IND vs BAN: পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে ২-০ উড়িয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত হুঙ্কার দিয়েছিলেন ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানোর। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে তা শান্ত, লিটন, শাকিবদের যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেলো টিম ইন্ডিয়া। চেন্নাইয়ের চেপকে ২৮০ রানের ব্যবধানে হেরে এমনিতেই পিছিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। কানপুরে প্রথম তিন দিন খেলা ভেস্তে যাওয়ার পর আশা জেগেছিলো দ্বিতীয় টেস্টটি ড্র রাখার। কিন্তু আগ্রাসী ভারতের আগুনে পারফর্ম্যান্সে শেষমেশ খড়কুটোর মত উড়েই গেলো প্রতিবেশী রাষ্ট্র। সব মিলিয়ে হয়ত আড়াই দিন খেলা হয়েছে কানপুরে। ‘টাইগার’ বধে সেটুকু সময়ই যথেষ্ট, আজ বুঝিয়ে দিলো ‘মেন ইন ব্লু।’
Read More: টেস্টের মাঝপথেই বড় সিদ্ধান্ত টিম ইন্ডিয়ার, বাদ পড়লেন সরফরাজ-সহ একঝাঁক ক্রিকেটার !!
তাসের ঘরের মত ভাঙলো বাংলাদেশ ব্যাটিং-
গতকাল ঝড়ের গতিতে রান তুলেছিলো ভারত। মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিলো তারা। দিনের শেষ ঘন্টায় বাংলাদেশকে স্পিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কাজে এসেছিলো সেই ফাটকা। অশ্বিনের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন জাকির হাসান ও হাসান মাহমুদ। আজ সকালে যখন মাঠে নামে বাংলাদেশ তখন তাদের স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটের বিনিময়ে ২৬। ম্যাচ বাঁচাতে প্রয়োজন ছিলো মরণপণ লড়াই। কিন্তু পারলেন না বাংলাদেশ ব্যাটাররা। শুরুতেই মোমিনুলকে ফিরিয়ে প্রতিপক্ষকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন অশ্বিন। এরপর রবীন্দ্র জাদেজাকে আক্রমণে এনে কার্যসিদ্ধি করেন রোহিত। পরপর তিনি তুলে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস ও শাকিব আল হাসানের উইকেট।
অর্ধশতক করেন সাদমান ইসমাল। তবে আকাশ দীপের বলে ধরা পড়েন যশস্বী জয়সওয়ালের হাতে। শেষ স্পেলে জ্বলে ওঠেন জসপ্রীত বুমরাহ’ও। বাউন্স তেমন নেই কানপুরের পিচে। তা সত্ত্বেও নিয়মিত উইকেট তুলে নিলেন বিশ্বসেরা পেসার। ৯ করে আউট হন মেহদী হাসান মিরাজ। তাইজুল ইসলাম ফেরেন খাতা খোলার আগেই। একা কুম্ভ হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ৬৩ বলে ৩৭-এর বেশী এগোতে পারেন নি তিনিও। প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও বুমরাহ’র ডেলিভারি খুঁজে নেয় মুশফিকুরের স্টাম্প। ৪৭ ওভারে ১৪৬ করেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ভারতের জন্য মাত্র ৯৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতে সক্ষম হয় তারা।
দুর্ধর্ষ জয় ছিনিয়ে নিলো ভারত-
যে কোনো মূল্যে জয় চাই। এই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নেমেছিলো টিম ইন্ডিয়া। আড়াই দিনের খেলা ভেস্তে যাওয়ার পরে ড্র’কে যখন ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছিলো ক্রিকেটদুনিয়া, তখনও হাল ছাড়ে নি ভারত। সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন’ই দেখা গেলো ক্রিকেটারদের পারফর্ম্যান্সে। অশ্বিন, জাদেজা, বুমরাহ ত্রয়ীর বোলিং দাপটে দিশাহারা বাংলাদেশ’কে হোয়াইটওয়াশ করতে একটি সেশন’ও লাগলো না ‘মেন ইন ব্লু’র। প্রথম ইনিংসে টি-২০’র ঢঙে টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলো দল। দ্বিতীয় ইনিংসে রান উঠলো ওয়ান ডে’র ছন্দে। শুরুটা আরও একবার দ্রুত গতিতেই করেছিলেন রোহিত নিজে। কিন্তু মেহদী হাসান মিরাজের বলে উইকেট হারান ৮ রান করে। তিনে নামা শুভমান গিল’ও মাত্র ৬ করে হন মেহদী’র শিকার। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়েও খোলসে ঢুকে যায় নি ভারতীয় ব্যাটিং। বরং ভরসা রাখে প্রত্যাঘাতে।
থামানো যাচ্ছে না যশস্বী জয়সওয়ালকে। চেন্নাইতে লড়াকু ৫৬ এসেছিলো তাঁর ব্যাট থেকে। কানপুরে প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৭২। আজ রান তাড়া করতে নেমেও একই রকম সাবলীল ব্যাটিং করলেন তিনি। শুরু থেকেই স্পিন ব্যবহার করে টিম ইন্ডিয়াকে চাপে রাখতে চেয়েছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু শান্ত-লিটনদের যাবতীয় গেমপ্ল্যান ভেস্তে দিয়ে চার-ছক্কার ডালি সাজান তরুণ তুর্কি। বাম হাতি ওপেনার চলতি সিরিজের তৃতীয় অর্ধশতকটি পেলেন আজ। তাইজুলের বলে আউট হওয়ার আগে করলেন ৫১ রান। সাবলীল দেখালো কোহলিকেও। অপরাজিত রইলেন ১৯ রানে। ১৮.২ ওভারেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ৭ উইকেটের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিলো ভারত।