গত বারো বছর আইপিএলে আমরা বিভিন্ন ব্যাটসম্যানদের জ্বলে উঠতে দেখেছি।তাদের খেলা একেকটা ইনিংস,আমাদের আনন্দ দিয়েছে।তারপর আমরা আলোচনায় মেতেছি, কিছু কিছু ইনিংস গেঁথে আছে আমাদের, আবার কিছু কিছু আজীবন মাথায় গেঁথে আছে।আজ এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো গত বারো বারের আইপিএলে রানের পাহাড় গড়া ব্যাটসম্যানদের বিষয়ে।যারা জিতে নিয়েছিলেন “অরেন্জ ক্যাপ ” ।
২০০৮ সাল – শন মার্শ – কিংস ইলেভেন পান্জাব (৬১৬ রান )
আইপিএলের প্রথম মরসুমে অস্ট্রেলিয়ার শন মার্শের কাছে স্মরণীয় একটি বছর হয়ে আছে।বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি এবং পাঁচটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ছিলেন সেই বার। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম অরেন্জ ক্যাপটিতে নিজের নাম লিখিয়েছিলেন শন। আইপিএলের সাফল্য তাকে সেই বছর জাতীয় দলের সীমিত ওভারের দলে সুযোগ করে দিয়েছিলো।
২০০৯ সাল – ম্যাথু হেডেন – চেন্নাই সুপার কিংস (৫৭২ রান)
সেইবছর আইপিএল দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যাওয়া ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে ভাল সংবাদ ছিল না ।কারণ শীর্ষ দশ রান সংগ্রাহকের তালিকায় কেবল তিন ব্যাটসম্যানই ছিলো সেইবার এবং শীর্ষ আটে একমাত্র ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন সুরেশ রায়না।পরিস্থিতি নিখুঁত ভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন অজি কিংবদন্তি ম্যাথু হেডেন। পাঁচটি ৫০ ‘এর বেশি অধিক রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি এই কিংবদন্তি ওপেনার সেইবার করেছিলেন ৫৭২ রান।দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হয়েছিলেন হিসেবে অরেন্জ ক্যাপের অধিকারী হয়েছিলেন।
২০১০ সাল – সচিন তেন্ডুলকর – মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স (৬১৮ রান )
প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে ‘অরেন্জ ক্যাপ ‘ এর মালিক হয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর।সেই বছর ছন্দে ছিলেন এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান।টেস্টে একবছরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি সেইবার।পরবর্তী সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে এক ইনিংসে ২০০ রান করার রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি।যদিও তেন্ডুলকরের এমন দুরন্ত ব্যাটিং সেইবার ট্রফি এনে দিতে পারেনি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স’কে।
২০১১ সাল – ক্রিস গেইল – রয়্যাল চ্যালেন্জার্স ব্যাঙ্গালুরু (৬০৮ রান)
ডার্ক ন্যানেসের পরিবর্ত ক্রিকেটার হিসেবে সেইবার আরসিবি দলে এসেছিলেন গেইল।এর আগের বছর গুলোতে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে ছিলেন তিনি।দল বদলে সেইবার জ্বলে উঠেছিলেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা।হয়ে উঠেছিলেন বিরাটের দলের সমর্থকদের নয়নের মনি।দুটো শতরান এবং তিনটি অর্ধশতরানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি সেইবার।১২ ইনিংসে করেছিলেন ৬০৮ রান।
২০১২ সাল – ক্রিস গেইল – রয়্যাল চ্যালেন্জার্স ব্যাঙ্গালুরু (৭৩৩)
২০১১ এর রেশ ফের আরেকবার ২০১২ তে দেখিয়েছিলেন গেইল।তার ব্যাট হাতে মাঠে নামা মানে “গেইল ঝড় ” দেখা খালি সময়ের অপেক্ষা।প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে সেইবার ৭০০ রানের গন্ডি পেরোন এই তারকা ব্যাটসম্যান।একটি শতরানের পাশাপাশি সাতটি অর্ধশতরানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি সেই বছর।প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে জিতে নেন ব্যাক টু ব্যাক অরেঞ্জ ক্যাপ জিতে নিয়েছিলেন তিনি।
২০১৩ সাল – মাইক হাসি – চেন্নাই সুপার কিংস (৭৩৩ রান)
এবারও সুযোগ ছিলো গেইলের কাছে অরেন্জ ক্যাপ জয়ের হ্যাটট্রিক পূরণ করার।কিন্তু তার সেই আশাপূরণ হতে দেননি চেন্নাইয়ের মাইক হাসি।বয়সের তোয়াক্কা না করে এই অজি ব্যাটসম্যান সেইবার নিজেকে নিয়ে গেছিলেন সম্পূর্ণ অন্য মার্গে।খেলেছিলেন ছয়টি অর্ধশতরানের ইনিংস।
২০১৪ সাল – রবীন উথাপ্পা – কলকাতা নাইট রাইডার্স ( ৬৬০ রান )
ধারাবাহিক ভাবে সেই বছর দারুণ পারফরম্যান্স দিয়েছিলেন রবীন উথাপ্পা।তার পুরস্কার স্বরূপ দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অরেঞ্জ ক্যাপ পেয়েছিলেন তিনি।আটটি চল্লিশের অধিক স্কোর এবং পাঁচটি পন্চাশ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটি সেইবারের আইপিএলের অন্যতম সেরা ওপেনিং জুটির একটি ছিলো।
২০১৫ সাল – ডেভিড ওয়ার্নার – সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ( ৫৬২ রান )
শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে হায়দ্রাবাদের হয়ে ওয়ার্নারের ওপেনিং জুটি সেইবার দারুণ সাফলতা লাভ করেছিলো।সাতটি অর্ধ শতরানের সহযোগে সেইবার মোট ৫৬২ রান করেছিলেন তিনি।যদিও তার দুরন্ত পারফরম্যান্স সেইবার হায়দ্রাবাদ’কে জায়গা করে দিতে পারে নি প্লে অফে।
২০১৬ সাল – বিরাট কোহলি – রয়্যাল চ্যালেন্জার্স ব্যাঙ্গালুরু (৯৭৩ রান )
সেই মরসুমে কোহলির রানের খিদে এক অন্য পর্যায়ে পৌঁছে ছিলো,এখনও অবধি ফাইনালে উঠলেও একবার’ও আইপিএল জিততে পারিনি আরসিবি ।দলের অধিনায়ক হিসেবে বিষয়টি যথেষ্ট কষ্ট দিয়েছে কোহলি’কে।২০১৬ সালে তার চেষ্টা এক অন্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছিলো।চারটি শতরান এবং সাতটি অর্ধশতরানের ইনিংস খেলে তিনি করেছিলেন ৯৭৩ রান ।অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দিয়েও সেইবার আইপিএল জয় করা হয়ে ওঠেনি আরসিবি’র।
২০১৭ সাল – ডেভিড ওয়ার্নার – সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ( ৬৪৬ রান )
২০১৬ সালে কোহলির গড়া ৯৭৩ রানের রেকর্ড প্রায় ভাঙার দিকে এগিয়ে গেছিলেন ওয়ার্নার।থামেন ৬৪৬ রানে।তার দুরন্ত ব্যাটিং সেইবার হায়দ্রাবাদ’কে একাধিক ম্যাচে এনে দিয়েছিলো জয়।
২০১৮ সাল – কেন উইলিয়ামসন – সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ( ৭৩৫ রান )
বল বিকৃত করার অভিযোগে সেইবার হায়দ্রাবাদ দলে ছিলেন না ডেভিড ওয়ার্নার।কিন্তু দলের চিন্তা দুর করে দিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন।দলকে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।আটটি অর্ধশতরানের ইনিংস খেলার মধ্যে দিয়ে তিনি করেছিলেন ৭৩৫ রান।দলকে ফাইনালে যাওয়ার পথ দেখান ,যদিও ফাইনালে চেন্নাইয়ের কাছে হার মানে হায়দ্রাবাদ।
২০১৯ সাল – ডেভিড ওয়ার্নার – সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ( ৬৯২ রান )
নিঃসন্দেহে আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান বলা চলে ডেভিড ওয়ার্নার’কে।এই নিয়ে মোট তিন বার অরেঞ্জ ক্যাপ জিতেছিলেন তিনি।গত বছর ১২ ম্যাচে তিনি করেছিলেন মোট ৬৯২ রান।একটি শতরান এবং আটটি অর্ধ শতরানের ইনিংস সহযোগে।