২০০৮ এ শুরু হওয়ার পর থেকে ইন্ডিয়া প্রিমিয়ার লীগ বহু তারকার জন্ম দিয়েছে। এই মুহূর্তে যাদের নাম সহজেই মাথায় আসতে পারে তারা হলেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং জসপ্রীত বুমরাহ। এই খেলোয়াড়রা আইপিএল থেকেই স্পটলাইটের আলোয় আসেন আর বর্তমানে তারা ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করছেন। অন্যান্য ক্রিকেটারদের মধ্যে বেশিরাভগেরই প্রভূত অর্থ রোজগারের উৎস হল আইপিএল। তার আগে সেই ক্রিকেটাররাই একমাত্র প্রভূত অর্থ রোজগার করতে যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতেন জাতীয় দলের হয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটারদের নিয়মিত চাকরির ছাড়াও আয়ের প্রধান উৎস ছিল রঞ্জি ট্রফির মতো টুর্নামেন্ট। তাও এই চাকরিগুলো কোম্পানি তাদের দিত যারা তাদের হয়ে কর্পোরেট লীগগুলিতে প্রতিনিধিত্ব করতেন। আইপিএল এই ক্রিকেটারদের অর্থ রোজগারের দারুণ উৎস দিয়েছে যা তাদের ক্রিকেটে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করেছে। আইপিএল থেকেই উঠে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ক্রুণাল এবং হার্দিক পাণ্ডিয়ার মতো ক্রিকেটার। আজ আমরা এই প্রতিবেদনে এমন কিছু ক্রিকেটারের কথা বলব যাদের দিকে এই আইপিএলে নজর থাকবে।
টম ব্যান্টন
ডানহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বিগব্যাশ লীগে সকলকেই প্রভাবিত করেছেন। এছাড়াও তিনি গত মাসেই নিজের আন্তর্জাতিক ডেবিউ করেছেন। যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো তিনি নিজের ক্ষমতা পুরোপুরি প্রদর্শিত করতে পারেননি। তবে এখনো পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে টি-২০তে খেলে তার স্ট্রাইকরেট ১৬৫ থেকেছে। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে যান তার ৩৬০ ডিগ্রি শট মারার ক্ষমতার জন্য। তিনি বিবিএলে ডেবিউ করে ২২৩ রান করতে সক্ষম হন (সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৬৪)। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ছিল বেন্টনের স্ট্রাইকরেট, যা ছিল ১৭৭ এরও বেশি। যে কোনো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের কাছেই এই স্ট্রাইকরেট ঈর্ষণীয় কারণ এটি ছিল এমন একজনের যিনি প্রথমবার প্রতিযোগীতামূলক লীগ খেলছেন। এই পরিসংখ্যান চিত্তাকর্ষক হতে পারে, তবে যা এই তরুণকে আইপিএল নিলামে হটকেক করে তুলেছিল তা হল তার বিবিধ শট খেলার ক্ষমতা এবং দর্শকদের মনোযোগ নিজের দিকে আকর্ষিত ক্ষমতা।
যশস্বী জয়সওয়াল
ক্রিকেটের হৃদয় ছুঁয়ে নেয় যে কাহিনীগুলো তাদের মধ্যে একটি হল তরুণ যশস্বী জয়সওয়ালের গল্প। এখন তো সকলেই জেনে গিয়েছেন যে যশস্বী কীভাবে তাবুকে ঘুমোতেন আর নিজের খরচা চালানোর জন্য কীভাবে মাঠের বাইরে ফুচকা বিক্রি করতেন। আজ তিনি নিজেকে ভারতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নতুন তারকা হিসেবে তুলে এনেছেন, এবং অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ২০২০তে স্বপ্নের রান করেছেন। তিনি এই হাই প্রোফাইল টুর্নামেন্টে ৪০০ রান করেছেন এবং প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী থেকেছেন। যদি রান না করতে পেরেছেন তো তিনি ডানহাতি স্পিনার হিসেবে বল করে উইকেট নিয়েছেন। তিনি সবচেয়ে তরুণ প্লেয়ার হিসেবে লিস্ট এ ক্রিকেটে ডবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ডও গড়েছেন। একজন খেলোয়াড় যিনি অনেক কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হওয়া যশস্বী দেখিয়েছেন যে তিনি তার বয়সের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। আইপিএল নিলামে রাজস্থান রয়্যালস তাকে ২.৪ কোটি টাকায় কেনায় যশস্বী নিজেকে প্রমান করার জন্য মুখীয়ে থাকবেন।
আর সাই কিশোর
কিছু মাস আগে পর্যন্ত খুব বেশি মানুষ এই ক্রিকেটারের ব্যাপারে জানতেন না। তবে বিজয় হাজারে ট্রফিতে এবং সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে তামিলানাড়ুর অভিযান এতটা সফল হত না যদি আর সাই কিশোর না থাকতেন। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লীগের দেন এই বাঁহাতি স্পিনার ২০১৯ এর আইপিএল সংস্করণে খেলার লাইনে ছিলেন তবে গত বছরের ঘরোয়া মরশুমে দারুণ সফল হলেও ভাগ্য তার সহায় ছিল না। কিন্তু ২০২০তে গল্পটা অন্যরকম হয়ে দাঁড়িয়েছে নিলামে তাকে চেন্নাই সুপার কিংস তুলে নেওয়ায়। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির নবীনতম মরশুমে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া সাই কিশোর নিজের বোলিং কৌশলে সকলকেই প্রভাবিত করেছেন। ১২টি ম্যাচে সাই কিশোর ৪.৬৩র অসাধারণ গড়ে ২০টি উইকেট নিয়েছেন। তা তাকে আরো ভয়ঙ্কর দেখায় তা হলে এই ২০টি উইকেটের মধ্যে ১৫টি উইকেট তিনি পাওয়ার প্লেতে নিয়েছেন। সাই কিশোরের আশা করছেন যদি তিনি সুযোগ পান তা হলে তিনি তার এই বোলিং দক্ষতাকে আরো বাড়িয়ে তুলবেন যা তামিলনাড়ুকে প্রায় ট্রফি জিতিয়ে দিয়েছিল।
জোশ ফিলিপ
জোশ ফিলিপি যাকে সম্ভবত আইপিএল ২০২০ নিলামে সবচেয়ে লাভজনক বিক্রিত খেলোয়াড় বলা যেতে পারে। তিনিপশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার একজন প্রতিভাবান ডানহাতি উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। এই বছর বিগব্যাশ জেতা দল সিডনি সিক্সার দলের সদস্য ফিলিপ তাদের খেতাব জয়ে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা পালন করেছিলেন। ৩৩ এর বেশি গর এবং ১৩৮ স্ট্রাইকরেটে ফিলিপ বিবিএলে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৮০০ রান করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ রান তিনি সম্প্রতি শেষ হওয়া বিবিএল সংস্করণে করেছেন, যা এই ২২ বছর বয়সী খেলোয়াড়ের ফর্মকে দর্শায়। নিলামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু দ্বার তার বেসপ্রাইসে তাকে কেনার পর ফিলিপ নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবেন ডেল স্টেইন এবং এবি ডেভিলিয়র্সের মতো তারকাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করে, যাদের কাছ থেকে তিনি মূল্যবাণ পরামর্শ পেতে পারেন। যদিও আরসিবির দুর্দান্ত বিদেশী প্লেয়ারদের মধ্যে থেকে তিনি কোনো সুযোগ পাবেন কিনা সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু ফিলিপের মতো একজন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান অনায়াসেই আরসিবি শীর্ষক্রমে জায়গা পেতে পারেন বিশেষ করে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের আয়তনকে মাথায় রেখে।
দেবদত্ত পডিকল
ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেট গত প্রায় এক বছর ধরে কর্ণাটকের তরুণ ব্যাটসম্যান দেবদত্ত পডিকলের নাম সম্পূর্ণভাবে আলোচনার কেন্দ্র হয়ে রয়েছে। এই তরুণ ওপেনার নিজের প্রদর্শনের সকলের নজর নিজের দিকে আকর্ষিত করেছেন। ২০ বছরের দেবদত্ত সাম্প্রতিক পুরো ঘরোয়া মরশুমে দারুণ প্রদর্শন থেকেছে। দেবদত্ত এই ঘরোয়া মরশুমে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে মাত্র ১২টি ইনিংসেই ৫৮২ রান করেছেন, অন্যদিকে বিজয় হাজারে ট্রফিতেও দেবদত্ত সবচেয়ে বেশি ৬০৯ রান করতে সফল হয়েছে। গত বছর দেবদত্তকে আইপিএল নিলামে কিনেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। যদিও তাকে কোনো ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু এ বছর তার ঘরোয়া প্রদর্শনকে মাথায় রেখে তাকে দ্রুতই সুযোগ দেওয়া হতে পারে।