IND vs AUS: কিউই বিপর্যয়ের যন্ত্রণা ভুলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ঘুরে দাঁড়ালো টিম ইন্ডিয়া। রোহিত শর্মা ছিলেন না, পাওয়া যায় নি শুভমান গিলকেও। তা সত্ত্বেও ব্যাগি গ্রিনের বিরুদ্ধে (IND vs AUS) দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিলো ভারতীয় শিবির। প্রথম দিনের সকালে ব্যাট হাতে কেবল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলো দল। অপটাস স্টেডিয়ামের ড্রপ-ইন পিচের গতি ও বাউন্সে নাজেহাল হয়ে ১৫০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো ইনিংস। টেস্টের বাকি অংশ জুড়ে একাধিপত্য বজায় রাখলো ‘মেন ইন ব্লু’ই। কার্যনির্বাহী অধিনায়ক জসপ্রীত বুমরাহ’র হাত ধরে শুরু হয়েছিলো প্রত্যাঘাত। ১০৪ রানে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যেতেই জয়ের গন্ধ পেয়ে গিয়েছিলো ভারত। এরপর যশস্বী ও কোহলির (Virat Kohli) জোড়া শতরানের সুবাদে রানের পাহাড় গড়ে টিম ইন্ডিয়া। চতুর্থ ইনিংসে সেই রান তাড়া করা আর সম্ভব হয় নি স্মিথ-লাবুশেনদের পক্ষে।
Read More: IPL 2025: নিলামের প্রথম দিনেই বড় খোলাসা KKR’র, ভেঙ্কটেশ ‘আইয়ার’ দেবেন নাইট রাইডার্সকে নেতৃত্ব !!
অবিশ্বাস্য বুমরাহ’ই ম্যাচের এক্স-ফ্যাক্টর-
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবার টেস্ট (IND vs AUS) খেলছেন যশস্বী জয়সওয়াল। প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছিলেন খাতা খোলার আগেই। দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ১৬১ রান। স্বল্প দিনের টেস্ট কেরিয়ারে এই নিয়ে চতুর্থ শতরান করলেন তিনি। অপরপ্রান্তে সপ্রতিভ দেখালো বিরাট কোহলিকেও (Virat Kohli)। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এসেছিলো শেষ টেস্ট শতরান। এরপর বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটানা ব্যর্থতা সঙ্গী হয়েছিলো তাঁর। কিংবদন্তিকে পড়তে হয়েছিলো সমালোচনার মুখেও। যাবতীয় প্রশ্নের জবাব গতকাল অপটাস স্টেডিয়ামের বাইশ গজে তিনি দিলেন ব্যাট হাতে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টেস্টে ৩০তম বার তিন অঙ্কের মাইলস্টোন ছুঁলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটি তাঁর সপ্তম শতক। ৪৮৭ রান তুলে ডিক্লেয়ার করেছিলো ভারত। চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫৩৪।
জসপ্রীত বুমরাহকে (Jasprit Bumrah) কি করে সামলানো যায় সেই প্রশ্নের উত্তর গোটা ম্যাচে খুঁজে পেলো না অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং। প্রথম ইনিংসে ব্যাগি গ্রিনের প্রতিরোধ ধূলিসাৎ করেছিলো ভারতীয় পেসারের নিখুঁত বোলিং। দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখা গেলো তেমনটাই। গতকাল শেষ সেশনে বুমরাহ’র ডেলিভারি খুঁজে নিয়েছিলো নাথান ম্যাকস্যুইনি’র (Nathan McSweeney) প্যাড। টেস্ট অভিষেক সুখের হলো না তাঁর। এরপর মার্নাস লাবুশেনকেও (Marnus Labuschagne) আউট করেন ভারতীয় কার্যনির্বাহী অধিনায়ক। আউটস্যুইং ভেবে বল ছেড়ে দিয়েছিলেন লাবুশেন। কিন্তু তা শেষ মুহূর্তে কাঁটা বদলে আঘাত করে প্যাডে। ক্রিকেটের পরিভাষায় যাকে ‘প্লাম্ব’ বলে, ঠিক সেভাবে আউট হন তিনি,। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পান নি। নাইট ওয়াচম্যানের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন অজি অধিনায়ক কামিন্স। কিন্তু সিরাজের বলে ফেরেন তিনিও।
চতুর্থ দিনেই যবনিকা পড়লো টেস্টের-
গতকাল দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিলো ৩ উইকেটের বিনিময়ে ১২ রান। ভারত যে টেস্ট (IND vs AUS) জিতছে তা বোঝা গিয়েছিলো তখনই। তবে আজ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া কতদূর লড়তে পারে নজর ছিলো সেদিকে। দিনের শুরুতেই সিরাজের বলে আউট হন উসমান খোয়াজা। ৪ করে সাজঘরে অজি ওপেনার। এরপর স্টিভ স্মিথকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে গেলেন ট্র্যাভিস হেড (Travis Head)। টেস্ট ক্রিকেটে গত দশকের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি’র পুরষ্কার পেয়েছেন স্মিথ, কিন্তু বর্তমানে তাঁর ব্যাটিং যেন অতীতের ছায়ামাত্র। ১৭ করে সিরাজের শিকার হন তিনিও। শত অন্ধাকারের মধ্যেও অজি ব্যাটিং-এর আশার আলো হেড। ওভাল, আহমেদাবাদের পর পারথ-এও ভারতের বিপক্ষে ১১০ দলে ৮৯ রানের একটি অনন্য ইনিংস খেলেন তিনি।
মিচেল মার্শ ও অ্যালেক্স ক্যারি বেশ খানিকক্ষণ বুমরাহ-সিরাজ-হর্ষিতদের ঠেকিয়ে রেখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ব্যাটিং অর্ডারের ভাঙন ঠেকাতে পারেন নি। যথাক্রমে ৪৭ ও ৩৬ করে সাজঘরের পথ ধরেই দু’জনেই। তাঁদের ফেরান নীতিশ কুমার রেড্ডী ও হর্ষিত রাণা। এরপর মিচেল স্টার্ক ও নাথান লিয়ঁ’র উইকেট ওয়াশিংটন সুন্দর তুলে নিতেই যবনিকা পড়লো টেস্টের। ২০২০-২১ মরসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে এসে গাব্বা দুর্গ জয় করেছিলো টিম ইন্ডিয়া (Team India)। ৩২ বছর পর প্রথম ব্রিসবেনে হেরেছিলো ব্যাগি গ্রিন বাহিনী। এবার নবনির্মিত এই অপটাস স্টেডিয়ামে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াকে হারের স্বাদ চাখতেও বাধ্য করলো ‘মেন ইন ব্লু’। পেস-বাউন্সের স্বর্গরাজ্যে ভারতকে ঠেলে দিয়ে শুরুতেই অ্যাডভান্টেজ আদায় করে নেওয়ার লক্ষ্য ছিলো কামিন্সদের। পাশার বাজি উলটে ২৯৫ রানের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিলেন বুমরাহ-সিরাজরাই।