IND vs ENG: ‘শেষ হয়েও হইলো না শেষ,’ ছোটগল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ওভাল টেস্টও (IND vs ENG) যেন সেই ছোট গল্পেরই মত। ব্যাট-বলের লড়াই যখন এগোচ্ছে জমজমাট পরিণতির দিকে ঠিক তখনই আকাশ ভেঙে এমন বৃষ্টি নামলো লন্ডনে যে আজকের মত ভেস্তেই গেলো খেলা। লিডস, এজবাস্টন, লর্ডস বা ম্যঞ্চেস্টারে পঞ্চম দিন অবধি গড়িয়েছে খেলা। বরুণদেবের সৌজন্যে ওভালেও অন্যথা হলো না তার।
দিনের প্রথম সেশনে বেন ডাকেটের (Ben Duckett) উইকেট তুলতে সক্ষম হয় ভারত। বাম হাতি ওপেনার ফিরলেও রুট ও ব্রুকের জুটি ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় ‘মেন ইন ব্লু’কে। ১৯৫ রানের জুট গড়ে ইংল্যান্ডের জয় কার্যত নিশ্চিত করেই ফেলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘোরে চা পানের বিরতির পর। লাগাতার কয়েকটি উইকেট তুলে লড়াইতে ফেরে ভারত (Team India)। চতুর্থ দিনের শেষে লক্ষ্য থেকে ৩৫ রান দূরে ইংল্যান্ড। ভারতের চাই ৩ বা ৪ উইকেট। কি হবে ফলাফল? অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ক্রিকেটজনতা।
Read More: IND vs ENG 5th Test: লর্ডসের পর ওভাল, সিরাজের অসতর্কতায় ফের তরী ডুবলো টিম ইন্ডিয়ার !!
রুট-ব্রুকের জুটি চিন্তায় ফেলেছিলো ভারত’কে-

চতুর্থ দিনের সকালে উইকেটের জন্য ৯ ওভার অপেক্ষা করতে হয় ‘মেন ইন ব্লু।’ ২৩তম ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ও কে এল রাহুলের কর্ণাটক কানেকশন সাফল্য এনে দেয় তাদের। ৫৪ করে সাজঘরে ফেরেন বেন ডাকেট। থ্রি লায়ন্স অধিনায়ক অলি পোপকেও (Ollie Pope) প্রথম সেশনেই ফেরান মহম্মদ সিরাজ। ২৭-এর বেশী এগোতে পারেন নি তিনি। জোড়া সাফল্যের পর ভারতের সামনে সুযোগ ছিলো প্রতিপক্ষের উপর চাপ বাড়ানোর। প্রসিদ্ধ-সিরাজ ও আকাশ দীপ’কে নিয়মিত ব্যবহারও করেন অধিনায়ক শুভমান। কিন্তু জো রুট ও হ্যারি ব্রুকের (Harry Brook) ব্যাটে প্রতিহত হয় যাবতীয় প্রচেষ্টা। ৩৫তম ওভারে আচমকাই এসে গিয়েছিলো সুযোগ। প্রসিদ্ধের বলে ব্রুকের পুল শট লং লেগে দাঁড়ানোর সিরাজের হাতে জমাও পড়ে। কিন্তু ভারসাম্য না রাখতে পেরে বাউন্ডারি রোপ ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। আউট হওয়ার পরিবর্তে ছয় রান পান ইংল্যান্ডের সহ-অধিনায়ক।
ব্রুক যখন দ্বিতীয় জীবন পান, তখন তিনি ব্যাট করছিলেন ১৯ রানে। এরপর রুদ্রমূর্তি ধরেন তিনি। দ্বিতীয় সেশনে ভারতীয় বোলিং নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করতে দেখা যায় বিশ্বর্যাঙ্কিং-এ দুই নম্বরে থাকা তারকাকে। মাত্র ৮৯ বলে পেরিয়ে যান শতকের গণ্ডী। এই নিয়ে ৩০টি টেস্টে দশম শতরান হয়ে গেলো তাঁর। ৯৮ বলে ১১১ করে শেষমেশ থামেন ব্রুক। আকাশ দীপের বলে তাঁর ক্যাচটি ধরেন মহম্মদ সিরাজই। চা পানের বিরতিতে সাজঘরে ফেরার সময় জো রুট (Joe Root) অপরাজিত ছিলেন ৯৮ রানে। তাঁর সঙ্গী ছিলেন জেকব বেথেল। তৃতীয় সেশনে রুট প্রত্যাশামতই ১০০ পেরোন। দেশের মাটিতে এই নিয়ে ২৪তম শতক তাঁর।টেস্ট কেরিয়ারে শতরানের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৯। কিন্তু এরপর স্যাঁতস্যাঁতে, মেঘলা আবহাওয়ায় যেন নতুন প্রাণ পায় ভারতীয় পেস আক্রমণ। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বদলে যায় ম্যাচের (IND vs ENG) গতিপথ।
অন্তিম সেশনে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন-

লিডস বা এজবাস্টনে হতাশ করেছিলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা (Prasidh Krishna)। তাঁকে তাই লর্ডস ও ম্যাঞ্চেস্টারে বাদও দিয়েছিলো ভারতীয় দল। কিন্তু ওভালে ফের সুযোগ পেয়ে দক্ষতার প্রমাণ রাখছেন কর্ণাটকের ফাস্ট বোলার। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। আজও তৃতীয় সেশনে তাঁর হাত ধরেই লড়াইতে ফেরে টিম ইন্ডিয়া (Team India)। ৭১তম ওভারে জেকব বেথেলের (Jacob Bethell) স্টাম্প ছিটকে দেন তিনি। এরপর ৭৩তম ওভারে তাঁর শিকার হন জো রুট (Joe Root)। ১০৫ করে তিনি ফিরতেই পায়ের তলার মাটি খানিক শক্ত হয় শুভমানবাহিনী’র।
ইংল্যান্ডের স্কোর যখন ৬ উইকেটের বিনিময়ে ৩৩৯, তখন ফের বৃষ্টি নামে। পরে তা থামলেও আউটফিল্ড ভিজে থাকার কারণে খেলা শুরু করা যায় নি আর। ম্যাচ (IND vs ENG) গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে। চোটের কারণে ক্রিস ওকস (Chris Woakes) অনিশ্চিত। ফলে তিনটি উইকেট নিলেই বাজিমাত করতে পারে ভারত। সিরাজ (Mohammed Siraj), আকাশ দীপ বা প্রসিদ্ধ (Prasidh Krishna) আগামীকাল সকালে সেই তিনটি ঘাতক ডেলিভারি কি বের করতে পারবেন নিজেদের অস্ত্রাগার থেকে? আপাতত সেই প্রার্থনাই করছেন ভারতীয় সমর্থকেরা।