IPL 2024: ভারতীয় ক্রিকেটে গলি থেকে রাজপথে উঠে আসার সাম্প্রতিকতম কাহিনীর নায়ক রিঙ্কু সিং। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম রিঙ্কু’র (Rinku Singh)। বাবা বাড়ি বাড়ি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার বিলি করতেন। ছোটো থেকে দারিদ্রের সাথে লড়াই করে উঠে এসে এখন ক্রিকেটজনতার নয়নের মণি তিনি। আর এই সবকিছুর নেপথ্যেই রয়েছে আইপিএল (IPL)। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ ট্রফির গায়ে খোদাই করা রয়েছে একটি সংস্কৃত শ্লোক, যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘যেখানে প্রতিভা আত্মপ্রকাশের মঞ্চ খুঁজে পায়।’ কথাটি একদম মিলে যায় রিঙ্কুর (Rinku Singh) জীবনের সঙ্গে। বেশ কয়েকবছর নাইট রাইডার্স (KKR) শিবিরের অংশ হলেও এতদিন সুযোগের অভাবে লাইমলাইটে আসতে পারছিলেন না তিনি। অবশেষে সুযোগ আসে ২০২৩ মরসুমে। দুই হাত দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরেন রিঙ্কু। ব্যাটের জাদুতে হয়ে ওঠেন কলকাতা সমর্থকদের চোখের মণি।
রিঙ্কু’র উত্থানের শুরুটা নিঃসন্দেহে কলকাতা (KKR) বনাম গুজরাত (GT) ম্যাচে। শেষ ওভারে নাইট রাইডার্সের দরকার ছিলো ২৯ রান। অতি বড় নাইট ভক্ত’ও সম্ভবত ছেড়ে দিয়েছিলেন জয়ের আশায়। এই পরিস্থিতিতে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেন তিনি। বোলার যশ দয়ালকে পরপর পাঁচ বলে ছয় মেরে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেন তিনি। কলকাতাকে (KKR) এনে দেন ২ পয়েন্ট। এই ধারাবাহিকতা গোটা মরসুমে ধরে রেখেছেন রিঙ্কু। ২০২৩ সালের আইপিএলে ১৪ ম্যাচে প্রায় ৬০ ব্যাটিং গড়ে রিঙ্কুর (Rinku Singh) সংগ্রহ ৪৭৪ রান। স্ট্রাইক রেটও ১৫০’র আশেপাশে। আন্দ্রে রাসেল, নীতিশ রানা, ভেঙ্কটেশ আইয়ারদের মত তারকাদের পিছনে ফেলে নাইট শিবিরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন রিঙ্কুর। স্বাভাবিক কারণেই ২০২৪ মরসুমের জন্য তাঁকে রিটেন করে নাইট রাইডার্স। নিলামের টেবিলে আর যাওয়া হয় নি তাঁর।
Read More: “প্রথম বলেই ছক্কা মারবো…” পরিবারের কাছে করা প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন সমীর রিভজি !!
অর্থপ্রাপ্তি রিঙ্কুর, এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হলো বেতন-
২০১৮ সালে যখন প্রথম আইপিএলের (IPL) নিলামে নাম এসেছিলো রিঙ্কু সিং-এর (Rinku Singh), তখন তাঁকে ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে দলে নিয়েছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্স। এরপর কয়েক বছর তেমন সুযোগ পান নি তিনি। ২০২৩ নিলামের আগে তাঁকে রিলিজ’ও করে দিয়েছিলো কলকাতা। পরে ফের নিলাম থেকে মাত্র ৫৫ লক্ষ টাকায় উত্তরপ্রদেশের বাম হাতি ব্যাটারকে দলে নেয় শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজি। ষোড়শ আইপিএলে রিঙ্কুর (Rinku Singh) দুরন্ত পারফর্ম্যান্সের পর ২০২৪ মরসুমের জন্য তাঁকে রিটেন করায় নয়া চুক্তির সুযোগ ছিলো না তাঁর কাছে। ফলে ৫৫ লক্ষ টাকাই বেতন থেকে যায় রিঙ্কুর। অনেকেই আক্ষেপ করতে থাকেন যে ৫৫ লক্ষ টাকা মোটেই তাঁর মত প্রতিভার জন্য যথেষ্ট মূল্য নয়। ক্রিকেটজনতার মতে যেখানে মিচেল স্টার্ক ২৪.৭৫ কোটি, প্যাট কামিন্স ২০.৫০ কোটি টাকা পাচ্ছেন, সেখানে রিঙ্কুর অর্থপ্রাপ্তি যথেষ্টই কম।
বিষয়টি নজরে এসেছিলো ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই-এর’ও (BCCI)। সম্প্রতি ভারতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তি’র সি-গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে রিঙ্কুকে (Rinku Singh)। বার্ষিক ১ কোটি টাকা পাবেন তিনি। একইসাথে তাঁর আইপিএল (IPL) চুক্তির অঙ্কও বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। ৫৫ লাখ থেকে এক লাফে ১ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়ালো তাঁর চুক্তিমূল্য। কেবল রিঙ্কু নয়, আরও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের আইপিএল চুক্তির অঙ্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। তালিকায় রয়েছেন পাঞ্জাব কিংসের (PBKS) জিতেশ শর্মা (Jitesh Sharma), গুজরাত টাইটান্সের (GT) সাই সুদর্শন (Sia Sudharshan) ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) রজত পতিদার (Rajat Patidar)। কোটির অঙ্ক অবশ্য ছুঁয়েছে কেবল রিঙ্কুর বেতনই। বাকিদের চুক্তিমূল্য ২০ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ লক্ষ।