IND vs ENG: রাজকোটের নিরঞ্জন শাহ স্টেডিয়ামে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ভারত বনাম ইংল্যান্ড (IND vs ENG) সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। মার্ক উডের গতি সামলাতে না পেরে শুরুতেই ফেরেন শুভমান গিল ও যশস্বী জয়সওয়াল। পরে রজত পতিদার আউট হন টম হার্টলির বলে। এরপর ভারত ধাক্কা সামলে ওঠে রোহিত শর্মা ও রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাটে ভর করে। শতরান করেছিলেন দুজনেই। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে চমৎকার অর্ধশতক করেন সরফরাজ খান। দিনের শেষে ভারত ৫ উইকেটের বিনিময়ে ৩২৬ রান যোগ করেছিলো স্কোরবোর্ডে। ইনিংসের শুরুতে ব্যাটিং দুরহ হয়ে উঠেছিলো, খেলা গড়ানোর সাথে সাথে বাইশ গজ যে অনেকখানি ব্যাটিং সহায়ক হয়ে উঠেছে, তার আভাস পাওয়া গিয়েছিলো গতকালই। আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেও বদলায়নি পিচের চরিত্র।
দিনের শুরুটা গিয়েছিলো ইংল্যান্ডের পক্ষেই। খেলার গতির বিপরীতেই ফিরে যান রবীন্দ্র জাদেজা। আউট হন গতকাল নৈশপ্রহরী হিসেবে নামা কুলদীপ যাদব’ও। এরপর ইনিংসের হাল ধরেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন ও ধ্রুব জুড়েল। অভিষেককারী জুড়েল আজ নজর কাড়লেন ব্যাট হাতে। তাঁর বেশ কিছু ক্যাচ পড়লো ঠিকই, কিন্তু বেশ কিছু চমৎকার শট মারেন তিনি। দিনের দ্বিতীয় সেশনে জুটি গড়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যান অশ্বিন-জুড়েল জুটি। শেষলগ্নে মারমুখী ইনিংস খেলেন জসপ্রীত বুমরাহ’ও। শেষমেশ ভারতের ইনিংস শেষ হয় ৪৪৫ রানে। কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ‘বাজবল’ স্ট্র্যাটেজি থেকে রাজকোটেও সরে নি ইংল্যান্ড। ক্রলি-ডাকেটের ওপেনিং জুটি ঝড় তোলে শুরু থেকেই। দেড় সেশন ব্যাটিং করেই স্কোরবোর্ডে ২০৭ রান তুলে ফেলেছে তারা। খুইয়েছে কেবল ২ উইকেট। বেন ডাকেটের ঝোড়ো শতরান চিন্তায় রেখেছে ভারতকে।
Read More: IND vs ENG: “এই ব্যজবলকে রোখা কিন্তু…”, দ্বিতীয় দিনে বেন ডাকাটের মারকাটারি শতরান দেখে রোহিতদের ট্রোল নেটিজেনদের !!
অভিষেকে সপ্রতিভ জুড়েল, ক্যামিও বুমরাহ’র-
গতকাল দিনের শেষে ১১০ রান করে ক্রিজে ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। আর কুলদীপ যাদবের ঝুলিতে ছিলো ৪ রান। আজ সকালে বেশীদূর এগোতে পারেন নি দুজনেই। প্রথমে ফেরেন কুলদীপ। জেমস অ্যান্ডারসনের বলে তিনি ধরা পড়েন বেন ফোকসের হাতে। গতকালের স্কোরের সাথে এক রান’ও যোগ করতে পারেন নি তিনি। জাদেজার ঝুলিতে আজ যোগ হয় মাত্র ২ রান। তিনি আউট হন জো রুটের বলে। ৩৩১ রানের মাথায় ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেট হারিয়েছিলো ভারত। এরপর হাল ধরেন ধ্রুব জুড়েল ও রবিচন্দ্রণ অশ্বিন।গতকাল নৈশপ্রহরী হিসেবে কুলদীপ নেমেছিলেন। ফলে ব্যাটিং অর্ডারে অষ্টম স্থানে নেমে যেতে হয়েছিলো জুড়েলকে। আজ সকালে প্রথমবার টেস্টের আসরে ব্যাট হাতে নামলেও বেশ সপ্রতিভ লাগলো তাঁকে। মার্ক উডের ১৪৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় করা ডেলিভারিকে অনায়াস দক্ষতায় আপার কাট করে উড়িয়ে দিলেন মাঠের বাইরে।
অষ্টম উইকেটের জুটি জুড়েল ও অশ্বিন যোগ করেন ৭৭ রান। ৬টি চারের সাহায্যে ৩৭ করেন অশ্বিন। শেষমেশ রেহান আহমেদের বলে তিনি অ্যান্ডারসনের হাতে ধরা পড়েন। ইংল্যান্ডের ফিল্ডিং চলতি টেস্টে তুলে দিয়েছে প্রশ্নচিহ্ন। গতকাল রোহিত শর্মার ক্যাচ ফস্কেছিলো বেন স্টোকসের দল। আজ দুইবার ধ্রুব জুড়েলকে আউট করার সুযোগ হারায় তারা।শেষে রেহান আহমেদের বলে বেন ফোকসের হাতে ধরা পড়েন তিনি। করেন ৪৬। ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেককারী দুই ক্রিকেটার হিসেবে ৫০-এর বেশী রান করে নজির গড়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও রাহুল দ্রাবিড়। গতকাল সরফরাজ অর্ধশতক করলেও আজ জুড়েল ৪ রান আগেই থেমে যাওয়ায় সেই রেকর্ডের পুনরাবৃত্তি হলো না আর। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী মেজাজে আজ দেখা গেলো জসপ্রীত বুমরাহকেও। তাঁর ২৮ বলে ২৬ রানের ইনিংস ভারতকে পৌঁছে দেয় ৪৪৫ রানে।
বিধ্বংসী ডাকেট, ৫০০’র শৃঙ্গজয় অশ্বিনের-
রাজকোটের ব্যাটিংবান্ধব পিচে ইংল্যান্ড যে ব্যাট হাতে গুটিয়ে থাকবে না সেই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন সকলেই। বাস্তবেও দেখা গেলো সেই চিত্রই। প্রথম ওভার থেকেই ‘বাজবল’ অবতার দেখা গেলো দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেটের ব্যাটিং-এ। আক্রমণের সিংহভাগটাই এসেছে ডাকেটের ব্যাট থেকে। গত দুটি টেস্টে শুরুটা ভালো করলেও মুহূর্তের ভুলে উইকেট হারিয়ে বড় ইনিংস খেলা হয় নি তাঁর। আজ আর সেই ভুলচুক করেন নি ডাকেট। আগাগোড়া বুমরাহ, সিরাজ, অশ্বিন, জাদেজাদের দুর্দান্ত ভাবে সামলে ঝোড়ো শতরান করেন তিনি। দিনের শেষে ১১৮ বলে তাঁর সংগ্রহ ১৩৩ রান। মেরেছেন ২১টি চার ও ২টি ছক্কা। আগামীকাল তাঁর হাত ধরেই রানের ইমারত গড়তে চাইবে ইংল্যান্ড।
একপ্রান্তে ডাকেট যখন রানের গতি বাড়াচ্ছিলেন, তখন অপরপ্রান্ত আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিলেন ক্রলি। কিন্তু অশ্বিনের লেগস্টাম্পে পড়া একটি বলে স্যুইপ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তিনি। ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে তিনি ধরা পড়েন রজত পতিদারের হাতে। আজ ১৫ রান করেন ক্রলি। তাঁকে ফিরিয়ে রেকর্ড বইয়ের পাতায় নাম তুলে নিলেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে টেস্টে ৫০০ উইকেটে ক্লাবে সামিল হলেন তিনি। মুথাইয়া মুরলীধরণের পর দ্বিতীয় দ্রুততম ক্রিকেটার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি। সবচেয়ে কম বল করে ৫০০ উইকেট নিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সগ্রা। তার পরেই থাকবে অশ্বিনের নাম। ক্রলি ফেরার পর ডাকেটের সাথে জুটি বেঁধেছিলেন অলি পোপ। তাঁকে বড় ইনিংস খেলতে দিলেন না মহম্মদ সিরাজ। ৩৯ করে ফেরেন তিনি। দিনের শেষে ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ২০৭/২। ডাকেটের সঙ্গে ক্রিজে অপরাজিত রয়েছেন জো রুট।