IND vs ENG: বিশ্বের দুই প্রান্তে দুই দুর্ধর্ষ টেস্ট ম্যাচ উপভোগ করার সৌভাগ্য আজ হলো ক্রিকেটপ্রেমী জনতার। একদিকে অস্ট্রেলিয়ার গাব্বায় ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গোলাপি বলের টেস্টে এই প্রথম হারলো ‘ব্যাগি গ্রিন’ বাহিনী। একই সাথে দুর্গসম গাব্বায় এই নিয়ে তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় হারের মুখোমুখি হতে হলো তাদের। অন্যদিকে হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ভারত বনাম ইংল্যান্ড (IND vs ENG) ম্যাচও সাক্ষী থাকলো সফরকারী দলের দুর্ধর্ষ পারফর্ম্যান্সের। ভারতে আসার আগেই সাক্ষাৎকারে জনি বেয়ারেস্টো জানিয়েছিলেন চোখে চোখ রেখে রোহিত শর্মার দলের সাথে টক্কর দেওয়ার প্রয়াস করবেন তাঁরা। আজ মাঠেও ইংল্যান্ড দলের শরীরী ভাষায় তাই পরিষ্ফুট হলো। অলি পোপের (Ollie Pope) মহাকাব্যিক ইনিংস গতকাল ভারসাম্য ফিরিয়েছিলো খেলায়। আজ ম্যাচের পাল্লা ইংল্যান্ডের দিকে হেলিয়ে দিলো টম হার্টলির (Tom Hartley) বোলিং।
Read More: IND vs ENG: “সময় হয়েছে বাদ দেওয়ার…” হায়দ্রাবাদেও ব্যর্থ শুভমান গিল, নেটদুনিয়ায় সমালোচনার ঝড় !!
অলি পোপের ইনিংস লড়াইতে রাখে ইংল্যান্ড’কে-
গতকাল ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ধুন্ধুমার গতিতে হলেও পরপর উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ, রবিচন্দ্রণ অশ্বিনরা। সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন জ্যাক ক্রলি, বেন ডাকেট, জো রুট, জনি বেয়ারেস্টো, বেন স্টোকস। উইকেটরক্ষক বেন ফোকস খানিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হলেও অপরাজিত থাকতে পারেন নি তৃতীয় দিনের শেষে। ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন একা অলি পোপ (Ollie Poep)। তিন নম্বরে খেলতে নেমে দুর্দান্ত শতরান করেছিলেন তিনি। অশ্বিন-জাদেজাদের ঘূর্ণি সামাল দিয়ে স্কোরবোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে চলেছিলেন তিনি। তৃতীয় দিনের শেষে যখন সাজঘরে ফেরেন, তখন অপরাজিত ছিলেন ১৪৮ রানে। আজ, অর্থাৎ চতুর্থ দিনেও টিম ইন্ডিয়ার (Team India) পথের কাঁটা হয়ে রইলেন তিনিই।
দিনের শুরুটা ভালো করেছিলো ভারতীয় দল। জসপ্রীত বুমরাহ’র বলে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কে এস ভরতের হাতে ধরা পড়েছিলেন রেহান আহমেদ (Rehan Ahmed)। সপ্তম উইকেটের পতনের পর দ্বিতীয় ইনিংসের মানসিক প্রস্তুতি সম্ভবত শুরু করে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা, যশস্বী জয়সওয়ালরা। কিন্তু তাঁদের বিস্তর অপেক্ষা করতে হলো সেই অলি পোপের জন্যই। টম হার্টলিকে সঙ্গে নিয়ে ৮০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন তিনি। হার্টলি (Tom Hartley) ব্যক্তিগত ৩৪ রানের মাথায় আউট হওয়ায় শেষমেশ প্রতিরোধ ভাঙে ইংল্যান্ডের। শূন্য করেন মার্ক উড। দ্বিশতকের উদ্দেশ্যে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগোচ্ছিলেন পোপ। মুহূর্তের মনঃসংযোগের ভুল বাধা হয়ে দাঁড়ালো তাঁর সামনে। বুমরাহ’র বলে ১৯৬ করে আউট হন তিনি। ইংল্যান্ড থামে ৪২০ রানে। ভারতীয়দের মধ্যে বুমরাহ ৪টি, অশ্বিন ৩টি, জাদেজা ২টি ও অক্ষর ১টি উইকেট পান।
হার্টলির ঘূর্ণিতে মুখ থুবড়ে পড়লো ভারত-
প্রথম ইনিংসের ১৯০ রানের লিডের সুবাদে ভারতের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিলো ২৩১ রান। আপাতদৃষ্টিতে রান সংখ্যা বেশী বলে মনে না হলেও হায়দ্রাবাদের মাঠে চতুর্থ ইনিংসের পিচ যে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে ভারতের জন্য, তা মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতেই বলতে শোনা গিয়েছিলো একঝাঁক বিশেষজ্ঞকে। বাস্তবেও দেখা গেলো তেমনটাই। শুরুটা সাবধানী ভঙ্গিতে করেছিলেন যশস্বী ও রোহিত (Rohit Sharma)। কিন্তু ওপেনিং জুটি বেশীদূর এগোয় নি আজ। ৩৫ বলে মাত্র ১৫ রান করে শর্ট লেগে অলি পোপের হাতে ধরা পড়েন যশস্বী। তিনে নেমে ফের একবার চূড়ান্ত ব্যর্থ শুভমান গিল (Shubman Gill)। যত দিন যাচ্ছে চেতেশ্বর পূজারার জুতোয় পা গলানোর স্বপ্ন দূরে সরছে শুভমানের। আজ টম হার্টলির বলের সিলি মিড অফে দাঁড়ানো পোপের হাতেই ক্যাচ তুলে দেন তিনি। করলেন শূন্য রান।
উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসার অভ্যাস আজও ত্যাগ করতে পারলেন না রোহিত শর্মা। ক্রিজে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। আসছিলো রান’ও। কিন্তু হার্টলির নীচু থাকা বলের লাইন বুঝতে না পারায় লেগ বিফোর হন তিনি। করেন ৩৯ রান। ভারতের মিডল অর্ডারের হাল আজ বেশ শোচনীয়। কে এল রাহুলকে ২২ রানের মাথায় ফেরান জো রুট (Joe Root)। অক্ষরকে উপরে পাঠিয়ে ফাটকা খেলতে চেয়েছিলো দল। ১৩’র বেশী করতে পারেন নি তিনিও। ২০ বলে ২ করেই রান আউট হন রবীন্দ্র জাদেজা। ১১৯ রানের মাথায় ৭ উইকেট হারিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। সেখান থেকে ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেলেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন ও কে এস ভরত (Ks Bharat)। দিনের একদম শেষলগ্নে হার্টলির বলে দুজনেই উইকেট হারান। বোল্ড হন ভরত। অহেতুক স্টেপ আউট করতে গিয়ে স্টাম্পড হলেন অশ্বিন। ২৮ করেন দুজনেই।
অশ্বিন (Ravichandran Ashwin) যখন আউট হন ভারতের স্কোর তখন ১৭৭। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ৫৪ রান। পরাজয় সুনিশ্চিত ধরেই নিয়েছিলেন টিম ইন্ডিয়ার সমর্থকেরা। এক উইকেট বাকি থাকায় খেলা অতিরিক্ত আধ ঘন্টা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়ার’রা। ব্যাট হাতে দুই পেসার মহম্মদ সিরাজ (Mohammed Siraj) ও জসপ্রীত বুমরাহ সর্বস্ব দিয়েই প্রয়াস চালালেন দলকে বৈতরণী পার করানোর। সিরাজের ব্যাট থেকে চমৎকার স্লগ স্যুইপ দেখা গেলো আজ। কিন্তু শেষমেশ অসম্ভবকে সম্ভব করা হলো না তাঁদের। হার্টলি-র বলে সিরাজ স্টাম্পড হতেই যবনিকা পড়লো ভারতীয় ইনিংসের। ৬২ রানে ৭ উইকেট নিয়ে অভিষেক স্মরণীয় করে রাখলেন হার্টলি। ভারতের ইনিংস গুটিয়ে গেলো ২০২তেই। ২৮ রানে হেরে সিরিজের প্রথম টেস্টেই হেরে ১-০ পিছিয়ে পড়লো রোহিত শর্মা’র দল।