IPL ট্রফির গায়ে খোদাই করে লেখা রয়েছে একটি শ্লোক- ‘যাত্রা প্রতিভা অবসরা প্রাপ্নোতি’। বাংলা করলে দাঁড়ায়, “যেখানে প্রতিভা সুযোগ খুঁজে পায়।” ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ সম্পর্কে একদম সঠিক মূল্যায়ন সম্ভবত করা যায় এই শ্লোকটির মাধ্যমেই। সত্যিই আইপিএল প্রতিভাদের আত্মপ্রকাশের মঞ্চ। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ ক্রিকেটের (IPL) দুনিয়ায় যে চারাগাছগুলির জন্ম দেয় তা সময়ের সাথে বড় হয়ে ডালপালা বিস্তার করে হয়ে মহীরুহে পরিণত হতে দেখা যায়। ব্যতিক্রম ছিলো না ২০২৩ এর আইপিএল’ও। রিঙ্কু সিং (Rinku Singh), যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal), তিলক বর্মা, ধ্রুব জুড়েলদের (Dhruv Jurel) পাশাপাশি মন জিতে নিয়েছিলেন বছর একুশের তরুণ সাই সুদর্শনও (B. Sai Sudarshan) ।
২০২২-এর আইপিএলে অনবদ্য একটি অর্ধশতরান করে নজর কেড়েছিলেন সাই সুদর্শন। তাঁকে ‘রিটেন’ করার পথে হেঁটেছিলো গুজরাত টাইটান্স (GT) ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেই আস্থার দাম দিয়েছেন তিনি। একাধিক ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন তিনি। টিম কম্বিনেশনের কারণে বেশ কিছু ম্যাচে তাঁকে বাইরেও রাখতে হয়েছিলো কোচ আশিষ নেহরা এবং অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়াকে। দমে যান নি সাই (B. Sai Sudarshan) । ফিরে এসে ফের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তরুণ ব্যাটারের প্রতিভায় মুগ্ধ হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya) তাই দিল্লী ক্যাপিটালসের (DC) বিরুদ্ধে ম্যাচ শেষে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, “ও (সাই) অসামান্য ব্যাট করছে। আমি যদি খুব ভুল না হউ তাহলে আগামী দুই বছরের মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ও তো ভালো করবেই, পাশাপাশি ভারতীয় দলের হয়েও দুরন্ত পারফর্ম করবে।”
Read More: BREAKING NEWS: বিশ্বকাপের আগে আরও বিপাকে পাকিস্তান, বোর্ডের দায়িত্ব ছাড়লেন নাজম শেঠি !!
IPL ফাইনালে অসামান্য ইনিংস খেলেন সাই-
২১ বর্ষীয় বাঁ-হাতি ব্যাটার সাই সুদর্শন (B. Sai Sudarshan) ২০২৩ সালে আইপিএলের আঙিনায় অনবদ্য পারফর্ম করেছেন। মাত্র ৮ ম্যাচে ৩টি অর্ধশতক-সহ তিনি করেছেন ৩৬২ রান। ব্যাটিং গড় ৫২’র আশেপাশে। স্ট্রাইক রেটও প্রায় ১৪২। গোটা মরসুম জুড়ে বেশ কিছু কার্যকরী ইনিংস খেললেও সেরাটা তিনি তুলে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য। বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনাল ম্যাচকে চার-ছক্কার ফুলঝুড়িতে আলোকিত করে তোলেন তিনি। কমলা টুপি জয়ী শুভমান গিল (Shubman Gill) দ্রুত আউট হয়ে গেলেও গুজরাত টাইটান্স (GT) ইনিংসকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তামিলনাড়ুর তরুণ। প্রথমে ঋদ্ধিমান সাহার (Wriddhiman Saha) সাথে ও পরে অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার (Hardik Pandya) সাথে জুটি বেঁধে দলকে ২০০ রানের গণ্ডী পার করিয়ে দেন তিনি। মাত্র ৪৭ বলে ৮টি চার এবং ৬টি ছক্কার সাহায্যে ৯৬ রান করেন তিনি। শ্রীলঙ্কার মাথিশা পথিরানার বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়ে শেষ মুহূর্তে সাজঘরে ফিরতে হয় তাঁকে। শতরান স্পর্শ করতে না পারলেও সাই সুদর্শনের (B. Sai Sudarshan) ব্যাটিং’কে সেদিন কুর্নিশ জানিয়েছিলো আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত লক্ষাধিক ক্রিকেটপ্রেমী। আইপিএল ফাইনালে কোনো ভারতীয়ের করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক হন তিনি।
ফর্ম বজায় রেখেছেন TNPL-এ-
আইপিএলের পর ভারতের ক্রিকেটজনতার চোখ এখন টিএনপিএল-এ। তামিলনাড়ুর ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে বিজয় শঙ্কর (Vijay Shankar), রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের (Ravichandran Ashwin) মত আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রিকেটারদের পাশপাশি খেলছেন সাই সুদর্শনের মত নতুন মুখেরাও। এই টুর্নামেন্টেও ব্যাট হাতে সাইয়ের (B. Sai Sudarshan) ঝড় অব্যাহত। এখনও অবধি তিন ম্যাচ খেলেছেন তিনি। অর্ধশতরান করেছেন তিন ম্যাচেই। লাইকা কোভাই কিংস জার্সিতে প্রথম ম্যাচে আইড্রিম ত্রিপুর তামিঝানের বিরুদ্ধে ৪৫ বলে ৮৬ দিয়ে প্রতিযোগিতার সূচনা করেছিলেন তিন। এরপর নেল্লাই রয়্যাল কিংসের বিরুদ্ধে আসে ৫২ বলে ৯০ রান। এবং তৃতীয় ম্যাচে আগুনে ফর্ম বজায় রেখে সাই সুদর্শন (B. Sai Sudarshan) চিপক সুপার গিল্লিসের বিরুদ্ধে করেন অপরাজিত ৬৪। ৩ ম্যাচে আপাতত তাঁর মোট রান ২৪০। ব্যাটিং গড় ১২০।
একের পর এক অসাধারণ ইনিংস খেলে জাতীয় দলের রেডারে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ভারতের টি-২০ দলে বাঁ-হাতি ব্যাটার বিশেষ নেই। সেই কারণে সাই সুদর্শনকে (B. Sai Sudarshan) দলে জায়গা দেওয়ার কথা ভাবতেই পারেন নির্বাচকেরা। সামনের মাসে টিম ইন্ডিয়া উড়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখানে অগস্টের গোড়ায় ৫টি টি-২০ ম্যাচ রয়েছে। তারপর রয়েছে আয়ারল্যান্ড সফর। সাই সুদর্শনকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা আয়ারল্যান্ডে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দেখা যেতেই পারে।