ভারতীয় দলের পেসার মহম্মদ শামি’র (Mohammed Shami) সাথে সম্পর্কের তিক্ততা দিন বেড়েই বেড়েই চলেছে হাসিন জাহানের (Hasin Jahan)। তাঁরা একসাথে থাকেন না বহুদিন। একে অন্যকে নানান অভিযোগের তীরে বিদ্ধ করেছেন এর মধ্যে। বিষয়টি গড়িয়েছে আইন আদালত অব্দি। এবার সেই আদালতেই খানিক স্বস্তি’র খবর শুনলেন মহম্মদ শামি’র বিচ্ছিন্না স্ত্রী। ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব’কে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিলো হাসিনের বিরুদ্ধে অপমানজনক, অশ্লীল পোস্ট বা কমেন্ট প্রকাশ করা যাবে না। এছাড়াও ইতিমধ্যে যেসব অশ্লীল বা অপমানজনক ভিডিও বা পোস্ট হাসিনের (Hasin Jahan) নামে করা হয়েছে তাও ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম’কে। মহামান্য আদালত শামি’র বিচ্ছিন্না স্ত্রী’কেই অনুরোধ করেছে কোন কোন পোস্টগুলিতে তাঁর চরিত্রহনন করা হয়েছে তা পুলিশ এবং কর্তৃপক্ষ’কে জানাতে। দ্রুত সরিয়ে ফেলা হবে সেসব, জানিয়েছেন মহামান্য বিচারপতি।
শামির সাক্ষাৎকারে বিপাকে পড়েন হাসিন জাহান –

বীরভূমের সিঊড়ির মেয়ে হাসিন জাহান (Hasin Jahan) পেশায় একজন মডেল এবং অভিনেত্রী। ২০১৪ সালে ভারতীয় দলের পেসার শামি এবং হাসিন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একটি ছোটো মেয়েও আছে। সুখের সংসারে ভাঙন ধরে কয়েক বছরের মধ্যেই। ফেসবুকে বেশ কিছু চ্যাট শেয়ার করে হাসিন তাঁর সুপারস্টার স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ আনেন। তুলকালাম পড়ে যায় ভারতের ক্রিকেট্মহলে। এরপর এক সাক্ষাৎকারে পালটা হাসিনের নামেও কিছু কথা বলেছিলেন শামি। সেই থেকেই শামিভক্তদের নিশানায় তিনি। এমনকি বাদ যায় নি তাঁদের শিশুকন্যাও। একাধিকবার অন্তর্জাল ট্রলদের অশ্লীলতার শিকার হতে হয়েছে ছোট্ট মেয়েটিকে।
পোস্টের পরিমাণ দেখে অবাক বিচারপতি-

হাসিন জাহানের (Hasin Jahan) বিরুদ্ধে অপমানজনক এবং চরিত্রহননকারী পোস্টের পরিমাণ দেখে অবশ্য চমকেছেন কলকাতা হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতি জাস্টিস রাজশেখর মান্থা’ও। পোস্ট মুছ এফেলার নিদান দিলেও ইউটিউবের মত সুবিশাল প্ল্যাটফর্মের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা এত পরিমাণ পোস্ট সত্যিই মোছা যাবে কিনা সে বিষয়ে বেশ সন্দিহান মাহামান্য বিচারপতি। তিনি একে ‘নিরর্থক প্রচেষ্টা’ আখ্যা দিয়েছেন। আদালতে হাসিনের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী জানান ২০১৯ সালে তাঁর মক্কেল প্রথমবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা নিয়ে। সেই মামলা এখনো বিচারাধীন। আর তারপর থেকে যত সময় গিয়েছে ইউটিউব এবং ফেসবুকের মত ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম বা সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে উত্তরোত্তর বেড়েছে হাসিন এবং তাঁর শিশুকন্যা’কে নিয়ে কটুক্তির পরিমাণ। মহম্মদ শামি (Mohammed Shami) যেহেতু ভারতীয় ক্রিকেট দলের একজন নক্ষত্র, তাঁর ভক্তেরা দিনের পর দিন হাসিন’কে হেনস্থা করছেন বলে অভিযোগ আইনজীবী’র। পুলিশ আদালতে জানায় যে তারা এর আগেও ইউটিউব এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে পোস্ট মুছতে অনুরোধ করেছিলো। ফেসবুক থেকে পোস্ট গায়েব হলেও অপমানজনক ভিডিওগুলো নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয় নি ইউটিউব।
শুধু অনলাইনে থেমে থাকে নি হেনস্থা, নির্বিকার ছিলো পুলিশ-

আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী আরও জানান যে ইন্টারনেটের চৌহদ্দির বাইরেও রীতিমত নাকাল হতে হয়েছে তাঁর মক্কেল এবং তাঁর শিশুকন্যা’কে। এমনকি রাস্তায় তাঁদের ঘিরে ধরেও ভয় দেখানো হয়েছে বলে মহামান্য আদালতের সামনে অভিযোগ করেন তিনি। এই নিয়ে তিনি কলকাতা পুলিশের হেডকোয়ার্টার লালবাজারের সাইবার ক্রাইম শাখায় আগেই অভিযোগ জানিয়েছেন। কোনো সুরাহা না হওয়ায় হাইকোর্টের কাছে আবেদন করা ছাড়া উপায় ছিলো না হাসিন জাহানের। মনে করছেন আইনজীবী। আশীষ কুমার চৌধুরী আরও জানান যে হাসিন জাহান একজন উঠতি অভিনেত্রী। এইভাবে নিয়মিত চরিত্রহনন চলতে থাকলে তাঁর কেরিয়ারের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়াও দিনের পর দিন যেভাবে ইন্টারনেটে, অজস্র সমাজমাধ্যমে তাঁর চরিত্র নিয়ে কুৎসা করা হচ্ছে তা সাইবার অ্যাক্ট অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবুও এখনও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য কলকাতা পুলিশের দিকেও আঙুল তুলেছেন তিনি।