২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিলো মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া। টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup), ওডিআই বিশ্বকাপের (ICC World Cup) পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Champions Trophy) জিতে মাত্র ৬ বছরের মধ্যে আইসিসি আয়োজিত সাদা বলের ফর্ম্যাটের সবকটি টুর্নামেন্ট জিতে নজির গড়েছিলো ভারত। এরপর কেটে গিয়েছে এক দশক। সাফল্য আর ধরা দেয় নি ‘মেন ইন ব্লু’র হাতে। বারবার সেমিফাইনাল বা ফাইনালে গিয়ে বসে গিয়েছে ভারতের জয় রথের চাকা। টেস্ট, একদিনের ক্রিকেট হোক বা টি-২০,ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই ভারতীয় দলের কপালে জুটেছে কেবল হতাশা।চলতি বছরেই দুইটি আইসিসি আয়োজিত ট্রফি জেতার হাতছানি ছিলো ভারতীয় দলের সামনে। দুই ক্ষেত্রেই খালি হাতে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ‘মেন ইন ব্লু’কে।
জুন মাসে ইংল্যান্ডের ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কার্যত উড়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। এর মাস খানেক পর ঘরের মাঠে ওডিআই বিশ্বকাপে (ICC World Cup) আশা জাগিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছিলো ভারত। গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনাল মিলিয়ে জিতে নিয়েছিলো টানা দশ ম্যাচ। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা যখন প্রায় সকলেই ভারতের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয় নিয়ে নিশ্চিত, তখনই আহমেদাবাদের মাঠে ফাইনালের দিন মুখ থুবড়ে পড়লেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), বিরাট কোহলি’রা (Virat Kohli)। ব্যাটিং ব্যর্থতার শিকার হয়ে হাতছাড়া করলেন বিশ্বকাপ। ফের একবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই থমকে গেলো টিম ইন্ডিয়ার অশ্বমেধের ঘোড়া। ২০২৩-এ আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতার আশা শেষ। লক্ষ্য এবার ২০২৪-এর টি-২০ বিশ্বকাপ। যে নীতি নিয়ে ভারত আপাতত এগোচ্ছে, তাতে বদল না এলে কুড়ি-বিশের বিশ্বখেতাব জয় নিয়েও থাকছে সংশয়।
Read More: T20 World Cup 2024: ২০২৪ বিশ্বকাপ আসছে ভারতের খাতায়, দলে এন্ট্রি নিচ্ছেন এই ট্রফি জয়ী কোচ !!
অতিরিক্ত পরীক্ষানিরীক্ষাই হয়ে দাঁড়াতে পারে কাল-

গত দেড় বছর ধরে টি-২০ ক্রিকেটকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখে নি ভারতীয় দল। নতুনদের সুযোগ দিতে গিয়ে একাধিকবার বাইরে রাখা হয়েছিলো বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma) মত সিনিয়র তারকাদের। ফলাফল ২০২২-এর টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup 2022) মিলেছিলো হাতেনাতে। সেমিফাইনাল ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটের ব্যবধানে জুটেছিলো লজ্জাজনক হার। এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বদলে পরীক্ষানিরীক্ষার মাত্রা যেন বাড়িয়ে দেয় টিম ইন্ডিয়া (Team India)।
শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোক বা আয়ারল্যান্ড-প্রতিটি সিরিজেই নতুন নতুন টিম কম্বিনেশন দেখা গিয়েছে ভারতের। রিঙ্কু সিং (Rinku Singh), যশস্বী জয়সওয়ালের (Yashasvi Jaiswal) মত গুটিকয়েক ক্রিকেটার এই পরীক্ষানিরীক্ষা নীতির ফলে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এলেও বহুক্ষেত্রেই মুখ থুবড়ে পড়েছে এই রণনীতি।আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অতিরিক্ত পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য কোনো জায়গা যে নেই তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে গতকালই। বিশ্বকাপের (ICC World Cup) পর অস্ট্রলিয়ার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ খেলছে ভারত। নেই একাধিক তারকা ক্রিকেটার। দ্বিতীয় সারির অজি একাদশের বিরুদ্ধে প্রথম দুটি ম্যাচ জিতলেও, গতকাল স্রেফ বোলিং অনভিজ্ঞতার জন্য ২২২ করেও হারতে হলো টিম ইন্ডিয়াকে।
জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার শেষ ২ ওভারে বাকি ছিলো ৪৩ রান। ওভার প্রতি প্রয়োজন ছিলো ২১.৫০ রান। বুমরাহ-শামি’দের অবর্তমানে সেই পুঁজিও রক্ষা করতে পারলেন না প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা (Prasidh Krishna), অক্ষর প্যাটেল’রা (Axar Patel)। চার-ছক্কার বৃষ্টি করে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (Glenn Maxwell) ও ম্যাথু ওয়েড। ভারতের এই পরীক্ষানিরীক্ষা নীতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সমর্থকেরা। কেন একটি নির্দিষ্ট টি-২০ দল থাকবে না? প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক বিক্রান্ত গুপ্ত’ও।
অধিনায়ক পদে কে? ধাঁধার উত্তর খুঁজছে ক্রিকেটমহল-

২০০৬ থেকে ২০১৬ অর্থাৎ এগারো বছরে ভারতের টি-২০ অধিনায়কের সংখ্যা ৫। অধিকাংশ সময় জুড়ে দায়িত্ব সামলেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। রায়না, শেহবাগ (Virender Sehwag), রাহানের মত কেউ কেউ ধোনির অবর্তমানে কিছু ম্যাচের জন্য সামলেছেন নেতৃত্বভার। ছবিটা পুরোপুরি পালটে গিয়েছে এরপর। শেষ ৭ বছরে ভারতীয় দলকে টি-২০ ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৯ জন। এরমধ্যে স্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ছিলেন ২০১৭ থেকে ২০২১ অবধি। মাঝেসাঝে নেতৃত্ব দিয়েছেন তৎকালীন সহ-অধিনায়ক রোহিত (Rohit Sharma)।
কিন্তু ২০২১ টি-২০ বিশ্বকাপের পর কোহলি দায়িত্ব ছাড়তেই ভারতীয় অধিনায়কত্বে লাগাতার দেখা গিয়েছে রদবদল। খাতায়কলমে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) অধিনায়ক হলেও বেশীর ভাগ সিরিজেই বিশ্রাম নিয়েছেন তিনি। যার ফলে প্রায় প্রতি সিরিজেই নতুন নতুন অধিনায়ক পেয়েছে ভারত।শিখর ধাওয়ান, ঋষভ পন্থ, হার্দিক পান্ডিয়া, কে এল রাহুল, জসপ্রীত বুমরাহ, ঋতুরাজ গায়কোয়াড় এবং সূর্যকুমার যাদব- রোহিত ছাড়া গত দুই বছরে এই সাত জনকে নেতা হিসেবে পেয়েছে ভারত। কেউ ২টি আবার কেউ ৩ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। একমাত্র হার্দিকের মেয়াদ ছিলো ১৬ ম্যাচের।
নেতৃত্বের এই ‘হরির লুঠ’ আদতে উপকার নয় বরং ক্ষতিই করেছে টিম ইন্ডিয়ার (Team India)। কারও স্ট্র্যাটেজি, অধিনায়কত্ব করার পদ্ধতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পায় নি দল। যার ফল ভারতকেই ভুগতে হয়েছে এশিয়া কাপ অথবা টি-২০ বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্টে। গত বছর অস্ট্রেলিয়াতে ‘মেন ইন ব্লু’র ভরাডুবির পর এই নিয়ে রোহিত শর্মার দিকে আক্রমণ’ও শানিয়েছিলো প্রাক্তনী অজয় জাদেজা। কিন্তু বিশেষ বদল আসে নি টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাচিন্তায়। সামনেই রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ, সেখানে যদি কোনো স্থায়ী নেতা, এবং স্থায়ী টি-২০ স্কোয়াড বেছে না নেয় ভারত, তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত হতে চলা ২০২৪-এর টি-২০ বিশ্বকাপেও (T20 World Cup 2024) পড়তে হবে বেকায়দায়।