এগিয়ে আসছে এশিয়া কাপ। আগামী ৩০ অগস্ট থেকে ক্রিকেটে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লড়াইতে মুখোমুখি হবে ছয় দল। এবারের এশিয়া কাপ পাকিস্তানে আয়োজিত হওয়ার কথা থাকলেও ভারতের আপত্তিতে সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতা আয়োজন থেকে সরে আসতে হয় তাদের। বদলে যুগ্ম আয়োজক হিসেবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের তরফ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো শ্রীলঙ্কাকে। ২০২২ সালের এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা দেশের মাটিতে সাফল্যের পুনরাবৃত্তি চাইবে। এবারের এশিয়া কাপ (Asia Cup) আয়োজিত হবে ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে। মাঝে পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটে শ্রীলঙ্কার ফর্ম তলানিতে ঠেকলেও সেই খারাপ সময় কাটিয়ে উঠেছে দাসুন শানাকার দল। সম্প্রতি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলায় ভালো পারফর্ম করেছে তারা। জিম্বাবুয়েতে কোয়ালিফায়ার টুর্নামেন্ট জিতেই জায়গা করে নিয়েছে অক্টোবর-নভেম্বরের বিশ্বকাপে।
আসন্ন এশিয়া কাপে (Asia Cup) বি-গ্রুপে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। গ্রুপ পর্বে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ। গতবারের টুর্নামেন্টে লঙ্কান লায়নসদের জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (Wanindu Hasaranga)। টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কার পেয়েছিলেন তিনি। সুপার-ফোর পর্বে এবং ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। আর বল হাতেও টুর্নামেন্টে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। সাদা বলের খেলায় আরও একবার এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলের অন্যতম ভরসা হতে চলেছেন তিনি। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছেন। সম্প্রতি লঙ্কা প্রিমিয়ার লীগেও (LPL) ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন। সীমিত ওভারের খেলায় ফোকাস করতে হাসারাঙ্গা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর।
Read More: “রেকর্ড নিয়ে ও আদৌ ভাবিত নয়…” বিরাট কোহলির ক্রিকেট দর্শন নিয়ে মুখ খুললেন রবিন উথাপ্পা !!
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর হাসারাঙ্গার-
লাল বলের ফর্ম্যাটে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত নন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (Wanindu Hasaranga)। বরং সাম্প্রতিক অতীতে তাদের হয়ে টেস্টে স্পিনার হিসেবে প্রভাত জয়সূর্য এবং রমেশ মেন্ডিসই সুযোগ পেয়েছেন। টেস্ট কেরিয়ারে মাত্র ৪টি ম্যাচ খেলেছেন হাসারাঙ্গা। ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে নিজের বোলিং গড় নিঃসন্দেহে ভুলতে চাইবেন তিনি। হাসারাঙ্গা (Wanindu Hasaranga) ৪ উইকেট পেয়েছেন ১০০.৭৫ বোলিং গড়ে। ব্যাট হাতেও বিশেষ কার্যকরী হতে দেখা যায় নি তাঁকে। ২৮ গড়ে ১৯৬ রান করেছেন ৭ ইনিংসে। সর্বোচ্চ ৫৯ রান। সাদা বলের ফর্ম্যাটে দলের অন্যতম ম্যাচ উইনার হলেও টেস্টে বিশেষ সুবিধা করতে না পারায় মাত্র ২৬ বছরেই অবসর নিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। এমনটাই জানা যাচ্ছে নিউজ ওয়্যার সূত্রে।
হাসারাঙ্গার (Wanindu Hasaranga) টেস্ট পরিসংখ্যান বিশেষ উল্লেখযোগ্য না হলেও সীমিত ওভারের খেলায় বিশ্ব ক্রিকেটে এই মুহূর্তে অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন তিনি। ওডিআই-তে ৪২ ইনিংসে ২৪ গড়ে ৮৩২ রান করেছেন তিনি। লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করে ১১০.১৯ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখেছেন তিনি। অর্ধশতকের সংখ্যা ৪। বল হাতে ৬৭ উইকেটের মালিক হাসারাঙ্গা। গড় ২৮.৭৭। একবার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার নজিরও রয়েছে তাঁর। টি-২০তে দেশের হয়ে ৫৮ ম্যাচে ৫৩৩ রান করেছেন তিনি। এর মধ্যে গত বছরের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো ৩৬ রানের ইনিংসটিও সামিল রয়েছে। তিনি করেছেন ১টি অর্ধশতক। বল হাতে প্রায় অবিশ্বাস্য ১৫.৮০ গড়ে ৯১ উইকেট নেওয়ার নজির রয়েছে তাঁর।
বিরাট-যোগ রয়েছে হাসারাঙ্গার-
ভারতীয় কিংবদন্তি বিরাট কোহলির সাথেও সাজঘর ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ হয়েছে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার (Wanindu Hasaranga)। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে ২০২২-এর মেগা অকশনে কোহলির (Virat Kohli) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বিনিময়ে তাঁকে দলে নেয়। তাঁর ১ কোটি টাকা বেস প্রাইসের দশ গুণেরও বেশী দামে বিক্রি হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH), পাঞ্জাব কিংসের (PBKS) সাথে নিলাম যুদ্ধ চালিয়ে জয়ী হয় আরসিবি। প্রথম মরসুমে ব্যাট হাতে বেঙ্গালুরুর হয়ে বিশেষ সুবিধা করতে পারেন নি হাসারাঙ্গা। ১৬ ম্যাচে মাত্র ৩৮ রান করেন। কিন্তু দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন তিনি। তুলে নেন ২৬ উইকেট। ২০২৩-এ অবশ্য সেরা ফর্মে দেখা যায় নি তাঁকে। কোহলি, দু প্লেসিদের দলের হয়ে ৮ ম্যাচে ৩৩ রান এবং ৯ উইকেট নেন তিনি।
হাসারাঙ্গা (Wanindu Hasaranga) টেস্ট অবসর নিলেও তাঁর আইপিএল সতীর্থ বিরাট কোহলি (Virat Kohli) টেস্টে এই মুহূর্তে চমৎকার ছন্দে রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আহমেদাবাদে ১৮৬ রানের ম্যারাথন ইনিংস খেলেছিলেন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে্র (WTC) ফাইনালে ১৪ এবং ৪৯ রান করে ফিরলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে রানের মুখ দেখেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ডোমিনিকায় করেন ৭৬ রান। দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২৯তম টেস্ট শতরান। ১১১ ম্যাচে বর্তমানে ৮৬৭৬ করেছেন তিনি। ব্যাটিং গড় ৪৯.৩। পঁয়ত্রিশ ছুঁইছুঁই বিরাটের (Virat Kohli) ক্রিকেট কেরিয়ার কোন পথে এগোবে তা বোঝা যাবে আসন্ন বিশ্বকাপের পর। গত এক বছর ধরে আন্তর্জাতিক টি-২০ খেলেন নি তিনি। বিশ্বকাপ শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফর্ম্যাটকে বিদায় জানাতে পারেন তিনি।