গত কয়েক মাসে টেস্ট ক্রিকেটে যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতীয় দল (Team India)। গত নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোনো রকম প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারে নি তারা। হেরেছিলো ০-৩ ফলে। ১২ বছর পর দেশের মাঠে হাতছাড়া হয়েছিলো কোনো টেস্ট সিরিজ। ২৪ বছর পর হোমগ্রাউন্ডে গায়ে লেগেছিলো হোয়াইটওয়াশের কলঙ্কের ছিটে। এরপর অস্ট্রেলিয়াতেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারে নি ‘মেন ইন ব্লু।’ ব্যাগি গ্রিনদের বিরুদ্ধে হারতে হয় ১-৩ ফলে। বদলে যায় বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির মালিকানা। এরপরের কয়েক মাসে বড়সড় রদবদল হয়েছে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) স্কোয়াডে। অবসর নিয়েছেন অশ্বিন, কোহলি, রোহিতের মত তিন মহারথী। কিন্তু তারপরেও নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারে নি ভারত (Team India)। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও প্রকাশ হয়ে পড়েছে তাদের দুর্বলতা। লিডসের সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারতে হয়েছে ৫ উইকেটের ব্যবধানে।
Read More: IND vs ENG 2nd Test: নেতৃত্ব পেয়েই মতিভ্রম শুভমান গিলের, দ্বিতীয় টেস্টের শুরুতেই মিললো প্রমাণ !!
পরীক্ষানিরীক্ষাই ডোবাচ্ছে ভারতকে-

সাম্প্রতিক ব্যর্থতার পর ক্রিকেটজনতার একটা বড় অংশ দুষছেন বর্তমান কোচ গৌতম গম্ভীরকে। কিন্তু পরিসংখ্যান ও তথ্য বিশ্লেষণ করতে বসলে দেখা যাবে যে বাস্তব ছবিটা বেশ আলাদা। গম্ভীর জমানা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই মুশকিলে ‘মেন ইন ব্লু।’ ফলাফল’কে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে তারকাদেরই একের পর এক ম্যাচে খেলিয়ে গিয়েছে ভারত (Team India)। পরবর্তী প্রজন্মকে তৈরি হওয়ারই সুযোগ দেয় নি বিসিসিআই। গত বছর দেশের মাঠে গুটিকয়েক টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন রজত পাটিদার (Rajat Patidar)। আহামরি পারফর্ম্যান্স করতে পারেন নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর রান থাকা সত্ত্বেও পরে আর ভেবেই দেখা হয় নি তাঁর কথা। একই কথা বলা চলে দেবদত্ত পাডিক্কালের (Devdutt Padikkal) ক্ষেত্রেও। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মাঠে দু’টি টেস্ট ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এরপর আর তাঁকে খেলানোর পথে হাঁটে নি টিম ইন্ডিয়া।
গম্ভীর কোচ হওয়ার পর এই সমস্যা যে বেড়েছে তা অবশ্য অস্বীকার করা সুযোগ নেই। বেঙ্গালুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ করেছিলেন সরফরাজ খান (Sarfaraz Khan)। কিন্তু পরের টেস্টে রান না পাওয়ায় বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর অস্ট্রেলিয়া সফরে ডাক পেয়েছিলেন সরফরাজ। একটি ম্যাচেও সুযোগ পান নি তিনি। পরে ইংল্যান্ড সফর থেকে ছেঁটেই ফেলা হয়েছে ডান হাতি ব্যাটারকে। অস্ট্রেলিয়া সফরে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন ধ্রুব জুরেল (Dhruv Jurel)। রান না পাওয়ায় আর ভেবে দেখা হয় নি তাঁকে। ইংল্যান্ড সফরেও পালটায় নি ছবিটা। একটি মাত্র ব্যর্থতার পরেই বাদ পড়েছেন শার্দুল ঠাকুর, সাই সুদর্শন’রা। ক্রিকেটারদের যদি নিজেদের মেলে ধরার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগই না দেওয়া হয় তাহলে তাঁরা আন্তর্জাতিক আঙিনায় ছন্দ কি করে খুঁজে পাবেন? ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।
বোলিং বিভাগেও রয়েছে একই সমস্যা-

পরবর্তী প্রজন্মের তারকাদের তুলে আনার ক্ষেত্রে দেরী করে ফেলেছে টিম ইন্ডিয়া (Team India), দিনকয়েক আগে একটি ইউটিউব ভিডিওতে এমনটাই বলতে শোনা গিয়েছে প্রাক্তন অলরাউন্ডার ইরফান পাঠানকেও (Irfan Pathan)। তিনি বোলিং বিভাগের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। জানিয়েছেন, “রবি শাস্ত্রী ও রাহুল দ্রাবিড় জমানায় কি মানসিকতা ছিলো? ওরা সেরা তারকাদের ব্যবহার করে ফলাফল চাইতেন। শাস্ত্রীর সময় বুমরাহ, শামি, উমেশ যাদব, ঈশান্ত শর্মা’রা ছিলেন। ওরাই অধিকাংশ ম্যাচ খেলতেন। একটা-দু’টো ম্যাচে নভদীপ সাইনি খেলেছেন। টি নটরাজন’ও অস্ট্রেলিয়াতে খেলেছিলেন। কিন্তু তারপর আর ওকে কোথাওই দেখা যায় নি। তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় নি। রাহুল দ্রাবিড়ের সময়েও বুমরাহ, শামি, সিরাজরা বেড়ে উঠেছেন। ওরা জয়দেব উনাদকাটের দিকেও তাকিয়েছিলো। কিন্তু তরুণ ফাস্ট বোলারদের গুরুত্ব দেওয়া হয় নি।”