IND vs AFG: দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে দেশে ফিরেছে টিম ইন্ডিয়া (Team India)। সামনে রয়েছে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ (IND vs AFG)। জুন মাসের টি-২০ বিশ্বকাপের আগে রশিদ খানদের বিপক্ষেই শেষ কুড়ি-বিশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত হতে চলা মেগা টুর্নামেন্টের জন্য দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে আফগানদের বিরুদ্ধে ক্রিকেটারদের পারফর্ম্যান্স। আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে খেলা। প্রথম টি-২০ আয়োজিত হবে মোহালিতে। ১৪ তারিখ ইন্দোরে রয়েছে দ্বিতীয় টি-২০ এবং ১৭ তারিখ বেঙ্গালুরুর মাঠে আয়োজিত হতে চলেছে শেষ ম্যাচটি।
আফগানিস্তান আগেই দল ঘোষণা করে দিয়েছিলো। মোট ১৯ সদস্যকে ভারতের বিপক্ষে স্কোয়াডে রেখেছে তারা। গতকাল সন্ধ্যায় দল ঘোষণা করে ভারত’ও। হার্দিক পান্ডিয়া ও সূর্যকুমার যাদব সুযোগ পান নি চোটের কারণে। প্রায় দেড় বছর পর টি-২০ ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন হয়েছে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও রোহিত শর্মার (Rohit Sharma)। এছাড়াও সুযোগ পেয়েছেন শুভমান গিল, যশস্বী জয়সওয়াল, রিঙ্কু সিং-দের মত একঝাঁক তরুণ তুর্কি। সিরিজে তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার সঠিক ভারসাম্য কোচ রাহুল দ্রাবিড় কি করে খুঁজে নেন, সেইদিকেই এখন তাকিয়ে সকলে। যে ১৬ সদস্যের দল ঘোষিত হয়েছে গতকাল, তা নিয়ে চলছে নিরন্তর কাটাছেঁড়া। বিশেষজ্ঞরা রিঙ্কু (Rinku Singh), সঞ্জুদের সুযোগ পাওয়া নিয়ে খুশি হলেও, দ্বিধায় এই তিন তারকার জায়গা পাওয়া নিয়ে।
Read More: IND vs AFG: আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দল ঘোষণা করলো ভারত, ‘ক্যাপ্টেন’ হিসাবে ফিরলেন এই প্রাক্তন অধিনায়ক !!
রোহিত শর্মা-
২০২২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের পর ভারতের জার্সি গায়ে টি-২০ ফর্ম্যাটে দেখা যায় নি রোহিত শর্মাকে (Rohit Sharma)। প্রায় দেড় বছরের বিরতির পর ফিরছেন তিনি। রোহিতের অবর্তমানে কখনও নেতৃত্ব দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া আবার কখনও সূর্যকুমার যাদব বা জসপ্রীত বুমরাহ। ভারত বনাম আফগানিস্তান সিরিজে নেই তিনজনেই। নেতার আসনে ফের বসছেন রোহিত’ই। ওডিআই ক্রিকেটে ছন্দে থাকলেও রোহিতের (Rohit Sharma) সাম্প্রতিক টি-২০ পারফর্ম্যান্সের দিকে তাকিয়ে তাঁর সুযোগ পাওয়া নিয়ে দ্বিধায় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। শেষ ১০টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ইনিংসে রোহিতের অর্ধশতক কেবল একটি। তাও দুর্বল নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। মোট রান ১৮৬। গড় ১৮.৬।
দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান বা অস্ট্রেলিয়ার মত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও ২০২৩ সালের আইপিএল’ও (IPL) ভালো কাটে নি তাঁর। ওপেনার হিসেবে ১৬ ম্যাচে ২০.৭৫ গড়ে মাত্র ৩৩২ রান করতে পেরেছিলেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ছিলো ১৩২-এর আশেপাশে। যা মোটেই হিটম্যানসুলভ নয়। গত দেড় বছরে রোহিতের অবর্তমানে ওপেনার হিসেবে টি-২০ দলের সাথে মানিয়ে নিয়েছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমান গিল’রা (Shubman Gill)। নির্বাচকদের রেডারে ছিলেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়’ও। রোহিতের প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক আঙিনাতে তাঁদের ভবিষ্যৎ আপাতত বিশ বাঁও জলে। পরবর্তীতে যা ভারতীয় দলকে সমস্যায় ফেলতে পারে বলে মনে করছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা।
তিলক বর্মা-
ছন্দে না থেকেও ভারত বনাম আফগানিস্তান (IND vs AFG) সিরিজের দলে যাঁরা সুযোগ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তিলক বর্মা’ও (Tilak Varma)। আইপিএলে ২০২৩ মরসুমে বেশ ভালো পারফর্ম্যান্স করেছিলেন তিলক বর্মা। মিডল অর্ডারে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ভরসা যুগিয়েছিলেন তরুণ বাম-হাতি ব্যাটার। করেছিলেন ১১ ম্যাচে ৩৪৩ রান। গড় ছিলো প্রায় ৪৩-এর কাছাকাছি। ভালো খেলার পুরষ্কার হিসেবে জাতীয় দলেও দ্রুত সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলেন তিনি। প্রথম ম্যাচে করেন ২২ বলে ৩৯ রান। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে একটি অর্ধশতরান’ও এসেছিলো তাঁর ব্যাট থেকে। কিন্তু এরপর থেকেই ক্রমে ছন্দ হারাতে দেখা গিয়েছে তিলক’কে (Tilka Varma)। আয়ারল্যান্ড সিরিজে দুই ইনিংসে করেন যথাক্রমে ০ ও ১ রান। তারপর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজেও নিষ্প্রভ থেকেছেন তিনি।
শেষ দশ টি-২০ ইনিংসে তিলকের (Tilak Varma) রান সংখ্যা যথাক্রমে ২৭,০,১,২, ৫৫, ১২, ৭, ৩১, ২৯ ও ০। একমাত্র এশিয়ান গেমসের সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঝোড়ো অর্ধশতক ছাড়া একটিও উল্লেখযোগ্য ইনিংস খেলতে পারেন নি তিনি। সাদা বলের আরেক ফর্ম্যাট, অর্থাৎ ওডিআই-তেও তিলক’কে সুযোগ দিয়ে দেখেছে দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটি অর্ধশতক করেছেন তৃতীয় ওডিআই-তে। বাকি তিন ম্যাচে তাঁর রান কেবল ৫, ১ ও ১০। লাগাতার ফর্ম সমস্যার সাথে যুঝতে থাকা তিলক’কে টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) পরিকল্পনায় রাখা ভারতীয় দলের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। হায়দ্রাবাদের তরুণ ক্রিকেটারকে ঘরোয়া ক্রিকেটের আঙিনায় ফিরে নিজেকে আরও মাজাঘষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
আবেশ খান-
তালিকায় তৃতীয় নাম হিসেবে থাকবেন আবেশ খান (Avesh Khan)। নতুন বলে আবেশ সাবলীল হলেও পুরনো বল হাতে রান আটকানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। তাঁর পরিসংখ্যান বলছে দেশের হয়ে ১৯ টি-২০ ম্যাচ খেলে সংগ্রহে উইকেট সংখ্যা মাত্র ১৮। ইকোনমি রেট ৯.০৩। বোলিং গড় ৩২ এর কাছাকাছি। মধ্যপ্রদেশের পেসারকে গত অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই নিয়মিত টি-২০ ক্রিকেটে ব্যবহার করে দেখতে চাইছে ভারতীয় দল। কিন্তু কুড়ি-বিশের খেলায় এখনও অবধি জাত চেনাতে পারেন নি তিনি। শেষ যে তিনটি টি-২০ খেলেছেন তিনি, সেখানে তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান যথাক্রমে ১/৩৭,১/৩৩ ও ০/৩৯। যা মোটেও ছন্দে থাকার ছবি ফুটিয়ে তোলে না।
আইপিএল ট্রেডিং উইন্ডোতে ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস থেকে আবেশ (Avesh Khan) যোগ দিয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসে। কিন্তু তাঁর আইপিএল পারফর্ম্যান্স’ও গত মরসুমে আহামরি কিছু নয়। মাত্র ৯ ম্যাচে তাঁকে সুযোগ দিতে পেরেছিলো লক্ষ্ণৌ। ম্যাচ প্রতি এক উইকেট’ও পান নি তিনি। ঝুলিতে ৮ উইকেট। একই সাথে বোলিং গড় ৩৫.৩৮। ইকোনমি ছুঁয়েছে ৯.৭৬। যেখানে ভারতের হাতে জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ, আর্শদীপ সিং-দের মত কার্যকরী বোলিং বিকল্প রয়েছে, সেখানে টি-২০ বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় আবেশ খানের মত ছন্দে না থাকা পেসারকে রাখা সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলেই মত ক্রিকেটমহলের।