IPL 2025: থামানো যাচ্ছে না দিল্লী ক্যাপিটালকে (DC)। লক্ষ্ণৌ, হায়দ্রাবাদ ও চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে পরপর তিনটি ম্যাচে জয় পেয়েছিলো তারা। আজ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকেও তাদের ঘরের মাঠে রীতিমত উড়িয়ে দিলো ৬ উইকেটের ব্যবধানে। টসে জিতে প্রথম বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্যাপিটালস অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেল (Axar Patel)। ব্যাট হাতে শুরুতে ঝড় তুললেও পরে খানিক ম্রিয়মান হয়ে পড়েছিলো আরসিবি। শেষমেশ টিম ডেভিডের প্রত্যাঘাতের সৌজন্যে স্কোরবোর্ডে ১৬৩ রান তুলতে সক্ষম হয় তারা। পাওয়ার প্লে’তেই তিন উইকেট তুলে বেঙ্গালুরুকে জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর, যশ দয়ালরা। কিন্তু ঢাল হয়ে দাঁড়ান কে এল রাহুল (KL Rahul)। তাঁর ৯৩* রানের ধুন্ধুমার ইনিংস খেলেন তিনি। যোগ্য সঙ্গত ট্রিস্টান স্টাবসেরও। দুই তারকার যুগলবন্দীতে ১৩ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ দিল্লীর।
Read More: আইপিএলে চলবে না রিয়ান পরাগের দাদাগিরি, ১ ম্যাচের জন্য ব্যান করছে BCCI !!
১) ইনিংসের শুরুতে বিধ্বংসী সল্ট-
ব্যাট হাতে ইনিংসের শুরুটা দুর্দান্ত গতিতে করেছিলেন ফিল সল্ট। দ্বিতীয় ওভারে তিনি চার ও ছক্কা হাঁকান প্রতিপক্ষ অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেলের বিরুদ্ধে। দিল্লী বোলিং-এর সেরা অস্ত্র মিচেল স্টার্ককে নিয়েও রীতিমত ছেলেখেলা করতে দেখা গেলো তাঁকে। পাওয়ার প্লে চলাকালীন একই ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মারেন সল্ট। হাঁকান দু’টি ছক্কা’ও। ইংল্যান্ড তারকার তোপের মুখে এক ওভারে ৩০ রান খরচ করে বসেছিলেন বাম হাতি অস্ট্রেলীয় পেসার।
২) রান-আউটে ভাঙলো ওপেনিং জুটি-

যে গতিতে এগোচ্ছিলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ওপেনিং জুটি, তাতে সমর্থকেরা ধরেই নিয়েছিলেন যে ২০ ওভারে ২০০’র মাইলস্টোন পেরিয়ে যাবে দল। কিন্তু ছন্দপতন দেখা গেলো চতুর্থ ওভারে। বিরাট কোহলির সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান-আউট হন ফিল সল্ট। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে ১৭ বলে ৩৭ করেন তিনি। চিন্নাস্বামীতে আরসিবি যখন প্রথম উইকেট হারায় তখন তাদের স্কোরবোর্ডে ৬১ রান।
৩) ধরাশায়ী বেঙ্গালুরুর মিডল অর্ডার-

সল্ট ফেরার পরেই তাল কাটে বেঙ্গালুরু ইনিংসের। তিনে নামা দেবদত্ত পাডিক্কল ৮ বলে ১ রান করে আউট হন। সফল হন নি বিরাট কোহলিও। ১৪ বলে ২২ রান করে সাজঘরের পথে হাঁটা লাগান তিনিও। লিয়াম লিভিংস্টোনও ব্যর্থ আজ। ৪ বল খেলে তাঁর ঝুলিতে মাত্র ৫ রান। গত কয়েকটি ম্যাচে ‘ফিনিশার’ হিসেবে সাফল্য পেয়েছিলেন জিতেশ শর্মা। আজ ১ করেন তিনি। খানিক প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক রজত পাটিদার। কিন্তু কুলদীপের ঘূর্ণির নাগাল না পেয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনিও। ২৩ বলে ২৫ রান করেন মধ্যপ্রদেশের ব্যাটার।
৪) দুরন্ত ক্যামিও টিম ডেভিডের-

১৮ বলে ১৮ রান করে ক্রুণাল পাণ্ডিয়া যখন আউট হন তখন বেঙ্গালুরুর স্কোরবোর্ডে ১২৫ রান। স্কোর আদৌ দেড়শ পেরোবে কিনা তা নিয়ে দেখা গিয়েছিলো সংশয়। কিন্তু ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সিঙ্গাপুরজাত অস্ট্রেলীয় তারকা টিম ডেভিড। ডেথ ওভারে একের পর এক চার-ছক্কা হাঁকিয়ে দলের স্কোর ১৬৩ অবধি টেনে নিয়ে যান তিনি। অপরাজিত থাকেন ২০ বলে ৩৭ রান করে।
৫) নড়বড়ে টপ-অর্ডার চাপ বাড়ায় দিল্লীর-
১৬৪ রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরুতে বেশ চাপে পড়েছিলো দিল্লী। যশ দয়ালের বলে রজত পাটিদারের হাতে ধরা পড়েন ফাফ দু প্লেসি। বেশীক্ষণ ক্রিজে টেকেন নি আরেক ওপেনার জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক’ও। ৭ করে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে উইকেট হারান অজি তরুণ। তিন নম্বরে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নেমেছিলেন বাংলার অভিষেক পোড়েল। ম্যাচে বিশেষ ‘ইমপ্যাক্ট’ দেখা গেলো না তাঁর। ভুবনেশ্বরের বিরুদ্ধে বড় শট মারতে গিয়ে জিতেশের দস্তানায় ধরা পড়েন তিনিও। করেন ৭ রান। ৩০ রানের মাথায় ৩ উইকেট হারিয়েছিলো দিল্লী।
৬) আবারও পরিত্রাতা কে এল রাহুল-

দিনকয়েক আগে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ৭৭ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলেছিলেন কে এল রাহুল। সেদিন ম্যাচের সেরার পুরষ্কার পেয়ে জানিয়েছিলেন যে আরও ১৫-২০ রান করতে পারতেন। পরের বার পুষিয়ে দেবেন, কথা দিয়েছিলেন সমর্থকদের। সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করলেন তিনি। কঠিন সময়ে কার্যত একা কুম্ভ হয়ে লড়াই চালিয়ে গেলেন আজ। প্রথমে অক্ষর প্যাটেলের সাথে জুটি গড়েন। পরে ট্রিস্টান স্টাবসকে সাথে নিয়ে জয় এনে দেন দল’কে। বেঙ্গালুরুতেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাহুলের। চেনেন চিন্নাস্বামীর প্রতিটি ঘাস। ‘ঘরের ছেলে’ আজ বেঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজিকেই গুঁড়িয়ে দিলেন ৯৩* রান করে।
৭) অপরাজিত তকমা ধরে রাখলো দিল্লী-

১৪ ওভার শেষে দিল্লীর স্কোরবোর্ডে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ছিলো ৯৯ রান। সময় বুঝে রানের গতি বাড়ান কে এল রাহুল ও ট্রিস্টান স্টাবস। ১৭.৫ ওভারে ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করে দিলেন তাঁরা। ৭টি চার ও ৬টি ছক্কার সাহায্যে ৯৩ করে অপরাজিত রইলেন রাহুল। ২৩ বলে ৩৮* ট্রিস্টানের। তাঁদের তোপের মুখে রীতিমত দিশাহারা লাগলো বেঙ্গালুরুকে। এই নিয়ে টানা চার ম্যাচ জিতে নিলো দিল্লী। আপাতত লীগ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে তারা।