IND VS BAN: টি-২০ বিশ্বকাপে জোরকদমে চলছে মূলপর্বের খেলা। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান’কে চার উইকেটে উইকেটে হারিয়ে যাত্রাশুরু হয়েছিল রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের। দ্বিতীয় ম্যাচে সিডনি’তে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ৫৬ রানে সহজ জয় তুলে নেয় ভারতীয় দল। অশ্বমেধের ঘোড়া খানিক হোঁচট খেয়েছিল তৃতীয় ম্যাচে এসে। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আগ্রাসন সামলাতে না পেরে পার্থ-এ ভারত’কে পেতে হয়েছিলো পরাজয়ের স্বাদ। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের দিকে দ্রুত ধাবমান ভারতীয় এক্সপ্রেস তৃতীয় ম্যাচে হেরে হয়েছিলো খানিক লাইনচ্যুত। তাই গ্রুপ-২ এর চতুর্থ ম্যাচে অ্যাডিলেডে বাংলাদেশ’কে হারিয়ে তাকে লাইনে ফেরানোই লক্ষ্য ছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া’র। রোমাঞ্চকর ম্যাচে শেষ বলে ৫ রানে জয় ছিনিয়ে নিয়ে শুধু জয়ের সরণী’তে ফিরলো না ‘টিম ইন্ডিয়া’, ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনাল বলা চলে নিশ্চিত করে ফেললো। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে সাপ-লুডো’র মত একবার চালকের আসনে বসলো বাংলাদেশ, আরেকবার ভারত।
ওপেনিং সমস্যা রয়েছে, তবে কোহলি করলেন ‘কামাল’-

বড় খেলোয়াড় নিজের জাত চেনানোর জন্য বড় মঞ্চ’কে বেছে নেন। কথা’টা বারবার বোঝা যাচ্ছে চলতি টি-২০ বিশ্বকাপে বিরাট কোহলি’কে ব্যাট করতে দেখে। বছরের শুরুতেও তাঁর ফর্ম নিয়ে নানান গুঞ্জন ছিলো। অনেকে তাঁকে বাদ দিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে খেলতে বলছিলেন ভারত’কে। বাস্তবে কোহলি ব্যাট হাতে ভারত’কে জেতাচ্ছেন শুধু না, আজ মাহেলা জয়বর্ধনে’কে টপকে টি-২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী’ও হয়ে গেলেন। প্রথম ম্যাচে ৮২*, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬২* করার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে রান পান নি। আজ আবার করলেন ৪৪ বলে ৬৪*। টি-২০ বিশ্বকাপে তাঁর গড় এখন ৮৮.৮। অধিনায়ক রোহিত শর্মা’র ব্যাট চললো না আজও। তিনি ৮ বলে ২ রান করে ফিরে যান। ফর্মে ফিরলেন কে এল রাহুল। তিনি ৩২ বলে ৫০ করেন। সূর্যকুমার স্বকীয় ভঙ্গী’তে ১৬ বলে করেন ৩০। অশ্বিন শেষ বেলায় ৬ বলে ১৩ করেন। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ভারত স্কোরবোর্ডে তোলে ১৮৪ রান।
লিটন ঝড় ও ভারতের ‘কামব্যাক’-

ভারত যখন নিজেদের ইনিংসে ১৮৪ রান তোলে, অনেকেই মনে করেছিলেন জয়ের জন্য তা যথেষ্ট। তাঁদের রীতিমত ভুল প্রমাণ করে প্রথম থেকেই পালটা আঘাত শুরু করেন বাংলাদেশ ওপেনার লিটন দাস। লিটন আক্রমণে ভারতের পেস ত্রয়ী’কে দিশাহারা লাগছিলো শুরুতে। পাওয়ার-প্লে’র ৬ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৬০ রান। এর মধ্যে নব্বই শতাংশের বেশী রান করেন লিটন। অপর প্রান্তে নাজমুল হোসেন শান্তের কাজ ছিলো শুধু প্রান্ত বদল করে লিটন’কে স্ট্রাইক দেওয়া। ছবি’টা বদলালো খানিক পরে। আর বদলাতে ভারত’কে সাহায্য করলো স্বয়ং প্রকৃতি। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামলো। কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রইলো খেলা। যে ম্যাচ সম্পূর্ণ ঢলে পড়েছিলো বাংলাদেশের দিকে, তা আস্তে আস্তে ফিরতে লাগলো ভারতের পক্ষে। বৃষ্টি’তে বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ১৬ ওভারে ১৫১। বিরতির পর প্রথম ওভারেই কে এল রাহুলের দুরন্ত থ্রো’তে রান আউট হন লিটন দাস। লিটন করলেন ২৭ বলে ৬০। তিনি আউট হওয়ার পরেই আস্তে আস্তে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায় ‘টাইগার্স’রা। মহম্মদ শামি আউট করেন নাজমুল হাসান শান্ত’কে।
অনবদ্য অর্শদীপে জয়কাব্য ভারতের-

লিটন ও শান্ত আউট হওয়ার পর ভারত’কে বেগ দিতে পারতেন আফিফ হোসেন আর ‘বাংলাদেশের প্রাণ, বাংলাদেশের জান’ সাকিব-আল-হাসান। তাঁদের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দিলেন না পাঞ্জাবের তরুণ পেসার অর্শদীপ সিং। নিজের প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন ১২ রান। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ওভারে ম্যাচের মোড়’ই ঘুরিয়ে দিলেন তিনি। একই ওভারে তুলে নিলেন আফিফ আর সাকিব’কে। অর্শদীপের বলের লাইন বুঝতে না পেরে ব্যাটের নিচের দিকে লাগিয়ে ফেলেন আফিফ। লং অফ থেকে ছুটে এসে ক্যাচ তালুবন্দী করেন সূর্যকুমার যাদব। একই ওভারে সাকিব’কেও বোকা বানান তিনি। তাঁর ক্যাচ ধরেন দীপক হুডা। শেষ ওভারে বাকি ছিলো ২০। মারমুখী নুরুল হাসান এবং তাস্কিন আহমেদের সামনে মাথা ঠান্ডা রেখে ভারত’কে জয় এনে দেন অর্শদীপ। ব্যাট হাতে রান না পেলেও ২ উইকেট পেয়েছেন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। আজকের জয়ে ৪ ম্যাচে ভারতের পয়েন্ট এখন ৬। দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা আগামীকাল পাকিস্তান’কে হারালে গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করবে। তবে বলা যায় অ্যাডিলেডে ম্যাচ জিতে শেষ চার অন্তত নিশ্চিত করলো ‘মেন ইন ব্লু।’