IND vs ENG: টি-২০’র পর ওয়ান ডে’তেও ইংল্যান্ডকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়লো না টিম ইন্ডিয়া (IND vs ENG)। নাগপুরে জয় দিয়ে দৌড় শুরু করেছিলো তারা। আজ কটকেও প্রতিপক্ষকে রীতিমত দুরমুশ করেই মাঠ ছাড়লো রোহিত শর্মার দল। টসে জিতে প্রথম ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ইংল্যান্ড। শুরুটা ভালোই করেছিলো তারা। রান পান বেন ডাকেট, জো রুট, লিয়াম লিভিংস্টোনরা। ৩০৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা স্বাগতিক দেশকে ছুঁড়ে দিয়েছিলো তারা। রান তাড়া করতে নেমে অবশ্য অনবদ্য পারফর্ম্যান্স ‘মেন ইন ব্লু’র। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (CT 2025) ঠিক আগে জ্বলে উঠলো অধিনায়কের ব্যাট। নজর কাড়লেন শুভমান গিল’ও। বিরাট কোহলি, কে এল রাহুলরা ব্যর্থ হলেও জয় পেতে সমস্যা হয় নি ভারতের। শ্রেয়স আইয়ার, অক্ষর প্যাটেলের কার্যকরী ইনিংস লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় তাদের। প্রথম ম্যাচের মত দ্বিতীয় ম্যাচেও ৪ উইকেটের ব্যবধানেই এলো জয়।
Read More: “বল করলেই আউট…” ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যার্থ বিরাট কোহলি, সমাজ মাধ্যমে হলেন ট্রোলের শিকার !!
১) ধুন্ধুমার সূচনা ইংল্যান্ড ওপেনারদের-
ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণের পথে হাঁটে ইংল্যান্ড। দুই ওপেনার বেন ডাকেট ও ফিল সল্টকে রুখতে আজ বেশ কাঠখড় পোড়াতে হলো টিম ইন্ডিয়াকে। প্রথম দশ ওভারে ৭৫ রান স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলেছিলো সফরকারী দল। শেষমেশ একাদশতম ওভারে সাফল্যের মুখে দেখে ‘মেন ইন ব্লু।’ ৮১ রানের মাথায় ভাঙে ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি। প্রাক্তন কেকেআর সতীর্থ ফিল সল্টকে ফেরান বরুণ চক্রবর্তী (Varun Chakravarthy)। তামিলনাড়ুর রহস্য স্পিনার পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটে অভিষেক করলেন আজ।
২) অর্ধশতক ডাকেটের-

সল্ট আউট হওয়ার পরেও আক্রমণ থেকে সরেন নি বেন ডাকেট (Ben Duckett)। ৩৭ বলে অর্ধশতকের গণ্ডী পেরিয়েছিলেন তিনি। ষোলোতম ওভারে যখন আউট হলেন তখন তাঁর নামের পাশে ৫৬ বলে ৬৫ রান। একটিও ছক্কা মারেন নি তিনি। কিন্তু ১০টি বাউন্ডারি এসেছে বাম হাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে। ইংল্যান্ড ইনিংসের ভিত গড়ে দিয়ে যান তিনিই।
৩) রানে ফিরলেন জো রুট-

২০১৯-এর ওডিআই বিশ্বকাপের পর থেকে পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটে ক্রমেই নীচের দিকে গিয়েছে জো রুটের (Joe Root) পারফর্ম্যান্সের গ্রাফ। আজ ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন তিনি। মাঝের ওভারগুলোয় সাবলীল ভাবে স্পিন সামলালেন। আক্রমণ করলেন পেস বোলারদের। ইংল্যান্ড কিংবদন্তির ব্যাট থেকে এলো চমৎকার অর্ধশতরান। প্রথমে হ্যারি ব্রুক (৩১) ও পরে অধিনায়ক জস বাটলারের (৩৪) সাথে জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। ৬৯ রানের মাথায় রবীন্দ্র জাদেজাকে কভারের উপর দিয়ে চিপ করতে গিয়ে ধরা পড়েন বিরাট কোহলির হাতে।
৪) ধস সামলে ঝড় তুললেন লিভিংস্টোন-
অল্প সময়ের ব্যবধানে বাটলার ও রুট সাজঘরে ফেরার পর ছোটোখাটো ধস নেমেছিলো ইংল্যান্ডের ইনিংসের। ৬ রান করে আউট হন জেইমি ওভারটন, ৩-এর বেশী এগোতে পারেন নি গাস অ্যাটকিনসন। কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে উদ্ধার করেন লিয়াম লিভিংস্টোন। এক প্রান্তে স্কোরবোর্ডকে সচল রেখেছিলেন তিনি। পঞ্চাশতম ওভারে আউট হন ৩২ বলে ৪১ করে। ইংল্যান্ড’কে ৩০০ পেরোতে সাহায্য করলেন আদিল রশিদ’ও। তারকা লেগস্পিনার আজ মাত্র ৫ বলে ১৪ রানের জমজমাট ক্যামিও খেলেন।
৫) ৩০৪ রানে থামে ইংল্যান্ড-

কটকের বারবাটি স্টেডিয়ামে ৪৯.৫ ওভারে ৩০৪ রানে শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সফলতম নিঃসন্দেহে রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja)। তিনি ১০ ওভারে ৩৫ রান খরচ করে তুলে নেন ৩ উইকেট। হার্দিক পান্ডিয়া, মহম্মদ শামি ও হর্ষিত রাণা ১টি করে উইকেট নিলেও তাঁদের ইকোনমি রেট মোটেই ভালো ছিলো না আজ। ১টি সাফল্য অভিষেককারী বরুণ চক্রবর্তীরও।
৬) আক্রমণকেই অস্ত্র করেন রোহিত-গিল-
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঝড় তোলার পথে হাঁটেন ভারতের দুই ওপেনার’ও। অফ ফর্ম ভাবাচ্ছিলো রোহিত শর্মাকে (Rohit Sharma)। আজ শুরু থেকেই মিলেছিলো সেই অন্ধকার কাটার ইঙ্গিত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই গাস অ্যাটকিনসনকে পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকান ভারত অধিনায়ক। শাকিব মাহমুদকেও পরের ওভারে স্বাগত জানান ছক্কা মেরে। যোগ্য সঙ্গত করেন শুভমান’ও (Shubman Gill)। আজ ওপেনিং-এ ফিরে চমৎকার সব শটের প্রদর্শনী সাজিয়েছিলেন পাঞ্জাবের তরুণ’ও। প্রথম ছয় ওভারে টিম ইন্ডিয়ার স্কোরবোর্ডে ছিলো ৪৭ রান।
৭) নিভলো আলো, বন্ধ হলো খেলা-

ভারতীয় ইনিংসের বয়স তখন ঠিক ৩৭ বল, হঠাৎ’ই বারাবাটি স্টেডিয়ামের একটি বাতিস্তম্ভের কয়েকটি আলো নিভে যায়। বল দেখতে তেমন অসুবিধা না হওয়ায় খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রোহিত ও শুভমান, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে বাতিস্তম্ভের সবক’টি আলো নিভে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই স্থগিত রাখতে হয় ম্যাচ। ২০-২৫ মিনিটের জন্য সাজঘরে ফিরতে হয়েছিলো ক্রিকেটারদের।
৮) ওপেনিং জুটিতেই নিহিত জয়ের ভিত-

উড, অ্যাটকিনসন, কার্স-ইংল্যান্ড বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও শুভমান গিল। আদিল রশিদকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অর্ধশতকের গণ্ডী পেরোন হিটম্যান। ৩০ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশের মাইলফলক। পিছিয়ে ছিলেন না শুভমান’ও। কেরিয়ারের ১৫তম অর্ধশতক করলেন তিনি। গত ম্যাচে ৯৬ বলে ৮৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন পাঞ্জাবের তরুণ তুর্কি। আজ ৫২ বলে ৯টি বাউন্ডারি ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৬০ রান করেন তিনি। ১৩৬ রানেই ওপেনিং জুটিতেই নিহিত ছিলো আজকের জয়ের ভিত।
৯) শতকের শৃঙ্গ জয় রোহিতের-

২০২৪-এর গোড়ায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দুটি শতরান করেছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। এরপর থেকে বড় রান আর আসে নি তাঁর ব্যাট থেকে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফরে ৫ ইনিংসে তাঁর গড় ছিলো ৬.২০। রোহিত কি ফুরিয়ে গিয়েছেন? উঠতে শুরু করেছিলো প্রশ্ন। আজ বারাবাটির বাইশ গজে ঝড় তুলে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করলেন কিংবদন্তি। ৩২তম ওডিআই শতকের মাইলফলক ছোঁন ৭৬ বলে। কেরিয়ারের দ্বিতীয় দ্রুততম শতরানটি আজ করলেন তিনি। তবে চিন্তায় রাখলো বিরাট কোহলির ফর্ম। রেলওয়েজের বিপক্ষে রঞ্জি ম্যাচে করেছিলেন ৬। আজ আউট হন ৫ করে।
১০) ব্যাট হাতে নজর কাড়লেন শ্রেয়স-অক্ষর-
১২টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১১৯ রানের ইনিংস সাজান রোহিত শর্মা। আদিল রশিদকে বড় শট মারতে গিয়ে শেষমেশ তাঁকে ফিরতে হয় সাজঘরে। তিনি ফেরার পরেও অবশ্য চাপে পড়তে হয় নি টিম ইন্ডিয়াকে। সৌজন্যে অক্ষর প্যাটেল ও শ্রেয়স আইয়ার। গত ম্যাচে অর্ধশতক করেছিলেন দুজনেই। আজও ব্যাট হাতে কার্যকরী ভূমিকা নিতে দেখা গেলো দুজনকে। ৪৭ বলে ৪৪ করে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রান-আউট হন শ্রেয়স। তার পরেও স্কোরবোর্ডকে সচল রাখেন অক্ষর (Axar Patel)। কে এল রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া আউট হলেও দলকে বৈতরণী পার করালেন গুজরাতের অলরাউন্ডার।
১১) সিরিজ জয় টিম ইন্ডিয়ার-
দিনটা ভালো গেলো না কে এল রাহুলের (KL Rahul)। দস্তানা হাতে ক্যাচ মিস করেছেন, রান আটকাতেও সমস্যায় পড়তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ব্যাট হাতেও প্রায়শ্চিত্ত করতে পারলেন না তিনি। ১৪ বলে ১০ করে স্টাম্পড হন। ৬ বলে ১০ রানের ক্যামিও খেলে সাজঘরে ফেরেন হার্দিকও। আচমকাই চাপ বেড়েছিলো খানিক। কিন্তু অক্ষর-জাদেজার জুটি সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় দলকে। আজকের জয়ের ফলে ২-০ এগিয়ে গিয়ে সিরিজ হাতের মুঠোয় নিলো টিম ইন্ডিয়া। একই সঙ্গে আহমেদাবাদের শেষ ম্যাচটি হয়ে পড়লো কার্যত নিয়মরক্ষার।