IPL 2024: ক্রিকেট হলো মহান অনিশ্চয়তার খেলা। বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি আরও একবার আজ সত্যি হতে দেখা গেলো আইপিএলের (IPL) আসরে। মুল্লানপুরের মহারাজা যাদবিন্দ্র সিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ মুখোমুখি হয়েছিলো পাঞ্জাব কিংস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। প্লে-অফের দৌড়ে টিকে থাকার জন্য দুই দলের কাছেই আজ জয় অত্যন্ত প্রয়োজন ছিলো। রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে হার না মানা মনোভাবের সৌজন্যেই দুই পয়েন্ট ছিনিয়ে নিলো মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। একটা সময় মনে হয়েছিলো সহজেই ম্যাচ হাতের মুঠোয় নেবেন হার্দিক পান্ডিয়া, রোহিত শর্মা’রা। কিন্তু তা গড়ালো শেষ ওভার অবধি।
টসে জিতে আজ প্রথমে বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো পাঞ্জাব। পাওয়ার প্লে’তে উইকেটও তুলে নিয়েছিলো তারা। এরপর রোহিত শর্মা ও সূর্যকুমার যাদবের জুটি বড় ইনিংসের ভিত গড়ে মুম্বইয়ের। সফল হন তিলক বর্মা’ও। হর্ষল প্যাটেল, কাগিসো রাবাডাদের বোলিং আক্রমণ সামলে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরা তোলে ১৯২ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে একটা সময় ধুঁকছিলো পাঞ্জাব। ১৪ রানের মধ্যে তারা হারিয়েছিলো ৪ উইকেট। এরপর শশাঙ্ক সিং ও আশুতোষ শর্মার ব্যাটে ভর দিয়ে লড়াইতে ফিরেছিলো প্রীতি জিন্টার দল। প্রবল চাপের মধ্যেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে তাঁদের দুজনকে ফেরান বুমরাহ ও ক্যুৎসিয়ে। পেস জুটির সাফল্য ২ পয়েন্ট নিশ্চিত করে মুম্বইয়ের। ৯ রানে হারতে হলো পাঞ্জাবকে।
Read More: IPL 2024: “হংস মধ্যে বক যথা…” পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে বড় রান মুম্বইয়ের, ব্যর্থ হয়ে নেটিজেনদের রোষের মুখে হার্দিক !!
অর্ধশতক সূর্যের, হার্দিকের ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন-
পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে আজ দীর্ঘস্থায়ী হয় নি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ওপেনিং জুটি। ঈশান কিষণ ফেরেন মাত্র ৮ রান করেই। কাগিসো রাবাডার বলে ক্যাচ দিয়ে বসেন হরপ্রীত ব্রারের হাতে। টি-২০ বিশ্বকাপের আগে তাঁর ধারাবাহিকতার অভাব জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে দিলো ঝাড়খণ্ডের তরুণকে। আগের ম্যাচে শতরান করেও দলকে জেতাতে পারেন নি রোহিত শর্মা। আজ শুরুটা সাবলীল ভঙ্গিতে করলেও বড় রান এলো না তাঁর ব্যাট থেকে। ২৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলে স্যাম কারানের বলে উইকেট হারান। তবে রোহিতের এক হাতে মারা একটি ছক্কা আজ নজর কাড়লো দর্শকদের। শটটি উপভোগ করলেন হিটম্যান নিজেও।
জোড়া ওপেনারকে হারানোর পর মুম্বই ঘুরে দাঁড়ায় সূর্যকুমার যাদবের ব্যাটে। চোট সারিয়ে ফেরার পর প্রথম ম্যাচে শূন্য করেছিলেন সূর্য। তারপরের ম্যাচে করেন ঝোড়ো অর্ধশতক। তৃতীয় ম্যাচে আবার শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। আজ যেন ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অর্ধশতকের গণ্ডী পেরোলেন বিশ্বের এক নম্বর টি-২০ ব্যাটার। ১৪৭.১৭ স্ট্রাইক রেটে ৫৩ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। মারেন ৭টি চার ও ৩টি ছক্কা। রান পেলেন তিলক বর্মা’ও। হায়দ্রাবাদের তরুণ ১৮ বলে ৩৪ করে অপরাজিত থাকেন আজ। দলকে পৌঁছে দেন ১৯২ রানে। তবে চিন্তা রইলো হার্দিক পান্ডিয়ার ফর্ম নিয়ে। পাঁচে নেমে ১০ করেই ফেরেন তিনি। ১৪ করেন টিম ডেভিড, ১ রানে আউট হন রোমারিও শেপার্ড। পাঞ্জাবের হয়ে হর্ষল ৩টি, কারান ২টি ও রাবাডা ১ উইকেট নেন।
যথেষ্ঠ হলো না শশাঙ্ক-আশুতোষের প্রতিরোধ-
শিখর ধাওয়ান ছিলেন না আজ। ওপেনিং-এ প্রভসিমরণ সিং-এর সাথে মাঠে নামেন স্যাম কারান। কোচ ট্রেভর বেলিসের ফাটকা বিশেষ কাজে আসে নি। ইনিংসের গোড়াতেই মুখ থুবড়ে পড়ে পাঞ্জাব কিংস। প্রথমে জেরাল্ড ক্যুৎসিয়ে ফেরান প্রভসিমরণ’কে। উইকেটরক্ষক ঈশান কিষণের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। এরপর আঘাত হানেন বুমরাহ।ভারতীয় পেস তারকার দুরন্ত ইনস্যুইং-এর মোকাবিলা করতে ব্যর্থ রাইলি রুশো। প্রোটিয়া ক্রিকেটার আউট হন ৩ বলে ১ রান করে। ঐ একই ওভারে স্যাম কারানকেও সাজঘরের পথ দেখান বুমরাহ। আম্পায়ার লেগ সাইডের বল ওয়াইড দিয়েছিলেন। রিভিউ-এর সঠিক ব্যবহার করে উইকেট ছিনিয়ে নেন বুমরাহ। ৭ বলে ৬-এর বেশী এগোন নি কারান।
চারে লিয়াম লিভিংস্টোনকে নামিয়েছিলো পাঞ্জাব। ক্যুৎসিয়েকে অহেতুক পুল মারতে গিয়ে তাঁর হাতেই ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। করেন ৪। ১৪ রানে ৪ উইকেট হারানো পাঞ্জাব ৫০ পেরোবে কিনা তা নিয়েই দেখা গিয়েছিলো সংশয়। হরপ্রীত, জিতেশ শর্মারাও রান পান নি আজ। এরপর প্রতিরোধের আগুন জ্বালালেন সেই শশাঙ্ক সিং ও আশুতোষ শর্মা। কিন্তু দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এসে বুমরাহ দুরন্ত স্লোয়ারে শশাঙ্ককে (৪১) ফেরাতে আরও একবার পাল্লা ভারী হয়েছিলো মুম্বইয়ের। কিন্তু এরপরেও লড়াই জারি রাখেন আশুতোষ। রিভার্স স্কুপ, সুইপ, ল্যাপ শটে মনে করালেন এবি ডিভিলিয়ার্সকে। অসামান্য ২৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। চেষ্টা চালিয়ে গেছিলেন হরপ্রীত ব্রার’ও। কিন্তু ২১ করে থামেন তিনিও। পাঞ্জাব ইনিংস শেষ হয় ১৮৩ রানে।