IPL 2024: আইপিএলের (IPL) মাঝপথে যদি কেউ বলতেন যে ৬৮তম ম্যাচের পর প্লে-অফে পা রাখবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB), তাহলে তিনি নিশ্চয়ই হাস্যস্পদ হতেন ক্রিকেটবোদ্ধাদের আলোচনায়। প্রথম ম্যাচে হার, তারপর দ্বিতীয় ম্যাচে জিতলেও এরপর টানা ছয় ম্যাচে পরাজিত হয়েছিলেন বিরাট কোহলিরা। অনেকেই নিদান দিয়ে দিয়েছিলেন যে প্রথম দল হিসেবে আইপিএল থেকে ছিটকে যাবে বেঙ্গালুরুই। তাদের নারী দল ডব্লুপিএল (WPL) ট্রফি জিতলেও সতেরোতম আইপিএল (IPL) মরসুমে এসেও খালিই থেকে যাবে পুরুষ দলের ট্রফি ক্যাবিনেট। কিন্তু ক্রিকেট তো আসলে মহান অনিশ্চয়তার খেলা। চলতি টুর্নামেন্টে অবিশ্বাস্য কামব্যাক করে সেই ক্লিশেতেই যেন সিলমোহর লাগালো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
৮ ম্যাচ শেষে বেঙ্গালুরুর জয়ের সংখ্যা ছিলো মাত্র ১। দুই পয়েন্ট নিয়ে সবার শেষে ছিলো তারা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা ৫ ম্যাচ জিতে প্লে-অফের চর্চায় জায়গা করে নিয়েছিলেন ফাফ দু প্লেসিরা (Faf du Plessis)। সামনে অন্তিম বাধা ছিলো চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK)। যে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে হেরে মরসুম শুরু হয়েছিলো, স্বপ্নের দৌড় জারি রাখতে তাদের বিরুদ্ধেই জিততে হত আজ। তাও কেবল জয় নয়। রাস্তা রুখেছিলো আরও নানান জটিল অঙ্কের হিসেব’ও। কিন্তু সেই সকল সমীকরণ তুড়ি মেরে উড়িয়ে কেবল ইচ্ছাশক্তির জোরে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে আজ অসাধ্যসাধন করেই দেখালো বেঙ্গালুরু। প্রথমে ব্যাটিং করে তাদের তোলা ২১৮ রানের জবাবে চেন্নাই থেমে গেলো ১৯১তে। ২৭ রানে জিতে প্লে-অফে কোহলিরা।
Read More: IPL 2024: ম্যাচ ফিক্সিং-এর ছায়া চিন্নাস্বামীতে, চেন্নাই তারকার বোলিং অ্যাকশন জাগালো সন্দেহ !!
বিরাট-দু প্লেসির দাপটে বড় রান বেঙ্গালুরু’র-
টসে জিতে ঋতুরাজ গায়কোয়াড় (Ruturaj Gaikwad) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ব্যাটিং আমন্ত্রণ জানাতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো ম্যাচের সমীকরণ। অন্তত ১৮ রানের ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে হারালেই একমাত্র প্লে-অফের মুখ দেখার সম্ভাবনা ছিলো বেঙ্গালুরু শিবিরের। চিন্নাস্বামীর মত ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে এহেন ব্যবধান বজায় রাখতে গেলে স্কোরবোর্ডে যে বড় রান প্রয়োজন তা বুঝেছিলেন কোহলি (Virat Kohli), দু প্লেসিরা। তাই শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন তাঁরা। স্কোরবোর্ডে যখন ৩ ওভারে ৩১ রান, তখন বৃষ্টি নামে আজ। প্রকৃতির চোখরাঙানিতে মিনিট ৪০ বন্ধ ছিলো খেলা। কিন্তু ছন্দ হারান নি দুই আরসিবি ওপেনার। চেন্নাই বোলিং-এর চোখে চোখে রেখে চালিয়ে যান লড়াই। ৯৪ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন দুজনে।
২৯ বলে ৪৭ করে প্রথম আউট হন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। অর্ধশতক না পেলেও আরও একবার তিনি স্ট্রাইক রেট নিয়ে ওঠা বিতর্কের জবাব দিয়ে গেলেন ব্যাট হাতে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রান-আউট হওয়ার আগে লড়াকু ৫৪ রান করে গেলেন অধিনায়ক দু প্লেসি’ও। ফর্ম ধরে রাখলেন রজত পতিদার। মধ্যপ্রদেশের তারকার ব্যাট থেকে এলো ২৩ বলে ৪১ রানের ইনিংস। চারে ক্যামেরন গ্রিনকে (Cameron Green) নামানোর পরিকল্পনা সফল কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের। ১৭ বলে ৩৮* করে বেঙ্গালুরুকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করালেন অজি অলরাউন্ডার। এছাড়াও দুটি কার্যকরী ক্যামিও খেললেন দীনেশ কার্তিক ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৬ বলে ১৪ করেন কার্তিক (Dinesh Karthik)। ম্যাক্সওয়েলের সংগ্রহ ৫ বলে ১৬। ২০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৫ উইকেটের বিনিময়ে ২১৮ রান তুলে দেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স।
দুর্দান্ত দয়াল শেষ চারে নিয়ে গেলেন বেঙ্গালুরুকে-
শেষ চারে জায়গা করে নিতে ২০১ রান করতেই চলত চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK)। চলতি আইপিএলে (IPL) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বোলিং-এর পরিসংখ্যান মাথায় রেখে চিন্তাতেই ছিলেন অনুরাগীরা, কিন্তু আজ দেখা গেলো উলটো চিত্র। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে নতুন বল তুলে দেন অধিনায়ক দু প্লেসি। কাজে লেগে গেলো ফাটকা। ইনিংসের প্রথম বলেই ম্যাক্সওয়েল (Glenn Maxwell) ফিরিয়ে দেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক আজ ‘গোল্ডেন ডাক’ করে ফেরেন সাজঘরে। তিনে নেমেছিলেন নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল। ১৪ কোটির অলরাউন্ডারকে ফেরালেন যশ দয়াল। বাম হাতি পেসারের বলে ৪ রান করে বিরাট কোহলির হাতে ধরা পড়েন তিনি। ১৯ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলো চেন্নাই।
আজ চারে নেমেছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। রচিন রবীন্দ্রের সাথে জুটি বেঁধে লড়াই চালান তিনি। কিন্তু ২২ বলে ৩৩ রানের বেশী এগোতে পারেন নি। ৩৭ বলে চমৎকার ৬১ করলেও রান-আউট হন রচিন। বিগ হিটার শিবম দুবের ব্যাট’ও শান্ত আজ। ১৫ বলে ৭ রানের মন্থর ইনিংস খেলেন তিনি। ব্যর্থ মিচেল স্যান্টনার’ও। ডুবতে থাকা সুপার কিংসদের শেষ আশা ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। নিজেদের অভিজ্ঞতার শেষ বিন্দুটুকু উজাড় করে দিয়ে শেষ ওভার অবধি ম্যাচের রোমাঞ্চ জাগিয়ে রাখলেন দুজনে। গত বছর গুজরাত জার্সিতে শেষ ওভারে পাঁচ ছক্কা হজম করেছিলেন যশ দয়াল। আজ বেঙ্গালুরুর হয়ে অসামান্য ২০তম ওভার করে দলকে নিয়ে গেলেন শেষ চারে। জাদেজার ৪২*, ধোনির ২৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস ব্যর্থ করে চিন্নাস্বামীতে ধ্বনিত হলো ‘ই সালা কাপ নম দে।’