স্কুল ক্রিকেটের সময় থেকেই বিশেষজ্ঞদের কাছে পরিচিত ছিলেন মুম্বইয়ের বিনোদ কাম্বলি (Vinod Kambli)। সারদাশ্রম স্কুলের হয়ে শচীন তেন্ডুলকরের সাথে তাঁর পার্টনারশিপ জায়গা করে নিয়েছিলো দেশের ক্রিকেট ‘মিথ’-এর পাতায়। নব্বইয়ের দশকে বাম হাতি ব্যাটার হিসেবে চমকপ্রদ উত্থান হয়েছিলো তাঁর। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শুরুটা করেছিলেন ১৯৯১ সালে। টেস্টে আবির্ভাবেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ১৪টি ইনিংসে ছুঁয়ে ফেলেছিলেন ১০০০ রানের মাইলস্টোন। ভারতীয়দের মধ্যে যা আজও দ্রুততম। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম ব্যাটার হিসেবে এই নজির গড়েছিলেন তিনি। শচীনের (Sachin Tendulkar) পাশাপাশি তাঁর ছেলেবেলার বন্ধু কাম্বলিও (Vinod Kambli) ক্রিকেটদুনিয়াকে মাতিয়ে রাখবেন, ভেবেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
আকাঙ্ক্ষা আর বাস্তবের মধ্যে যে সচরাচর বিশেষ মিল থাকে না তার জ্বলন্ত উদাহরণ বিনোদ কাম্বলির (Vinod Kambli) ক্রিকেট কেরিয়ার। প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও শৃঙ্খলাবিহীন জীবনযাপনের দরুণ একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে অচিরেই আন্তর্জাতিক আঙিনা থেকে হারিয়ে যান তিনি। ১৯৯৫ সালেই শেষ হয়ে যায় তাঁর টেস্ট কেরিয়ার। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ২০০০ অবধি টিকে থাকলেও নিজের সক্ষমতার শীর্ষে আর ওঠা হয় নি তাঁর। ১৭ টেস্টে দেশের হয়ে করেছেন ১০৮৪ রান। ১০৪টি একদিনের ম্যাচে সংগ্রহ ২৪৭৭। সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০৪ মরসুমের পর। তার পর দুই দশক কেটে গেলেও বিতর্ক পিছু ছাড়ে নি তাঁর। নানা সময় এসেছেন খবরের শিরোনামে। বর্তমানে ৫২ বছর বয়স তাঁর। এর মধ্যেই ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য’ও।
Read More: IND vs SL: নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে দুর্দান্ত চাল দিচ্ছেন গম্ভীর, বিরাটের বদলে জায়গা দেবেন নিজের শিষ্যকে !!
কাম্বলির ক্লিপ ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়-
সম্প্রতি ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক, এক্স (পূর্বতন ট্যুইটার)-এর মত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ঘোরাফেরা করছে একটি ভিডিও ক্লিপ। সেখানে দেখা গিয়েছে সবুজ টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজার্স পরিহিত কাম্বলি’কে (Vinod Kambli)। মাথার অবশিষ্ট চুল, দাড়ি সব সাদা। একটি রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট মোটরবাইক’কে অবলম্বণ করে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা যায় তাঁকে। ক্রিকেট প্রাক্তনীর দূরবস্থা দেখে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান স্থানীয় বেশ কয়েকজন। কিন্তু স্থির হয়ে যেন দাঁড়াতেও পারছিলেন না কাম্বলি (Vinod Kambli)। দেখে মনে হচ্ছিলো টলে পড়ে যেতে পারেন যে কোনো মুহূর্তে। এক পায়ে ছিলো না জুতো’ও। চার জন যুবক প্রায় ধরাধরি করে একটি দোকানের ভিতরে এনে বসান তাঁকে। ক্রিকেট প্রাক্তনীর মুখেও তখন অসহায়তার ছাপ।
এক সময়ের ‘ফ্ল্যামবয়েন্ট’ ব্যাটারের এহেন দূরবস্থা চমকে দিয়েছে নেটিজেনদের। অনেকেই কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন। অনুরাগীদের কেউ কেউ বলেছেন যে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে কাম্বলির (Vinod Kambli)। সেই কারণেই শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারছিলেন না তিনি। আবার অনেকে দুষেছেন তাঁর অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান’কে। পানীয়ের প্রভাবেই ভারসাম্য হারিয়েছিলেন তিনি। উঠছে অভিযোগ। সঠিক কারণ যাই হোক না কেন, ক্রিকেট তারকার এহেন পরিণতি যে কখনোই কাম্য নয় সেই বিষয়ে একমত সকলেই। নানাবিধ মন্তব্যে ভরেছে সমাজমাধ্যম। কেউ লিখেছেন, ‘দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো’ আবার কেউ লিখেছেন, ‘এই কারণেই ক্রীড়াবিদের জীবনে শৃঙ্খলা সবার উপরে থাকা উচিৎ।’ অনেকে বিসিসিআই-কে অনুরোধ করেছেন তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।
দেখে নিন সেই ভাইরাল ভিডিও’টি-
Vinod Kambli urgently needs assistance. I sincerely hope someone from Indian cricket steps forward to help him. It’s heartbreaking to see him in this condition.pic.twitter.com/hWkew6Lxsm
— Out Of Context Cricket (@GemsOfCricket) August 6, 2024
*ভিডিও’র সত্যতা যাচাই করে নি স্পোর্টসউইকি বাংলা।
নানান বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কাম্বলি-
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গার্হ্যস্থ হিংসার অভিযোগ উঠেছিলো বিনোদ কাম্বলির (Vinod Kambli) বিরুদ্ধে। অভিযোগ এনেছিলেন স্বয়ং তাঁর স্ত্রী আন্দ্রেয়া হিউইট (Andrea Hewitt)। বান্দ্রা থানায় গিয়ে তিনি জানান যে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার মদ্যপ অবস্থায় তাঁকে ও তাঁদের ১২ বছরের পুত্রকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন। রান্নার প্যানের হাতল দিয়ে মাথায় আঘাত করার পর ব্যাট হাতেও তাঁকে মারতে উদ্যত হয়েছিলেন কাম্বলি (Vinod Kambli), অভিযোগে জানান আন্দ্রেয়া। বাধা দিতে গিয়ে চোট পান পুত্র। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৪ (স্বতপ্রণোদিত হয়ে অস্ত্র দ্বারা আঘাত করার চেষ্টা) ও ৫০৪ (অপমান) ধারায় কাম্বলির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলো পুলিশ। ২০২২ সালেও গাড়ি নিয়ে হাউজিং সোশ্যাইটির গেটে ধাক্কা মারার অভিযোগ উঠেছিলো তাঁর বিরুদ্ধে।