IND vs NZ: ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ হেরেছিলো টিম ইন্ডিয়া। মন্টি পানেসার ও গ্রেম সোয়ানের স্পিনের জালে আটকা পড়েছিলো মহেন্দ্র সিং ধোনি’র দল। তার পর টানা ১২ বছর কোনো প্রতিপক্ষ ঘরের মাঠে হারাতে পারে নি ভারতকে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা হোক বা ইংল্যান্ড-ফিরেছে পরাস্ত হয়ে। অবশেষে ফাটল ধরলো সেই দুর্ভেদ্য দুর্গে। যে নিউজিল্যান্ড মাসখানেক আগে পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঘূর্ণি পিচে নাস্তানাবুদ হয়ে দেশে ফিরেছিলো, বেঙ্গালুরু ও পুণেতে তারাই ভারতের বিরুদ্ধে (IND vs NZ) রীতিমত দাদাগিরি দেখিয়ে ছিনিয়ে নিলো সিরিজ। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ম্যাট হেনরি, উইলিয়াম ও রোর্কদের পেস সামলাতে গিয়ে কেঁপে গিয়েছিলো ভারতীয় ব্যাটিং, আর পুণেতে রোহিত-বিরাটদের লজ্জার সম্মুখীন করলো স্যান্টনার-আজাজদের স্পিন। ১১৩ রানের ব্যবধানে হেরে মুখ পুড়লো টিম ইন্ডিয়ার।
Read More: IND vs NZ 2nd Test: MS ধোনি’কে মনে করালেন ঋষভ পন্থ, পুণেতে সিরিজ হারের দোরগোড়ায় ভারতীয় দল !!
স্যান্টনারের স্পিনেই ধ্বংস ভারত-
আজ সকালটা ছিলো টিম ইন্ডিয়ারই (Team India)। ১৯৮/৫ অবস্থায় ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডকে বেশী দূর এগোতে দেন নি অশ্বিন-জাদেজা। টম ব্লান্ডেল (Tom Blundell) ও গ্লেন ফিলিপসের জুটি যখন ভাঙে তখন কিউইদের স্কোরবোর্ডে ২৩১ রান। এরপর ২৮ রানের মধ্যেই বাকি চার ব্যাটারকে সাজঘরে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন ভারতীয় স্পিনাররা। টিম সাউদীকে আউট করেন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। ব্লান্ডেল, স্যান্টনার ও আজাজ প্যাটেল ফেরেন জাদেজার বলে। উইলিয়াম ওরোর্ক রান-আউট হওয়ায় ২৫৫ রানে যবনিকা পড়ে কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংসে। ৪৮ করে অপরাজিত থাকেন গ্লেন ফিলিপস। ‘মেন ইন ব্লু’র জন্য জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৫৯ রান। পুণের পিচে গত দুটি টেস্টে চতুর্থ ইনিংসের গড় স্কোর ছিলো ১০৭। তার তিন গুণেরও বেশী রানের ‘টার্গেট’ নিয়ে ব্যাট করতে নামা ভারত শুরু থেকেই ছিলো ব্যাকফুটে।
প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বাম হাতি অফস্পিনার মিচেল স্যান্টনার (Mitchell Santner)। দ্বিতীয় ইনিংসেও টিম ইন্ডিয়ার ত্রাস হয়ে উঠলেন তিনি। শুরুতেই তুলে নেন রোহিত শর্মা’র উইকেট। ভারতীয় অধিনায়কের খারাপ ফর্ম অব্যাহত। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন শূন্য। আজ আউট হলেন ১৬ বলে ৮ রান করে। এরপর যশস্বী জয়সওয়ালকে (Yashasvi Jaiswal) সাথে নিয়ে জুটি গড়েছিলেন শুভমান গিল। মধ্যাহ্নভোজের আগে আর উইকেট হারায় নি টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনেই ফের আঘাত হানেন স্যান্টনার। শুভমানের ব্যাটের কোণ স্পর্শ করে বল জমা পড়ে ড্যারিল মিচেলের হাতে। ৩১ বল ২৩ করে আউট হন তিনি। প্রতিরোধের মুখ হয়ে উঠেছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। কিন্তু স্যান্টনারের ঘূর্ণি ফেরালো তাঁকেও। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে (IND vs NZ) ৬৫ বলে ৭৭ করে থামতে হয় তাঁকে।
ঘূর্ণির জালে আটকা পড়লো টিম ইন্ডিয়া-
“ভারতীয়রা স্পিনটা ভালো খেলে, এই কথাটার আর কোনো ভিত্তি নেই। শচীন, সৌরভ বা দ্রাবিড়দের জমানা আর নেই। এখন ভালো মানের স্পিনের সামনে ভারতীয়রাও বাকিদের মত চাপে পড়ে”, গতকালই মন্তব্যটি করেছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সাইমন ডুল (Simon Doull)। আজ তাঁর কথাই সত্যি হতে দেখা গেলো পুণের বাইশ গজে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রান-আউট হয়ে ফেরেন ঋষভ পন্থ। বাকি নয়টি উইকেটটি গেলো কিউই স্পিনারদের ঝুলিতে। কোহলির (Virat Kohli) বিরুদ্ধে গতির তারতম্যে বাজিমাত করে গেলেন স্যান্টনার (Mitchell Santner)। তাঁর স্কিড করে দ্রুত ভিতরের দিকে আসা ডেলিভারি সামলাতে না পেরে লেগ বিফোর হলেন ভারতীয় মহাতারকা। করেন ১৭। বোলিং-এর মত ব্যাট হাতেও চেষ্টা করেছিলেন ওয়াশিংটন। কিন্তু ঝড়ের মুখে সেই প্রতিরোধও যথেষ্ট হলো না। ২১ করে গ্লেন ফিলিপসকে উইকেট উপহার দেন তিনি।
বোল্ড হন সরফরাজ (Sarfaraz Khan)। স্যান্টনারের ডেলিভারির লাইন’ই বুঝতে পারেন নি। তাঁর বাড়িয়ে দেওয়া ব্যাটের নাগাল এড়িয়ে বল ভেঙে দেয় অফস্টাম্প। ৩৯ রানের জুটি গড়েছিলেন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin) ও জাদেজা (Ravindra Jadeja)। কিন্তু বাংলাদেশ ম্যাচের স্মৃতি ফেরার আগেই তা ভাঙেন স্যান্টনার (Mitchell Santner)। অশ্বিনকে ফিরিয়ে এই ম্যাচে ১৩ উইকেটের মালিক হলেন তিনি। কেরিয়ারের সেরা বোলিং-টা করলেন পুণের বাইশ গজে। আকাশ দীপ’কে আউট করেন আজাজ প্যাটেল (Ajaz Patel)। ৪২ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিউই স্পিনারের শিকার হন রবীন্দ্র জাদেজাও। এগারো নম্বরে নামা জসপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah) শেষলগ্নে ৪ বলে ১০ করলেও যথেষ্ট ছিলো না তা। ২৪৫-এর বেশী এগোতে পারলো না টিম ইন্ডিয়া। এড়ানো গেলো না সিরিজ হার।