ক্রিকেটদুনিয়ার অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে দেখা গিয়েছে হার্দিক পান্ডিয়াকে (Hardik Pandya)। গত অক্টোবরে ওডিআই বিশ্বকাপ (ICC World Cup) চলাকালীন গোড়ালিতে বড়সড় চোট পান তিনি। লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে গিয়েছিলেন মাঠ থেকে। দীর্ঘ রিহ্যাব সেরে মাঠে ফেরেন আইপিএলে। কিন্তু পরিকল্পনা মেনে এগোয় নি তাঁর প্রত্যাবর্তন। গুজরাত ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে (MI)। পেয়েছিলেন নেতার দায়িত্ব। কিন্তু মুম্বই ইন্ডিয়ান্স সমর্থকদের একাংশই মেনে নিতে পারেন নি তাঁকে। গ্যালারির কটাক্ষ, কটূক্তির শিকার হতে হন তারকা অলরাউন্ডার। এর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চলতে থাকে নিরন্তর কাটাছেঁড়া। শোনা যায় ডিভোর্সের পথে হাঁটছেন তাঁর সার্বিয়ান স্ত্রী নাতাশা স্ট্যাঙ্কোভিচ (Natasa Stankovic)। মাঠে ও মাঠের বাইরে ক্রমে কোনঠাসা হয়ে পড়া হার্দিকের ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ হয়ে ওঠে টি-২০ বিশ্বকাপ।
আইপিএলের অফ ফর্ম ঝেড়ে ফেলে জাতীয় দলের হয়ে সেরাটা দেওয়ার জন্য তিনি যে তৈরি তা হার্দিক (Hardik Pandya) বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচেই। এরপর মূলপর্বের খেলাতেও জ্বলে ওঠেন তিনি। বল হাতে নিয়মিত উইকেট তুলেছেন। আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তানের মত প্রতিপক্ষ নাজেহাল হয়েছে তাঁকে সামলাতে। আবার ব্যাট হাতেও প্রয়োজনে ঝড় তুলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এমনকি রুদ্ধশ্বাস ফাইনালেও দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা ব্যাটিং অস্ত্র হেনরিখ ক্লাসেনকে (Heinrich Klaasen) থামিয়ে ম্যাচ ভারতের পক্ষে নিয়ে আসেন তিনিই। শেষ ওভারেও ডেভিড মিলারের উইকেট নেন। ছয় মাস ধরে গুটিয়ে থাকা হার্দিক (Hardik Pandya) যেন মুক্তির আনন্দ খুঁজে নেন কেনসিংটন ওভালে। ট্রফি জয়ের পর সজল চোখে যখন সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, তখন তাঁর প্রতিটি শব্দে অনুভব করা গিয়েছিলো সেই তৃপ্তি।
Read More: টিম ইন্ডিয়াকে চ্যাম্পিয়ন করে KKR’এ যোগ দিচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড়, এইদিন থেকে সামলাবেন গুরু দ্বায়িত্ব !!
হার্দিককে নিয়ে আশাবাদী ছিলেন কপিল-
ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরার পর প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যান ক্রিকেটাররা। তারপর মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভে হুড খোলা বাসে চলে সেলিব্রেশন। পরে ওয়াংখেড়েতে বিপুল দর্শক সমাগমের মাঝে জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হন সকলে। গোটা স্টেডিয়াম সেদিন মুখরিত হয়েছিলো হার্দিক…হার্দিক ধ্বনিতে। মাসখানেক আগে আইপিএল (IPL) চলাকালীন এই ওয়াংখেড়েই তাঁকে ভরিয়েছিলো কটাক্ষে। অকথ্য গালিগালাজ উড়ে এসেছিলো তাঁর দিকে। কিন্তু সময় যে সবকিছু বদলে দিতে সক্ষম, তা বোঝা গেলো গত বৃহস্পতিবার। ওয়াংখেড়ে দর্শকেরা বীরের মর্যাদা দিয়ে বরণ করে নিলেন হার্দিক’কে (Hardik Pandya)। নীচের দিকে নামতে থাকা কেরিয়ার গ্রাফ যেভাবে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উপরের দিকে তুলে নিয়ে গেলেন তিনি, তা ক্রিকেটবোদ্ধাদের মনে করিয়ে দিয়েছে কিংবদন্তি কপিল দেবের এক সাক্ষাৎকারের কথা।
২০১৭ সালে তখন ক্রিকেটের আঙিনায় বেশী সময় কাটান নি হার্দিক (Hardik Pandya)। কিন্তু তাঁর মধ্যে যে অনন্য প্রতিভা রয়েছে তা বুঝতে পেরেছিলেন কিংবদন্তি অলরাউন্ডার কপিল দেব (Kapil Dev)। ভারতে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে কেউ লাইমলাইটে এলেই অবধারিত ভাবে তুলনা চলে আসে ১৯৮৩’র বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের সাথে। কিন্তু কপিল এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে নিজের থেকে হার্দিককে এগিয়ে রাখতে চান তিনি। বলেন, “আমার থেকেও ভালো হার্দিক।” তবে তাঁকে সাবধান’ও করেছিলেন কিংবদন্তি। বলেন, “…ওকে এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে। এখন তো সবে শুরু। ওর উপর অতিরিক্ত চাপ যেন না দেওয়া হয়। ওর প্রতিভা রয়েছে দুর্দান্ত ক্রিকেটার হয়ে ওঠার।” হরিয়ানা হারিকেনের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রায় ৭ বছর পর টি-২০ বিশ্বকাপে ১৪৪ রান ও ১১ উইকেটের মালিক হয়ে যেন তাঁকেই সঠিক প্রমাণ করলেন হার্দিক।