গুজরাত রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা (GCA) থেকে উত্থান জয় শাহ’র (Jay Shah)। দেড় দশকের মধ্যে তিনি পা রাখতে চলেছেন আইসিসি’তে। বিসিসিআই সচিব হয়েছেন, সামলেছেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (ACC) প্রধানের দায়িত্ব। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে তাঁকে দেখা যাবে বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা মসনদে। নিউজিল্যান্ডের গ্রেগ বার্কলে (Greg Barclay) যে তৃতীয় দফায় আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে থাকতে রাজী নন, তা গত মাসেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো এক বিজ্ঞপ্তিতে। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে উঠে আসে জয় শাহের (Jay Shah) নাম।
২৭ তারিখ মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিলো। ভারতীয় প্রশাসকের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন নি কেউই। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটসংস্থাকে তিনি যে পাশে পাবেন তা জানাই ছিলো। শেষমেশ ভোটদানে সক্ষম ১৬টি দেশের মধ্যে ১৫টি সরাসরি সমর্থন জানিয়েছে তাঁকে। মতদানে বিরত থেকেছে কেবল পাকিস্তান। তাতে অবশ্য শাহের (Jay Shah) সিংহাসন আরোহণ আটকানো যায় নি। নয়া পদে বসার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন জয় শাহ। তার মধ্যে থাকছে অ্যাফ্রো-এশিয়া কাপ (Afro-Asia Cup) ফেরানোর বিষয়টিও।
Read More: সৌন্দর্য্যে বলিউড নায়িকাদের পিছনে ফেলবেন বিরাট কোহলির শ্যালিকা, ছবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায় !!
নক্ষত্রদের মিলনমেলা অ্যাফ্রো-এশিয়া কাপ-
এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ক্রিকেটীয় নক্ষত্রদের নিয়ে প্রথম অ্যাফ্রো-এশিয়া কাপ (Afro-Asia Cup) আয়োজনের কথা ভাবা হয়েছিলো ২০০৫ সালে। ওডিআই ফর্ম্যাটে আয়োজিত হয় এই মেগা টুর্নামেন্ট। ভেন্যু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এশিয়া একাদশের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। অন্যদিকে আফ্রিকা একাদশের হয়ে খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের তারকারা। জনমানসে বেশ সাড়া ফেলেছিলো এই প্রতিযোগিতা। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। দ্বিতীয়টিতে জেতে এশিয়া একাদশ ও তৃতীয়টিতে জয় ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজ ড্র করে আফ্রিকা একাদশ (Africa XI)। টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ২০০৭-এ ফেরানো হ্য অ্যাফ্রো-এশিয়া কাপ। ভারতের বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়তে হয় ম্যাচগুলি।
২০০৭-এ উপমহাদেশের মাঠে দাপট দেখায় এশিয়া একাদশ (Asia XI)। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি এশিয়া একাদশের হয়ে সেবার মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও। ৩-০ সিরিজ জেতে এশিয়া দল। ২০০৫ ও ২০০৭-এ এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দুই দলের হয়ে মাঠে নামতে দেখা গিয়েছে শন পোলক, এবি ডিভিলিয়ার্স, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly), মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুবরাজ সিং (Yuvraj Singh), মহম্মদ আসিফ, ইনজামাম-উল-হক, মাহেলা জয়বর্ধনেদের মত কিংবদন্তিদের। কিন্তু এরপর ভারত-পাক (IND vs PAK) ক্রিকেটীয় সম্পর্কের অবনতি, সূচি নির্ধারণ সংক্রান্ত অসুবিধা, সম্প্রচারের জটিলতার মত নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় টুর্নামেন্ট। আইপিএল (IPL) ও অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলির বাড়বাড়ন্ত’ও অ্যাফ্রো-এশিয়া কাপ বন্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায়।
১৭ বছর পর ফিরবে টুর্নামেন্ট ?
প্রায় ১৭ বছর বন্ধ থাকার পর কি ফিরবে অ্যাফ্রো-এশিয়া কাপ (Afro-Asia Cup)? জয় শাহ (Jay Shah) আইসিসি’র মসনদে বসার পরে সেই সম্ভাবনাই দেখছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার কাছে তদ্বির করার উদ্যোগ নিতে পারে ক্রিকেট আফ্রিকা। তাদের প্রাক্তন কর্তা সুমোদ দামোদার (Sumod Damodar)। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “অ্যাফ্রো-এশিয়া কাপ এত বছর না হওয়ায় আমি খুবই দুঃখিত। তবে এবার এই টুর্নামেন্ট হতে পারে। আমার মনে হয় ভুল-বোঝাবুঝির জন্য এতদিন এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যায় নি। আফ্রিকার তরফ থেকে আয়োজনের জন্য আগ্রহ দেখানো উচিৎ।” জয় শাহের (Jay Shah) কাছে এই বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই বিষয়য়ি দেখবেন বলে মনে করছেন দামোদর।
ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ টুর্নামেন্টের সুবাদে এখন বিশ্বের তাবড় ক্রিকেট তারকাদের একই দলে খেলতে দেখে অভ্যস্ত অনুরাগীরা, কিন্তু তাও আন্তঃমহাদেশীয় পরতিযোগিতার আবেদন এখনও ফিকে হবে না বলেই মনে করছে ক্রিকেটজনতা। ভারত-পাক (IND vs PAK) দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ রয়েছে বহুদিন। ক্রিকেটীয় সম্পর্ক’ও প্রায় তলানিতে। গত বছর এশিয়া কাপ নিয়ে দড়ি টানাটানি চলেছিলো দুই দেশের মধ্যে। এখনও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারে নি দুই দেশ। এরই মধ্যে কোহলি (Virat Kohli), রোহিতদের (Rohit Sharma) সাথে যদি সাজঘর ভাগাভাগি করে নেন বাবর-শাহীন-রিজওয়ানরা (Muhammad Rizwan), তাহলে দুই প্রতিবেশীর মধ্যেকার বরফও অনেকটাই গলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।