতি পেসারের সম্ভবত এটাই শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে। টুর্নামেন্ট শেষে টিম ইন্ডিয়াকে বিদায় জানাতে পারেন তিনি।
Read More: WC 2023: বিশ্বকাপ দলে জায়গা হবে না কুলচা জুটির, জায়গা করে নেবেন ৩৬ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ !!
অবসরের ভাবনা মহম্মদ শামির-
এই মুহূর্তে জাতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মহম্মদ শামি (Mohammad Shami)। আগামী এশিয়া কাপ (Asia Cup 2023) এবং একদিনের বিশ্বকাপেও (ICC World Cup 2023) তাঁর দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে টিম ইন্ডিয়া। শামির আগুনে বোলিং-এর অপেক্ষায় থাকবেন সমর্থকেরাও। গত এক দশক ধরে বাংলার পেসারের ‘হিট দ্য ডেক’ বোলিং দেশে-বিদেশে বহু সাফল্য এনে দিয়েছে ভারতকে। দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে বিশ্বকাপের ম্যাচে হ্যাট্রিক করার নজির গড়েছেন তিনি। গত দশকের লম্বা সময় জুড়ে টেস্ট ক্রিকেটে বিদেশের মাটিতে ভারতের দাপটের অন্যতম কারণ ছিলো জসপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah) এবং ঈশান্ত শর্মার (Ishant Sharma) সাথে শামির পেস বোলিং-এর কম্বিনেশন।
সময়ের সাথে সাথে বয়স বেড়েছে শামির (Mohammad Shami)। কিছুদিনের মধ্যেই ৩৩-এ পা দেবেন তিনি। তিন ফর্ম্যাটের ধকল সহ্য করা সবসময় সম্ভব হচ্ছে না তাঁর পক্ষে। গত বছর অসুস্থতা কাটিয়ে খেলেছিলেন টি-২০ বিশ্বকাপ। কিন্তু তার পরেই কাঁধের চোটে ছিটকে যান দল থেকে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ এবং টেস্ট খেলা হয় নি তাঁর। ২০২৩-এ প্রত্যাবর্তন ঘটালেও বছরের মাঝামাঝি এসে ফের ক্রিকেট থেকে দূরে সরে গিয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাঁকে বিশ্রামে রাখতে হয়েছে বিসিসিআই-কে। বারবার চোট-আঘাতের সমস্যায় ভুগতে থাকা শামি (Mohammad Shami) হয়ত এই বছরের বিশ্বকাপের (ICC World Cup) পর সাদা বলের ফর্ম্যাটকে বিদায় জানাতে পারেন। ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড’রা যেভাবে কেবল মাত্র টেস্টে ফোকাস করে কেরিয়ারকে দীর্ঘায়িত করেছেন, তেমনটা দেখা যেতে পারে শামির ক্ষেত্রেও।
মহম্মদ শামির কেরিয়ার পরিসংখ্যান-
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে প্রথম মাঠে নামেন মহম্মদ শামি (Mohammad Shami)। বাংলার পেসার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলেন প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কেরিয়ারের গোড়াতেই দুরন্ত গতি এবং স্যুইং-এর কারণে নজর কেড়েছিলেন শামি। ২০১৩ সালেই প্রথম টেস্ট খেলেন ইডেন গার্ডেন্সে। টি-২০ অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০১৪ অবধি। এরপর লম্বা সময় তিন ফর্ম্যাটেই ভারতের হয়ে দাপটের সাথে খেলে চলেছেন তিনি। এখনও অবধি ৬৪টি টেস্ট ম্যাচে ২২৯ উইকেট নিয়েছেন শামি (Mohammad Shami)। বোলিং গড় ২৭.৭১। ৬ বার টেস্টে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার নজির রয়েছে তাঁর।
একদিনের ক্রিকেটে মহম্মদ শামি (Mohammad Shami) খেলেছেন ৯০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে ১৬২ উইকেট। বোলিং গড় ২৫.৯৯। ইকোনমি রেট ৫.৬১। মাত্র ৫৬ ম্যাচে ১০০টি ওডিআই উইকেটের মাইলস্টোন স্পর্শ করেছিলেন তিনি। ভারতীয়দের মধ্যে যা দ্রুততম। টি-২০ কেরিয়ারে ২৩ ম্যাচে শামি (Mohammad Shami) নিয়েছেন ২৪ উইকেট। আইপিএলেও বেশ সফল তিনি। ১১০ ম্যাচে নিয়েছেন ১২৭ উইকেট। ২০২৩ সালে ২৮ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর বেগুনি টুপিও জিতেছেন তিনি।