ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ প্রতিযোগিতার জগতে পথিকৃৎ বলা চলে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা BCCI-কে। ২০০৮ সালে আইপিএল বা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ চালু করেছিলো ভারতীয় বোর্ড। তার দেড় দশক পর মেয়েদের ক্রিকেটেও ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ চালু করার ভাবনা নিয়েছে বোর্ড। ২০২৩-এ বসবে প্রথম WPL বা উইমেন্স প্রিমিয়া লীগের আসর। ছেলেদের আইপিএল যেমন ক্রিকেট আর বিনোদনের মাঝের দূরত্ব অনেকটা কমিয়ে খেলাকে গ্ল্যামারের রাঙতায় মুড়ে পৌঁছে দিয়েছে জনগণের ঘরে ঘরে, মেয়দের WPL থেকেও সেই আশাই করছে ভারতীয় বোর্ড। যত দিন এগিয়েছে তত জনপ্রিয়তা বেড়েছে আইপিএলের। সাথে সাথে বেড়েছে জাঁকজমক,অর্থের ঝনঝনানি’ও। বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন দেশ বিদেশের বিনিয়োগকারীরা। সারা বিশ্বে ব্র্যান্ড আইপিএলের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মত প্রতিথযশা ফুটবল ক্লাবের মালিক গ্লেজার পরিবার অব্দি আইপিএলে দল কেনার চেষ্টায় ব্যপৃত হয়েছেন। মেয়েদের ক্রিকেটেও অর্থ ও বৈভবের লকগেট খুলে দেবে উইমেন্স প্রিমিয়ার লীগ, আজ যেমন ব্যাট হাতে তুলে নিয়ে কোনো কিশোর স্বপ্ন দেখে আইপিএল খেলার, তেমন ভবিষ্যতে কিশোরীরাও ডব্লু পি এল খেলার স্বপ্ন নিয়ে ব্যাট হাতে তুলে নেবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। বিনিয়োগের যে কোনো অভাব হবে না তার ইঙ্গিত পাওয়া গেলো প্রথম মরসুমেই। দল কিনতেই ৪৬৬৯.৯৯ লাখ খরচ করেছে পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজি। নিলাম পর্বেও পছন্দের ক্রিকেটারদের দলে নিতে অর্থের বৃষ্টি করা থেকে পিছপা হলেন না তারা। এমনকি পুরুষদের খেলার মহাতারকাদের থেকেও অনেক ক্ষেত্রে বেশী দাম উঠলো WPL-এর নিলামে।
WPL নিলামের টেবিলে হিট বেঙ্গালুরু-

পুরুষদের আইপিএলে পনেরো বছরের চেষ্টা ফলপ্রসূ হয় নি এখনও। ২০০৮ থেকে ২০২২ অব্দি ট্রফিহীন থেকে গিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দল। বিরাট কোহলি (Virat Kohli), ক্রিস গেইল (Chris Gayle), এবি ডিভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের (Glenn Maxwell) মত তারকাদের নিয়ে দল গড়েও আসে নি সাফল্য। মেয়েদের টুর্নামেন্টের শুরুটা ট্রফি জিতেই করতে চায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স (RCB) দল। নিলামের টেবিলে তাই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক দেখালো মাইক হেসনদের। প্রথমেই স্মৃতি মন্ধানাকে নেওয়ার জন্য জাঁপায় তারা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সাথে দীর্ঘ নিলামযুদ্ধের পর ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাঁকে দলে নেয় বেঙ্গালুরু। মেয়েদের ক্রিকেটের আরও বেশ কয়েকজন মহাতারকাকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের লাল-কালো জার্সিতে দেখা যাবে এইবার। কিংবদন্তী এলিস পেরি’কে (Ellyse Perry) ১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় নিয়েছে তারা। বাংলার উইকেটরক্ষক ব্যাটার রিচা ঘোষের পিছনে খরচ করেছে ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক সোফি ডিভাইনকেও (Sophie Devine) দলে নিয়েছে তারা। ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা দাম পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশলি গার্ডনার (Ashleigh Gardner) এবং ইংল্যান্ডের নাতালি স্কিভার (Natalie Sciver)। যথাক্রমে গুজরাত জায়ান্টস (GGT) এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে (MI) যোগ দিলেন তাঁরা। ভারতীয় অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরকে (Harmanpreet Kaur) ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিনিময়ে দলে নিয়েছে মুম্বই দল। ১২ কোটি টাকার পার্স ছিলো প্রতিটি দলের কাছে। তারকাদের মেলা থেকে পছন্দের নক্ষত্রদের বেছে নিতে চেষ্টার কসুর করে নি পাঁচ ফ্যাঞ্চাইজিই।
অর্থের হিসেবে বাবর আজমকে দশ গোল স্মৃতি’র-

মেয়েদের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এই নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট কতদূর বাড়াবে তার উত্তর দেবে কেবল সময়। কিন্তু অর্থনৈতিক দিক থেকে মহিলাদের ক্রিকেট যে নতুন স্তরে উন্নীত হবে তা বোঝা যাচ্ছে প্রথম মরসুমেই। যেভাবে ক্রিকেটারদের দলে নিতে নিলামের টেবিলে লড়াই চললো, যেভাবে হিসেব কষে আসরে নামলো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার, পেশাদারিত্বের কোনো অভাব অন্তত এই লীগে হবে না। অর্থ ঢালতে পিছপা হয় নি দলগুলো। নিলামে প্রথম নাম এসেছিলো স্মৃতি মন্ধানার। আর নিলাম শেষ অব্দি সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার রয়ে গেলেন তিনিই। ৩ কোটি ৪০ লাখে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সে নাম লিখিয়ে ইতিহাস গড়লেন তিনি। টাকার অঙ্কে প্রথম মরসুমেই মেয়েদের আইপিএল ছাপিয়ে গেলো পড়শি দেশের পিএসএল’কে। পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে পেশোয়ার জালমি দলের অধিনায়কত্ব করেন বাবর আজম। বিশ্ব ক্রিকেটের মহাতারকা তিনি। আইসিসি’র থেকে ২০২২-এ বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে পেয়েছেন স্যার গ্যারি সোবার্স ট্রফি, পেয়েছেন বর্ষসেরা একদিনের ক্রিকেটার অ্যাওয়ার্ড। তবুও স্মৃতি মন্ধানার (Smriti Mandhana) WPL বেতনের ধারেকাছেও নেই বাবরের পিএসএলের বেতন। স্মৃতি’র ৩ কোটি ৪০ লাখের বিপরীতে ভারতীয় টাকায় বাবরের বেতনের অঙ্কটা মাত্র ১কোটি ৩৮ লাখ। আবির্ভাবেই পড়শি দেশের পুরুষদের লীগকে যদি অর্থনৈতিক দিক থেকে কয়েক যোজন পিছনে ফেলতে পারে এই নয়া প্রতিযোগিতা তাহলে ভবিষ্যতে কোন উচ্চতায় পৌঁছানো যাবে, তা ভেবেই উল্লসিত ক্রিকেট অনুরাগীরা।