কলম্বোর বাইশ গজে ঘোরতর সমস্যার সম্মুখীন টিম ইন্ডিয়া (Team India)। একদিনের ক্রিকেটে ধারে-ভারে অনেকখানি পিছিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হারতে হলো ২-০ ব্যবধানে। টি-২০তে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে দাপুটে সিরিজ জয়ের পর পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটেও ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিলো ভারত। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যেতে সময় লাগে নি। প্রথম ম্যাচটিতে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেও সাফল্যের স্বাদ পায় নি দল। টাই হয় সেটি।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে ভারতকে (Team India) কোনো রকম সুযোগই দেন নি লঙ্কানরা। ঘূর্ণি বোলিং-এর জালে আটকা পড়ে নাজেহাল হতে হয় ব্যাটারদের। যথাক্রমে ৩২ ও ১১০ রানের বিশাল ব্যবধানে দুটি ম্যাচ হারে টিম ইন্ডিয়া। ২৭ বছর পর লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ হারের পর প্রশ্নের মুখে কোচ গম্ভীর (Gautam Gambhir)। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে যেমন আঙুল উঠছে তাঁর দিকে, তেমনই হর্ষিত রাণা’কে (Harshit Rana) না খেলানোর সিদ্ধান্তও বোধগম্য হচ্ছে না অনেকের।
Read More: ভারতীয় ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন ঈশান কিষণ, কোটি টাকার বিনিময়ে এই দেশের হয়ে খেলার প্রস্তাব পেলেন !!
আইপিএলে নজর কেড়েছিলেন রাণা-

ভারতীয় ক্রিকেটের উঠতি তারকাদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন হর্ষিত রাণা (Harshit Rana)। দিল্লীর তরুণ নিয়মিত ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বা তার বেশী গতিতে বল করে যেতে পারেন। লোয়ার অর্ডারে তাঁর ব্যাটিং-এর হাত’ও বেশ ভালো। ইতিমধ্যেই ঘরোয়া ক্রিকেটে শতরান রয়েছে তাঁর। গত বছরের এমার্জিং এশিয়া কাপে ভারত-এ’র (India-A) জার্সিতে এসেছিলেন লাইমলাইটে। ফাইনালে পাকিস্তান-এ’র কাছে হারতে হলেও গোটা টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্ম করেছিলেন হর্ষিত। সেই ধারাবাহিকতা তিনি বজায় রাখেন ২০২৪-এর আইপিএলেও (IPL)। নাইট রাইডার্সের তৃতীয় খেতাব জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিলো হর্ষিতেরও। মিচেল স্টার্ক, আন্দ্রে রাসেলদের (Andre Russell) পিছনে ফেলে নাইটদের সফলতম পেসার হন তিনিই। নেন ১৯ উইকেট।
বিতর্ক পিছু ছাড়ে নি হর্ষিতের-

ভালো পারফর্ম্যান্সের পাশাপাশি আইপিএলে (IPL) একাধিকবার বড়সড় বিতর্কেও জড়িয়েছিলেন হর্ষিত রাণা (Harshit Rana)। মরসুমের প্রথম ম্যাচেই তাঁর সাথে বচসা হয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের মায়াঙ্ক আগরওয়ালের। অরেঞ্জ আর্মি’র ওপেনার’কে আউট করার পর উদ্যাপনে মাতেন হর্ষিত। সাজঘরমুখী ব্যাটারের দিকে ছুঁড়ে দেন ফ্লাইং কিস। বিষয়টি ভালো লাগে না মায়াঙ্কের। তিনি পালটা কিছু বলেন। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইডেনের পরিস্থিতি। এরপর দিল্লী ক্যাপিটালসের (DC) বিরুদ্ধেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। অভিষেক পোড়েলকে আউট করেও আগ্রাসী সেলিব্রেশনে মাতেন তিনি। তাঁর উদ্যাপনের ভঙ্গি মনপসন্দ হয় নি আইপিএলের কর্মকর্তাদের। কোড অফ কন্ডাক্ট ভাঙার অপরাধে এক ম্যাচ নির্বাসিত হন তিনি। ট্রফি জয়ের পর অবশ্য গোটা দল’কে হর্ষিতের মতই ফ্লাইং কিস ছুঁড়তে দেখা গিয়েছিলো ক্যামেরার দিকে।
জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা হলো না-

আইপিএল ও ঘরোয়া ক্রিকেটের আঙিনায় দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স করার পর হর্ষিতের (Harshit Rana) পরবর্তী লক্ষ্য ছিলো টিম ইন্ডিয়া (Team India)। শুভঙ্কর মিশ্রের জনপ্রিয় পডকাস্ট অনুষ্ঠানে সে কথা নিজেই জানিয়েছিলেন দিল্লীর তরুণ। প্রার্থনা মেনেই যেন এগোচ্ছিলো তাঁর কেরিয়ার গ্রাফ। জুলাই-এর গোড়াতেই মিলে গিয়েছিলো জিম্বাবুয়ে সফরের স্কোয়াডে জায়গা। প্রথম তিনটি টি-২০তে ছিলেন তিনি। কিন্তু কার্যনির্বাহী কোচ ভিভিএস লক্ষ্মণ (VVS Laxman) মাঠে নামান নি তাঁকে। নাইট রাইডার্সে তিনি কাজ করেছেন গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) সাথে। তাঁর নামই ভারতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর মনে করা হয়েছিলো যে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) রাস্তাটা ঈষৎ সহজ হতে চলেছে হর্ষিতের জন্য।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিলো জসপ্রীত বুমরাহ’কে (Jasprit Bumrah)। ১৫ সদস্যের দলে হর্ষিতের (Harshit Rana) নাম দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন যে কলম্বোতে অভিষেক হতে চলেছে তাঁর। পছন্দের ছাত্রকে মাঠে নামার সুযোগ করে দেবেন ‘গুরু’ গম্ভীর (Gautam Gambhir)। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সফরের মতই স্বপ্নপূরণ হলো না এবারও। দীর্ঘায়িত হলো অপেক্ষা। ভারতের (Team India) হয়ে আর্শদীপ সিং (Arshdeep Singh), মহম্মদ সিরাজ (Mohammed Siraj), খলিল আহমেদের মত পেসার মাঠে নেমেছেন সদ্যসমাপ্ত সিরিজে। বিশেষ সাফল্য পান নি কেউই। বিশেষ করে সিরাজের (Mohammed Siraj) পারফর্ম্যান্স রীতিমত সমালোচিত হয়েছে ক্রিকেটমহলে। কিন্তু তাও বিকল্প হিসেবে মাঠে নামার ছাড়পত্র দেওয়া হয় নি হর্ষিত’কে। তাঁকে থাকতে হয়েছে রিজার্ভ বেঞ্চেই।