এই মুহূর্তে ফর্মের শিখরে রয়েছেন কে এল রাহুল (KL Rahul)। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও আইপিএলে অনবদ্য ব্যাটিং-এর পর জ্বলে উঠেছিলেন ইংল্যান্ড সফরেও। ওপেনার হিসেবে নেমে একের পর এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি। রোহিত শর্মা’র অভাব এক মুহূর্তের জন্যও অনুভব করতে দেন নি টিম ইন্ডিয়া সমর্থকদের। পাঁচ টেস্টে ৫৩.২০ গড়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৫৩২ রান। লিডস ও লর্ডসে জোড়া শতরান করেন তিনি। এছাড়া বার্মিংহ্যাম ও ম্যাঞ্চেস্টারেও করেন অর্ধশতক। তাঁর ধৈর্য্য, শটচয়ন ও কঠিন পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। এই প্রথম নয়, দেশের জার্সিতে গত এক দশক ধরে বারবার নজরকাড়া পারফর্ম্যান্স করেছেন তিনি। এমনকি তিনি যে ‘স্পেশ্যাল’ তার প্রমাণ রাহুল (KL Rahul) দিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটেও। রাজ্য দল কর্ণাটকের হয়ে খেলেছেন বহু স্মরণীয় ইনিংস।
Read More: বাদ কুলদীপ যাদব, এই বছর এশিয়া কাপেই এই স্পিনারের ওপরেই ভরসা করতে চলেছেন গম্ভীর !!
রাহুলের ব্যাটে দুর্দান্ত ত্রিশতক-

২০১৫ সালে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে কর্ণাটক মুখোমুখি হয়েছিলো উত্তরপ্রদেশের। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টসে জেতেন কর্ণাটক অধিনায়ক বিনয় কুমার। প্রথম ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ঘরের মাঠে রবিকুমার সমর্থকে সাথে নিয়ে ওপেন করতে নেমেছিলেন বছর ২২-এর কে এল রাহুল (KL Rahul)। বেশীদূর এগোয় নি ওপেনিং জুটি। সমর্থ যখন ১৮ করে আউট হন, তখন ব্যাটিং টিমের স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৯ রান। এরপর রবিন উথাপ্পা, মনীশ পাণ্ডে, করুণ নায়ারদের মত তারকা ব্যাটাররাও একে একে ফেরেন সাজঘরে। কিন্তু টলানো যায় নি রাহুলকে। শ্রেয়স গোপাল (৯০), চিদাম্বরম গৌতম (৫৭), আবরার কাজি (১১৭)-দের সাথে নিয়ে কর্ণাটকের স্কোরবোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। প্রবীন কুমার, অমিত মিশ্র, কুলদীপ যাদব’দের নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজিয়েছিলো উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই ম্যাচে রোখা যায় নি রাহুলকে (KL Rahul)।
দেখতে দেখতে শতক, দ্বিশতকের পর রাহুল পেরিয়ে যান ট্রিপল সেঞ্চুরির গণ্ডীও। শেষমেশ আমি মুর্তাজার বলে যখন তাঁর ক্যাচ তালুবন্দী করেন মায়াঙ্ক ডাগর, ততক্ষণে তাঁর নামের পাশে ৩৩৭ রান। ম্যারাথন ইনিংসে ৪৭টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন রাহুল। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিলো ৪টি ছক্কাও। ৯ উইকেটের বিনিময়ে ৭১৯ রান তুলে ডিক্লেয়ার করে কর্ণাটক। জবাবে ব্যাট করতে মাত্র ২২০ রানে গুটিয়ে যায় উত্তরপ্রদেশে। দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনিং নয় বরং সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন রাহুল (KL Rahul)। ৩৩ বলে ৪৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে ফের একবার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন চিন্নাস্বামীর বাইশ গজে। ২১৫ রানে থামে কর্ণাটক। ৭১৫ তাড়া করতে নামা উত্তরপ্রদেশের স্কোর যখন ৪২/২, তখন সময়ের অভাবে অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয় ম্যাচ। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার সুবাদে ৩ পয়েন্ট পায় কর্ণাটক।
দেখুন সেই ম্যাচের স্কোরকার্ড-

কে এল রাহুলের কেরিয়ার পরিসংখ্যান-

২০১৪’র ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো কে এল রাহুলের (KL Rahul)। কেরিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই শতরান করেন তিনি। সাদা বলের দুই ফর্ম্যাটে দেশের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগ আসে ২০১৬-তে। তিন ফর্ম্যাটেই দীর্ঘ সময় দাপটের সাথে খেলে চলেছেন কর্ণাটকের তারকা। এখনও অবধি ৬৩টি টেস্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন রাহুল। ৩৫.৪১ গড়ে করেছেন ৩৭৮৯ রান। শতরানের সংখ্যা ১০, অর্ধশতক ১৯টি। তাঁর উল্লেখযোগ্য টেস্ট ইনিংসগুলির মধ্যে অধিকাংশই এসেছে বিদেশের মাটিতে। ৮৫টি ওয়ান ডে খেলেছেন তিনি। ৪৯.০৮ গড়ে রয়েছে ৩০৪৩ রান। শতকের সংখ্যা ৭, অর্ধশতক ১৮টি। দেশের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন রাহুল (KL Rahul)। টি-২০তে ৭২ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ২২৬৫ রান। ২টি শতক ও ২২টি অর্ধশতক করেছেন তিনি। ব্যাটিং গড় ৩৭.৭৫।