গত ৭ তারিখ রোহিত শর্মা টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর পরেই জল্পনা শুরু হয়েছিলো লাল বলের ফর্ম্যাটে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ভবিষ্যৎ নিয়ে। ছড়িয়েছিলো অবসরের গুঞ্জন। শেষমেশ ১২ তারিখ সত্যি হয় সেই আশঙ্কাই। ইন্সটাগ্রামে এক আবেগঘন পোস্টে সাদা জার্সি তুলে রাখার ঘোষণা করেন কিংবদন্তি তারকা। লেখেন, “…এই ফর্ম্যাট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটা সহজ না হলেও সঠিক বলেই মনে হচ্ছে। আমার সর্বস্ব আমি দিয়েছি। পরিবর্তে ফিরে পেয়েছি তার চেয়েও অনেক বেশী কিছু। খেলার প্রতি, এই দীর্ঘ যাত্রাপথের সব সতীর্থের প্রতি ও যাঁরা আমায় পরিচিতি দিয়েছেন সেই সকল মানুষের প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা বুকে নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছি আমি। নিজের টেস্ট কেরিয়ারের দিকে আমি সর্বদা হাসিমুখে ফিরে তাকাবো।” মাত্র ৩৬ বছর বয়সে কেন টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি? আপাতত তা নিয়েই আলোচনা চলছে বিশেষজ্ঞমহলে।
Read More: “অনেক বড়ো ভুল সিদ্ধান্ত..”, রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির অবসর নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন যোগরাজ সিং !!
সরতে বাধ্য হয়েছেন কোহলি, মত কাইফের-

ফিটনেস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বিরাটের (Virat Kohli)। শচীন-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণ’রা যেখানে ৩৯ বা ৩৭ বছর বয়স অবধি চুটিয়ে টেস্ট খেলেছেন সেখানে ৩৬-এর বিরাটের জন্য বয়সও অন্তরায় হওয়ার কথা নয়। তারপরেও কেন সরে দাঁড়ালেন তিনি? ক্রিকেটমহলের আলোচনায় উঠে আসছে অফ ফর্মের বিষয়টি। ২০১৯-এর পর থেকে ক্রমেই নীচের দিকে গিয়েছে তাঁর ফর্মের গ্রাফ। শেষ পাঁচ বছরে মাত্র ৩টি টেস্ট শতরান করেছেন ভারতীয় মহাতারকা। কেরিয়ারের সেরা সময়ে যেখানে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিলো ৫৫.১০, সেখানে বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬.৮৫। শেষ ২৪ মাসে ৩২.৫৬ গড় ছিলো তাঁর। বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চূড়ান্ত হতাশ করেছেন কোহলি (Virat Kohli)। অফ স্টাম্পের বিরুদ্ধে তাঁর পুরনো দুর্বলতাও ফিরে এসেছিলো ব্যাটিং-এ। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে আটবার উইকেটরক্ষক বা স্লিপ ফিল্ডারদের হাতে খোঁচা দিয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি এনডিটিভি’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে কোহলির (Virat Kohli) টেস্ট অবসর নিয়ে মুখ খুলেছেন টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তনী মহম্মদ কাইফ (Mohammad Kaif)। তাঁর সরে দাঁড়ানোর পিছনে অফ ফর্ম’ই প্রধান কারণ, মনে করছেন ্তিনি। কাইফ বলেছেন, “আমার মনে হয় ও (কোহলি) এই ফর্ম্যাটে আরও খেলতে চেয়েছিলো। বিসিসিআই-এর সাথে নিশ্চয়ই আলোচনা হয়েছে। নির্বাচকেরা সম্ভবত ওর শেষ পাঁচ-ছয় বছরের অফ ফর্মের প্রসঙ্গ টেনে ওকে জানিয়েছিলো যে দলে ওর জায়গা আর নিশ্চিত নয়। কি হয়েছে সেটা আমরা কখনোই জানতে পারবো না। নেপথ্য কাহিনীটা জানা সত্যিই খুব কঠিন।” বিরাটের মানসিকতা ও ধৈর্য্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কাইফ। বলেন, “হয়ত ওর মনে হয়েছিলো যে এটা আমার কেরিয়ারের অন্তিম অধ্যায়, আরেকটা শতরান করে কিই বা হবে? ওর মধ্যে আগে একটা আলাদা স্তরের ধৈর্য্য দেখা যেত, সেটা অস্ট্রেলিয়াই দেখি নি।”
টেস্ট ক্রিকেটে কোহলির পরিসংখ্যান-

২০০৮ সালে অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জেতার পরেই ওয়ান ডে’তে সিনিয়র দলের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগ পেয়েছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। তবে টেস্ট অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিলো ২০১১ অবধি। শেষমেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংসটনে প্রথমবার ব্যাগি ব্লু টুপি মাথায় চাপান তিনি। ১৪ বছর ব্যপী কেরিয়ারে দেশের হয়ে ১২৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। করেছেন ৯২৩০ রান। মোট রানের নিরিখে ভারতীয়দের মধ্যে চতুর্থ স্থানে বিরাট (Virat Kohli)। সামনে কেবল শচীন, দ্রাবিড় ও সুনীল গাওস্কর। তিনি লাল বলের ফর্ম্যাটে করেছেন ৩০টি শতরান ও ৩১টি অর্ধশতক। ৭টি দ্বিশতরানও রয়েছে তাঁর। ২০১৪ সালে টেস্ট নেতৃত্ব হাতে পেয়েছিলেন কোহলি। দায়িত্বে ছিলেন ২০২২-এর গোড়া অবধি। এর মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে ৬৮টি ম্যাচের মধ্যে ৪০টিতে জিতেছে ভারত। পরিসংখ্যানের দিক থেকে ভারতের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক তিনিই।