IPL 2024: বিশ্বকাপ মিটে গিয়েছে এক সপ্তাহের কিছু বেশী সময় আগে। ক্রিকেটদুনিয়ার নজর এখন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (IPL) দিকে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ লীগের ঢাকে কাঠি পড়তে বাকি এখনও মাস কয়েক। আপাতত সকলের নজরে আইপিএলের সপ্তদশ মরসুমের’মিনি’ নিলাম পর্ব। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বরে কেরলের কোচিতে এক হোটেলে আয়োজিত হয়েছিলো নিলামপর্ব। কিন্তু এবার তা দেশ ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশের মাটিতে। সংবাদমাধ্যম সুত্রে খবর যে আগামী ১৯ ডিসেম্বর মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইতে নিলামের টেবিলে একে অপরের মুখোমুখি হতে চলেছে দশ ফ্র্যাঞ্চাইজি। আগামী মরসুম শুরুর আগেই দলের ফাঁকফোকর বুজিয়ে ট্রফির জন্য ঝাঁপাতে মরিয়া তারা।
২০১২ এবং ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) এবার খেতাব জয়কে পাখির চোখ করেছে। নিলামের আগেই চমক দিয়েছে নাইট শিবির। মেন্টর হিসেবে ফিরিয়েছে ট্রফি জয়ী অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরকে (Gautam Gambhir)। গত ২৬ তারিখ কলকাতা’র তরফ থেকে যে রিলিজ-রিটেনশন তালিকা প্রকাশ করে হয়েছে সেখানে বাদের খাতায় রাখা হয়েছে মোট ১৩ ক্রিকেটারকে। এর মধ্যে নাম রয়েছে কেকেআর কিংবদন্তি সুনীল নারাইনের (Sunil Narine)। বাদ পড়েছেন শাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan), লিটন দাস’রা। ১৩ ক্রিকেটারকে ছাড়ার পর কলকাতা’র (KKR) ‘অকশন পার্সে’ রয়েছে ৩২.৭০ কোটি টাকা। যে ১২ ক্রিকেটারকে তারা ধরে রেখেছে, তার মধ্যেও এমন তিন জন রয়েছেন, যাঁদের ছেড়ে দিয়ে অকশন পার্স’কে আরও খানিক শক্তিশালী করা হয়ত বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারত।
Read More: IPL 2024: স্বপ্ন হতে চলেছে সত্যি, এই সমীকরণে এবারের আইপিএলে এন্ট্রি নিচ্ছেন হাসান আলী !!
আন্দ্রে রাসেল-

ক্যারিবিয়ান তারকা আন্দ্রে রাসেল’কে (Andre Russell) কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) ছেড়ে দিতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিলো রিলিজ-রিটেনশন তালিকা প্রকাশের আগে। শেষমেশ সেই পথে হাঁটে নি শাহরুখ খানের দল। তারা ধরেই রেখেছে রাসেল’কে। ২০১৪ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল (Andre Russell)। এরপর গত এক দশকে নাঈট শিবিরের বহু সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়েছেন তিনি। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নাইট রাইডার্সের (KKR) সবচেয়ে ধারবাহিক ক্রিকেটার তিনিই। এমনকি এক মরসুমে ৫২ ছক্কা হাঁকিয়ে আইপিএলের বিশেষ পুরষ্কারও পেয়েছিলেন ২০১৯ সালে।
তবে ২০২০ আইপিএল (IPL) থেকে অবশ্য ক্রমেই নিম্নগামী তাঁর পারফর্ম্যান্সের গ্রাফ। ২০২০ সালে তিনি ব্যাট হাতে ১০ ম্যাচে করেন মাত্র ১১৭ রান। ২০২১ সালেও ২০০ পেরোয় নি তাঁর রান সংখ্যা। ২০২২ মরসুমে প্রায় ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে ৩৩৫ রান করে পুরনো রাসেলের (Andre Russell) প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন নি তিনি। ২০২৩ মরসুমে ফের চূড়ান্ত ব্যর্থ হন তিনি। ১৪ ম্যাচ করেন মাত্র ২২৭। বল হাতে পান ৭টি মাত্র উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দীর্ঘসময় খেলেন না রাসেল (Andre Russell)। অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলিতেও তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো নয়। ক্রমাগত ব্যর্থতা সত্ত্বেও ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে রাসেল’কে ধরে রাখা ভুলই হয়েছে বলে মতামত বিশেষজ্ঞদের।
ভেঙ্কটেশ আইয়ার-

২০২১ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) আইপিএল ফাইনাল খেলার পিছনে বড় ভূমিকা ছিলো ভেঙ্কটেশ আইয়ারের (Venkatesh Iyer)। মধ্যপ্রদেশের বাম হাতি ব্যাটার কেবল ব্যাট হাতেই নয়, বল হাতেও দলের সাফল্যে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালের ‘ব্রেক-থ্রু’ মরসুমের পর তাঁকে আর চেনা ছন্দে দেখা যায় নি। ২০২২ মরসুমে ১২ ম্যাচ খেলে ১৬.৫৫ গড়ে করেছিলেন মাত্র ১৮২ রান। পরিস্থিতিতে বিশেষ বদল আসে নি ২০২৩ মরসুমেও। পরিসংখ্যান বলছে ১৪ ম্যাচে প্রায় ২৯ গড়ে ৪০৪ রান রয়েছে ভেঙ্কটেশ আইয়ারের (Venkatesh Iyer) ঝুলিতে। কিন্তু সেই পরিসংখ্যানকে বিশ্লেষণ করতে বসলেই সামনে আসে ধারাবাহিকতার অভাবের ছবিটা।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI) বিরুদ্ধে শতরান করেন আইয়ার, সাথে দুটি অর্ধশতক’ও ছিলো গত মরসুমে। অর্থাৎ ২০০’র বেশী রান তিনি করেছেন মাত্র ৩ ম্যাচে। বাকি ১১ ম্যাচে বিশেষ সাফল্য দলকে এনে দিতে পারেন নি। বল হাতে’ও তাঁকে দেখা যায় নি গোটা মরসুমে। বেশ কিছু ম্যাচে ভেঙ্কটেশ আইয়ারের (Venkatesh Iyer) ভুল শটচয়নে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসার কারণেই বিপদে পড়তে হয়েছে কলকাতাকে (KKR)। দীর্ঘকায় অলরাউন্ডার ঘরোয়া ক্রিকেটেও বিশেষ ফর্মে নেই। হার্দিক পান্ডিয়ার প্রত্যাবর্তনের পর জাতীয় দলের বৃত্ত থেকেও ছিটকে গিয়েছেন বেশ কিছুদিন হলো। ৮ কোটি টাকায় তাঁকে ‘রিটেন’ করাও সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে ধারণা ক্রিকেটবোদ্ধাদের।
বৈভব আরোরা-

বছর ২৬-এর বৈভব আরোরা’কে (Vaibhav Arora) আগামী মরসুমের জন্য ধরে রেখেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। বেগুনি-সোনালী শিবিরের রেডারে বেশ কিছু সময় ধরেই ছিলেন তিনি। ২০২২-এর নিলামে তাঁর জন ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা অবধি লড়াই করেছিলো নাইট বাহিনী। শেষমেশ ২ কোটিতে তিনি যোগ দেন পাঞ্জাব কিংসে (PBKS)। সেখানে বিশেষ সাফল্য পান নি। যার ফলে ২০২৩ মরসুমের ‘মিনি’ নিলামের আগে বৈভবকে ছেড়ে দেয় প্রীতি জিন্টার দল। নিলাম থেকে ৬০ লাখের বিনিময়ে বৈভবকে দলে নেন বেঙ্কি মাইশোর’রা। কলকাতা (KKR) তাঁর উপর ভরসা রাখলেও, প্রতিদানে কলকাতাকে বিশেষ সাফল্য এনে দিতে পারেন নি বৈভব (Vaibhav Arora)।
গত মরসুমে কলকাতা (KKR) বোলিং যখন বেশ বিপন্ন, তখন বৈভবকে (Vaibhav Arora)_ বেশ কিছু ম্যাচে সুযোগ দিয়ে দেখেছিলেন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। বল হাতে রীতিমত ব্যর্থই হয়েছেন তিনি। ৫ ম্যাচে প্রায় ৩০ গড় এবং ৯.১৩ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন মাত্র ৫ উইকেট। আগামী মরসুমের জন্য বোলিং বিভাগ ঢেলে সাজাতে চায় কলকাতা। উমেশ যাদব (Umesh Yadav), শার্দুল ঠাকুর (Shardul Thakur), লকি ফার্গুসন (Lockie Ferguson), টিম সাউদী (Tim Southee), কুলবন্ত খেজরোলিয়াদের মত পেসারদের ছেড়ে দিয়েছে তারা। গত মরসুমের পারফর্ম্যান্স বিশ্লেষণ করলে বলা যায় যে সেই তালিকায় নাম থাকা উচিৎ ছিলো বৈভব আরোরা’র (Vaibhav Arora)।