IND vs ENG: হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টিম ইন্ডিয়া (Team India) মুখোমুখি হয়েছিলো ইংল্যান্ডের। ঘরের মাঠে সিরিজের প্রথম টেস্টে ‘ফেভারিট’ হিসেবেই শুরু করেছিলেন রোহিত শর্মা, জসপ্রীত বুমরাহ’রা। খেলার প্রথম দুই দিন দাপট’ও দেখিয়েছিলো ‘মেন ইন ব্লু।’ টসজয়ী ইংল্যান্ড প্রথম ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। তাদের ইনিংস ২৪৬ রানের মধ্যেই গুটিয়ে দেন ভারতীয় বোলাররা। অশ্বিন-জাদেজা’র স্পিনের সাথে কার্যকরী হয় জসপ্রীত বুমরাহ’র (Jasprit Bumrah) পেস আক্রমণ’ও। যশস্বী জয়সওয়াল, কে এল রাহুল ও রবীন্দ্র জাদেজা’র দুর্দান্ত ইনিংস ভারতকে পৌঁছে দেয় ৪৩৬ রানে। ১৯০ রানের বিশাল লিড নিয়ে চালকের আসনে জায়গা করে নিয়েছিলো ভারতই।
কিন্তু খেলার গতিবিধি ঘুরে যায় ম্যাচের তৃতীয় দিন থেকে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসেও বহুচর্চিত বাজবল পন্থা থেকে সরে নি ইংল্যান্ড। আগ্রাসী ব্যাটিং করতে দেখা যায় বেন ডাকেট, জ্যাক ক্রলিকে। দুই ওপেনার ফেরার পর অবশ্য খানিক চাপে পড়েছিলো তারা। রুট, বেয়ারেস্টো, স্টোকসদের মত তারকাদের দ্রুত সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছিলেন ভারতীয় বোলাররা। এরপর ঢাল হয়ে দাঁড়ান অলি পোপ (Ollie Pope)। ১৯৬ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন তিনি। সঙ্গী হিসেবে পান বেন ফোকস, রেহান আহমেদ, টম হার্টলিদের। শেষমেশ ইংল্যান্ড থামে ৪২০ রানে। ২৩১ রানের লক্ষ্য নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে নেমে টম হার্টলির (Tom Hartley) স্পিনের কারসাজিতে মাত ভারতীয় দল। ২০২ রানেই গুটিয়ে যায় ইনিংস। ২৮ রানের ব্যবধানে চমকপ্রদ জয় ছিনিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। পরিচিত বাইশ গজেও কেন হারতে হলো ভারতকে? তদন্তে উঠে আসছে তিনটি কারণ।
Read More: IND vs ENG: নিজামের শহরে বাজবলের জয়জয়কার, পোপ-হার্টলি যুগলবন্দীতে ২৮ রানের ব্যবধানে পরাজিত টিম ইন্ডিয়া !!
ভারতের গা ছাড়া মনোভাব-
হায়দ্রাবাদে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের জন্য ক্রিকেটারদের গা ছাড়া মনোভাবকে অনেকাংশে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিসংখ্যান জানাচ্ছিলো যে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এর আগে ৫ টেস্টের মধ্যে ৪টিতে জিতেছে ভারত। মাত্র একটি খেলা ছিলো অমীমাংসিত। এই পরিসংখ্যান তাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিলো কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। যেখানে ইংল্যান্ড আগাগোড়া আগ্রাসনে আস্থা রেখে বাজিমাত করে গেলো ভারতের বাইশ গজে, সেখানে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা’কে (Rohit Sharma) বেশ রক্ষণাত্মক অধিনায়কত্ব করতে দেখা গেলো। নেতা রোহিতের ফিল্ডিং সাজানোও রয়েছে আতসকাঁচের নীচে।
ভারত সহজেই খুচরো রান নিতে দিলেন পোপ (Ollie Pope), হার্টলিদের। যা পরবর্তীতে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরলো। একই সঙ্গে উল্লেখ করতে হয় টিম ইন্ডিয়ার নড়বড়ে ফিল্ডিং-এর কথাও। সাম্প্রতিক অতীতে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডিং দল বলা হয় ভারতকে। কিন্তু হায়দ্রাবাদে একাধিকবার মিসফিল্ড দেখা গেলো ভারতীয় ক্রিকেটারদের থেকে। ডাইভ মেরেও চার রুখতে না পারায় রোহিত শর্মা ও রবীন্দ্র জাদেজার রোষানলেও পড়তে হলো রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে (Ravichandran Ashwin)। অলি পোপ যখন ১১০ রানে, তখন পয়েন্টে তাঁর ক্যাচ ফেলেন অক্ষর প্যাটেল (Axar Patel)। পরবর্তীতে কে এল রাহুল’ও পোপের ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন। এই সবকিছুই বিরুদ্ধে গিয়েছে ভারতের।
স্পিন খেলার ব্যর্থতা-
উপমহাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে একটা সময় স্পিন খেলার সহজাত দক্ষতা দেখা যেত। কিন্তু টি-২০’র যুগে তাতে বদল এসেছে অনেকটাই। সাম্প্রতিক সময়ে বারবার স্পিন ত্রাস হয়ে উঠেছে ভারতীয় ব্যাটারদের সামনেই। পরিসংখ্যানও বলছে তেমনটাই। ২০১৩ থেকে ঘরের মাঠে যে কয়টি টেস্ট ম্যাচে জয় পেয়েছে ভারত সেখানে গড়ে বল ঘুরতে দেখা গিয়েছে ৩.৫ ডিগ্রী করে। পক্ষান্তরে যে কয়টি ম্যাচে ভারত হেরেছে, সেখানে গড়ে বল ঘুরেছে ৪.৭ ডিগ্রী। অর্থাৎ অতিরিক্ত স্পিন হলে সমস্যায় পড়তে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে। গত বছর ইন্দোর টেস্টে ভারতীয় ব্যাটিং-কে নাস্তানাবুদ করতে দেখা গিয়েছিলো নাথান লিয়ঁ’কে। গতকাল বাম হাতি স্পিনার টম হার্টলির (Tom Hartley) বিরুদ্ধে নতজানু হলো টিম ইন্ডিয়া।
নবাগত হার্টলি (Tom Hartley) প্রথম ইনিংসে বিশেষ সফল হন নি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে চমৎকার বোলিং করলেন তিনি। নিজের উচ্চতাকে বোলিং-এর সময় কাজে লাগান তিনি। হায়দ্রাবাদের ঘূর্ণি পিচে তাঁর বোলিং কাজটা সহজ করে দিলো ইংল্যান্ডের সামনে। হার্টলির অতিরিক্ত বাউন্স সামলাতে গিয়েই শর্ট লেগ ও সিলি মিড অফে অলি পোপের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন যশস্বী জয়সওয়াল ও শুভমান গিল (Shubman Gill)। আচমকা নীচু থেকে যাওয়া বলের মোকাবিলা করতে না পেরে লেগ বিফোর উইকেট হলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ১১৯ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ভারতকে লড়াইতে রেখেছিলেন শ্রীকার ভরত ও রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। তাঁদের দুজনকেও ঘূর্ণিতে মাত করেই সাজঘরে পাঠান হার্টলি। অভিষেক ম্যাচে ৬২ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট নিলেন তিনি। গত ৯১ বছরে ইংল্যান্ডের হয়ে কোনো স্পিনারের যা সেরা বোলিং পরিসংখ্যান।
বিরাট কোহলির অনুপস্থিতি-
হায়দ্রাবাদে প্রথম ভারত বনাম ইংল্যান্ড (IND vs ENG) টেস্টে টিম ইন্ডিয়াকে সমস্যায় ফেললো তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলির (Virat Kohli) অনুপস্থিতিও। প্রস্তুতি শিবিরে যোগ দিলেও ম্যাচ শুরুর মাত্র দুই দিন আগে সরে দাঁড়িয়েছিলেন কোহলি। ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই-এর তরফে জানানো হয় যে ব্যক্তিগত কারণে মাঠে নামতে পারছেন না তিনি। গত ক্যালেন্ডার বর্ষে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রানের মালিক না থাকায় মুশকিলে পড়তে হলো দলকে। চার নম্বরে কোহলির (Virat Kohli) শূন্যস্থান পূরণের জন্য ভারত বেছে নিয়েছিলো কে এল রাহুলকে। প্রথম ইনিংসে তিনি ৮৬ রান করলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে চাপের মুখে মাত্র ২২ করে জো রুটের বলে লেগ বিফোর উইকেট হলেন।
চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করার ব্যাপারে কোহলি সিদ্ধহস্ত। তাঁর অভিজ্ঞতাকে নিঃসন্দেহে মিস করেছে ভারতীয় দল। বর্তমান ভারতীয় দলে স্পিনের বিরুদ্ধে অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট। তিনি মিডল অর্ডারে থাকলে আদৌ টম হার্টলির (Tom Hartley) ঘূর্ণি এতটা কার্যকরী হত কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। একই সাথে বিরাটের সহজাত আগ্রাসন’ও খানিক সুবিধা করে দিতে পারত দলকে। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে সফলতম টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তাঁর নেতৃত্বে ২০১৪ থেকে ২০২২-এর মধ্যে ঘরের মাঠে প্রায় দুর্ভেদ্য ছিলো ভারত। সেই অভিজ্ঞতাও দলকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করায় সাহায্য করতে পারত বিরাট কোহলিকে।