টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup) অন্যতম ‘ফেভারিট’ হিসেবে পা রেখেছিলো পাকিস্তান (PAK)। ২০২২ সালে যেভাবে বাবর আজম (Babar Azam), শাহীন শাহ আফ্রিদিরা প্রথমে পিছিয়ে পড়েও পরে লড়াকু মানসিকতার প্রমাণ রেখে পৌঁছেছিলেন ফাইনালে, তার পুনরাবৃত্তি এবারও দেখা যাবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু ভুল ভাঙে টুর্নামেন্ট শুরু হতে না হতেই। গ্রুপ-এ’তে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই টেক্সাসে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয় পাক শিবিরকে। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে আয়োজক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হেরে বসে তারা। এরপরেই লড়াইটা কঠিন হয়ে পড়েছিলো পাকিস্তানের জন্য। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউ ইয়র্কের মাঠে ভারতের বিরুদ্ধে ৬ রানের ব্যবধানে হার তাদের বিদায়ের দোরগোড়ায় পাঠিয়ে দেয়।
৯ জুনের পরাজয়ের পরেও ক্ষীণ আশা বেঁচে ছিলো পাক শিবিরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে হারত ও পাকিস্তান যদি দুটিতেই জয় পেত, তাহলে নেট রান রেটে পরবর্তী পর্বে যেতে পারত তারা। ১১ তারিখ কানাডাকে হারিয়ে লড়াইতে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন বাবর’রা। কিন্তু ১৪ তারিখই স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁদের। ফ্লোরিডাতে আবহাওয়ার কারণে আমেরিকা বনাম আয়ারল্যান্ড ম্যাচ ভেস্তে যেতেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়। অমীমাংসিত ম্যাচের ১ পয়েন্ট নিয়ে ৫ পয়েন্টে পৌঁছে যায় মার্কিনীরা। যা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলো পাকিস্তানের। টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) মঞ্চে ভরাডুবির পর স্বভাবতই ক্ষোভ জমেছিলো সমর্থকদের মধ্যে। ম্যাচ ফিক্সিং-এর মত গুরুতর অভিযোগের আঙুলও তুলেছিলেন কেউ কেউ। বিদায় নেওয়ার আগে যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিলেন ইমাদ ওয়াসিম।
Read More: শাকিব আদৌ অপমান করেন নি শেহবাগ’কে, ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই মিললো প্রমাণ !!
উঠেছিলো ফিক্সিং-এর অভিযোগ-
পাকিস্তানের পারফর্ম্যান্স নিয়ে বেশ হতাশ প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। ওয়াসিম আক্রম (Wasim Akram) প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, “পাক দলকে দেখে বোঝাই গেলো না ঠিক কি পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে এসেছিলো টি-২০ বিশ্বকাপ।” মুখ খুলেছেন শাহীদ আফ্রিদিও (Shahid Afridi)। তিনি দলের খারাপ পারফর্ম্যান্সের জন্য দায়ী করেছেন অধিনায়ক বাবর আজমকে। ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে প্রাক্তন উইকেটরক্ষক রশিদ লতিফকে (Rashid Latif)। বিরাট কোহলির উদাহরণ টেনে তিনি দুষেছেন পিচ’কে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ দু’টিতে পাকিস্তানের যে জেতা উচিৎ ছিলো, তাও জানিয়েছেন তিনি। বিশেষে করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় এগিয়ে থেকেও যেভাবে হারেন বাবর-রিজওয়ান’রা তা সত্যিই প্রশ্ন তুলেছিলো ক্রিকেটজনতার মনে।
প্রথমে বোলিং করে টিম ইন্ডিয়াকে (Team India) মাত্র ১১৯ রানে বেঁধে রেখেছিলেন পাক বোলাররা। ব্যাট হাতেও একটা সময় চালকের আসনেই ছিলো পাকিস্তান। কিন্তু ইনিংসের মাঝপথে অত্যন্ত মন্থর হয়ে পড়েন মহম্মদ রিজওয়ান (Mohammad Rizwan)। আবার তিনিই ভারতের সেরা বোলিং অস্ত্র জসপ্রীত বুমরাহ’র বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীন শট মারতে গিয়ে বোল্ড হন। খেলা ঘোরে সেখানেই। “ওর ক্রিকেটবোধই তৈরি হয় নি”, রিজওয়ানের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে জানিয়েছিলেন আক্রম। শেষ ওভারের প্রথম বলে উইকেট খুইয়ে ভিলেন হয়েছিলেন ইমাদ ওয়াসিম’ও (Imad Wasim)। ‘ভারত জেতে নি বরং পাকিস্তান হেরেছে’ এই বার্তাই ওয়াঘা সীমান্তের পশ্চিম পাড়ের নেটজগতে ছড়িয়ে পড়েছিলো ম্যাচের পর। একই সাথে উঠেছিলো ইচ্ছাকৃত হার, বা ‘ম্যাচ ফিক্সিং’-এর অভিযোগ।
ফিক্সিং নয়, মানসিকতাকে দুষলেন ইমাদ-
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর যে ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বেশী আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতেই থাকবেন ইমাদ ওয়াসিম (Imad Wasim)। তারকা অলরাউন্ডার অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) খেলার জন্য। কিন্তু হতাশ করেছেন তিনি। টিম ইন্ডিয়ার (Team India) বিরুদ্ধে ‘ফিনিশার’ হিসেবে নেমে ২৩ বলে ১৫ করে সাজঘরে ফেরেন। চাপ সামলাতে পারেন নি। নিউ ইয়র্কের বিপর্যয়ের দায় নিজের কাঁধেই নিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে জানান, “আমার কাজ ছিলো ফিনিশিং করা। আমি তা করতে পারি নি। আমারই ভুল ছিলো। এর জন্য অবশ্যই আমার অনুশোচনা রয়েছে।” তবে পাকিস্তান দলের অন্দরের হালত যে বিশেষ ভালো নয়, তাও স্পষ্ট হয়েছে ইমাদ ওয়াসিমের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার থেকে।
পাক অলরাউন্ডার জানান, “আমার মনে আমাদের হারের অন্যতম প্রধান কারণ আমাদের মানসিকতা। ব্যর্থতার ভয় মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে আমাদের, নতুন কিছু চেষ্টা করতে হবে। পুরোটাই মানসিকতার খেলা। বাকি দলগুলোও নিজেদের ভাবনাচিন্তা বদলেছে, আমরা তাদের থেকে পিছিয়ে রয়ে গিয়েছি, কারণ আমরা নিজেদের ভাবনা গুলোকে বদলাই নি। এটা আমার বলার এক্তিয়ার নেই, তবুও আমি মনে করি যে দলে বড়সড় বদল হওয়া উচিৎ। যাতে আমরা আগামীতে আমরা বড় মঞ্চে লড়াই করতে পারি।” আয়ারল্যান্ড-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় বিদায় নিশ্চিত হয়েছিলো পাক দলের। ইমাদ জানান, “আবহাওয়া তো কারও হাতে নেই। গত সপ্তাহ জুড়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। মাঠকর্মীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদেরই এই পরিস্থিতিতে পড়া উচিৎ হয় নি।”
দেখে নিন কি জানাচ্ছেন ইমাদ-
“𝐈 𝐡𝐚𝐯𝐞 𝐥𝐞𝐭 𝐦𝐲 𝐭𝐞𝐚𝐦 𝐝𝐨𝐰𝐧, 𝐚𝐧𝐝 𝐈 𝐰𝐢𝐥𝐥 𝐫𝐞𝐠𝐫𝐞𝐭 𝐢𝐭.” – Imad Wasim on his innings against 🇮🇳#PakPassion #INDvsPAK #ImadWasim pic.twitter.com/Pokv39PELy
— PakPassion.net (@PakPassion) June 15, 2024
Also Read: T20 World Cup: জুনিয়র সাকিবের দাপটে নেপালকে হারালো বাংলাদেশ, পা রাখলো সুপার এইটে !!