IPL 2024: টানা তিন ম্যাচে জয়ের পর চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ছন্দপতন হয়েছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্সের। হারতে হয়েছিলো চিপকের মাঠে। আজ নববর্ষের দিনে ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে জয়ের সরণিতে ফিরলো নাইট শিবির। সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে আইপিএল (IPL) মরসুমের প্রথম ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলেছিলো কলকাতা। তারপর টানা তিনটি ম্যাচ বাইরের মাঠে খেলতে হয়েছে তাদের। আজ দ্বিতীয় হোম ম্যাচেও দাপুটে ক্রিকেট খেলে সাফল্য ছিনিয়ে নিলো তারা। দিল্লী ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে হেরে আজ ইডেনে নেমেছিলেন কে এল রাহুল’রা। গায়ে চাপিয়েছিলেন বিশেষ সবুজ-মেরুণ জার্সি। তাতেও ভাগ্য ফিরলো না লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের। দুই পয়েন্ট খুইয়েই মাঠ ছাড়তে হলো তাদের।
টসে জিতে প্রথমে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিং-এর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কলকাতা অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। শুরুতেই জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসকে ধাক্কা দিয়েছিলেন বৈভব আরোরা ও মিচেল স্টার্ক। এরপর কে এল রাহুল ও আয়ুষ বাদোনি গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। মাঝের ওভারে স্পিনারদের সৌজন্যে ফের ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে নিয়েছিলো কলকাতা। নিকোলাস পুরানের ঝোড়ো ক্যামিও শেষমেশ লক্ষ্ণৌকে পৌঁছে দেয় ১৬১ রানে। রান তাড়া করতে নেমে জোড়া উইকেট হারিয়েছিলো নাইট রাইডার্স’ও। নারাইন ও অঙ্গকৃষ রঘুবংশী সাজঘরে ফেরার পর ফিল সল্ট ও শ্রেয়স আইয়ারের জুটি জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় কলকাতাকে। শেষমেশ ২৬ বল বাকি থাকতেই সাফল্য ধরা দেয় নাইটদের মুঠোতে।
Read More: IPL 2024, PBKS vs RR, Match 27 Highlights: রাজস্থানের সামনে টিকতে পারলো না পাঞ্জাব, তিন উইকেটে ঘরের মাঠে হল পর্যুদস্ত !!
রাহুল-পুরানদের বিরুদ্ধে ছন্দে ফিরলেন স্টার্ক-
বল হাতে শুরুতেই লক্ষ্ণৌ’র বিরুদ্ধে আঘাত হেনেছিলেন বৈভব আরোরা। ফেরান ক্যুইন্টন ডি কক’কে। মরসুমের শুরুতে জোড়া অর্ধশতক করেছিলেন তিনি। কিন্তু আপাতত ফর্ম উধাও তাঁর ব্যাট থেকে। আজ ফিরলেন মাত্র ১০ রান করেই। তিন নম্বরে আজ দেবদত্ত পাডিক্কাল নয়, বরং দীপক হুডা’কে সুযোগ দিয়েছিলো লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস। রানের মুখ দেখলেন না তিনিও। ১০ বলে ৮ রানের বেশী এগোতে পারেন নি হুডা। তাঁকে ফিরিয়ে সুপারজায়ান্টসদের দ্বিতীয় ধাক্কা দেন মিচেল স্টার্ক। চারে নামা আয়ুষ বাদোনিকে সাথে নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন কে এল রাহুল। আন্দ্রে রাসেল’কে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক। করেন ২৭ বলে ৩৯ রান।
এরপর নাইটদের স্পিনের জালে বন্দী হন মার্কাস স্টয়নিস ও আয়ুষ বাদোনি। বরুণ চক্রবর্তীর বলে ১০ রান করে উইকেটরক্ষক ফিল সল্টের হাতে ধরা পড়েন অজি অলরাউন্ডার। দিল্লী ম্যাচে অর্ধশতক করা বাদোনির আজ সংগ্রহ ২৯ রান। তাঁকে ফেরান সুনীল নারাইন। আজ একটিও বাউন্ডারি হজম না করে জাত চেনালেন ক্যারিবিয়ান রহস্য স্পিনার। সুপারজায়ান্টস ইনিংসের সারথী এরপর হতে দেখা গেলো নিকোলাস পুরান’কে। আগুনে ফর্ম ধরে রেখে আজ ৩২ বলে ৪৫ রান করেন তিনি। শেষ ওভারে বল করতে এসে জোড়া উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। ২৪.৭৫ কোটির তারকার ফর্ম নিয়ে কথা উঠেছিলো। আজ ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ২৮ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিলেন তিনি।
সল্টের দুরন্ত ইনিংসে সহজ জয় কলকাতার-
আজ লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের বিরুদ্ধেও সুনীল নারাইন ও ফিল সল্টের ওপেনিং জুটিকে ব্যবহার করেছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্স। বেঙ্গালুরু-দিল্লীর মত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নারাইন কার্যকরী হলেও আজ ইডেনে রানের মুখ দেখেন নি তিনি। মহসীন খানের বাম হাতি পেসে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ তুলে দেন মার্কাস স্টয়নিসের হাতে। ৬ বলে ৬ রানই করতে সক্ষম হন তিনি। ক্রিজে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেন নি অঙ্গকৃষ রঘুবংশী। বছর উনিশের তরুণ আজ আউট হলেন ৬ বলে ৭ রান করে। তাঁকেও ফেরান মহসীন। উইকেটরক্ষক কে এল রাহুলের হাতে ধরা পড়লেন তিনি। ৪২ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারানোর পরেও কলকাতার জয়ের পথে যে কোনো বাধা সৃষ্টি হলো না তার নেপথ্যে ফিল সল্ট ও শ্রেয়স আইয়ার।
মরসুমের শুরুতে জেসন রয় সরে দাঁড়ানোয় বিকল্প হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন ফিল সল্ট। বর্তমানে নাইট রাইডার্সের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। ওপেন করতে নেমে অনবদ্য খেললেন তিনি। ১৪ টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে মাত্র ৪৭ বলে ৮৯ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। মহসীন, শামার জোসেফ, ক্রুণাল পাণ্ডিয়াদের খেললেন সাবলীল ভঙ্গিতে। এক প্রান্তে সল্ট যখন বিধ্বংসী ব্যাটিং করছেন, তখন অন্য প্রান্তে স্থিতধী ইনিংস খেলতে দেখা গেলো শ্রেয়স আইয়ারকে। অ্যাঙ্কর হিসেবে খেললেন তিনি। ৩৮ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত রইলেন তিনি। তাঁদের দুজনের ১২০ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটিতেই প্রথমবার লক্ষ্ণৌকে হারালো কলকাতা।