২০২৬’র পর ২০২৩। প্রায় ৭ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হারলো টিম ইন্ডিয়া। নির্ণায়ক ম্যাচে ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারহিলে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। দুই ওপেনারকে শুরুতেই ফিরিয়ে দেন আকেল হোসেন। এরপর তিলক বর্মা এবং সূর্যকুমার যাদব টিম ইন্ডিয়াকে খানিক স্থিরতা দেন। সূর্যকুমারের ব্যাটে এলো সিরিজের দ্বিতীয় অর্ধশতরান। তিনি ৬১ রান করে ফিরতেই অবশ্য তাসের ঘরের মত ভাঙলো ভারতের ব্যাটিং। পরপর উইকেট তুলে নেন রোমারিও শেপার্ড (Romario Shepherd)। শেষমেশ ১৬৫ রান স্কোরবোর্ডে তোলে তারা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে কাইল মেয়ার্সের উইকেট হারালেও দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফেরে উইন্ডিজ। ব্র্যান্ডন কিং এবং নিকোলাস পুরানের ঝোড়ো ইনিংস ২ ওভার বাকি থাকতেই সিরিজ জিতিয়ে দেয় উইন্ডিজকে।
আগামী বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঠেই বসবে টি-২০ বিশ্বকাপের আসর। ২০০৭-এর পর দেড় দশক কেটে গেলেও দ্বিতীয়বার কুড়ি-বিশের বিশ্বখেতাব জেতা হয় নি টিম ইন্ডিয়ার (Team India)। ২০২২-এর সেমিফাইনালে ১০ উইকেটে হারের পর থেকেই নয়া পন্থা নিয়েছিলো বিসিসিআই। সিনিয়রদের ছেঁটে ফেলে তারুণ্যে ঠাসা এক দল গড়ে তুলতে চেয়েছিলো তারা। রোহিতকে সরিয়ে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিলো হার্দিক পান্ডিয়ার (Hardik Pandya) হাতে। গত বছর আইপিএল জয়ের পর জাতীয় দলের হয়েও অধিনায়কত্বের অধ্যায়টা ভালোভাবেই শুরু করেছিলেন হার্দিক। কিন্তু থামতে হলো ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে এসে। যেভাবে তিনি ও তাঁর দল ক্যারিবিয়ান চ্যালেঞ্জ সামলাতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে সিরিজ খোয়ালেন, তার পর প্রশ্ন উঠতেই পারে হার্দিকের অধিনায়কত্ব নিয়ে।
Read More: WC 2023: ছুটি হতে চলেছে শামি ও সিরাজের, বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাচ্ছেন রোহিত পত্নীর ‘প্রাক্তন’ !!
কাঠগড়ায় হার্দিকের অধিনায়কত্ব-
এর আগে চারটি টি-২০ সিরিজে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। প্রতিটিতেই জিতেছিলো টিম ইন্ডিয়া। এই প্রথম মুখ থুবড়ে পড়লো হার্দিকের বিজয়রথ। নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম হারের সম্মুখীন হতে হলো তাঁকে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে হারের পর প্রশ্নের মুখে হার্দিকের অধিনায়কত্ব। দ্বিতীয় ম্যাচে যুজবেন্দ্র চাহাল (Yuzvendra Chahal) ছন্দে থাকা সত্ত্বেও আচমকাই ডেথ ওভারে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে কেনো মুকেশ কুমার ও আর্শদীপ সিং-কে ব্যবহার করলেন ভারত অধিনায়ক? উঠছে প্রশ্ন। সেই ম্যাচে এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ভারতকে চালকের আসনে প্রায় বসিয়ে দিয়েছিলেন চাহাল। কিন্তু হার্দিকের (Hardik Pandya) একটা ভুল সিদ্ধান্তে ম্যাচ হয় হাতছাড়া।
এছাড়াও ব্যাপক সমালোচনার মুখে হার্দিকের (Hardik Pandya) কিছু মন্তব্য। টি-২০ সিরিজে আগাগোড়া হারকে বিশেষ আমল না দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। ম্যাচ শেষে বারবার জানিয়েছেন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় দল। সিনিয়রদের সরিয়ে ধীরে ধীরে জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে নতুন মুখদের। ফলে কয়েকটি ম্যাচে হার স্বাভাবিক। এমনকি গতকাল সিরিজ হেরেও হার্দিককে (Hardik Pandya) মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে যে, “মাঝে মাঝে হারা ভালো। তা উপকারে লাগে।” জেতার মানসিকতা ছেড়ে হারকে ‘জাস্টিফাই’ করার মানসিকতা কেন? প্রশ্ন তুলেছেন সমর্থকেরা। এমনকি হার্দিকের মানসিকতাকে তুলোধোয়া করেছেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। কয়েকদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দেশের সিনিয়র দল যখন মাঠে নামবে তখন জয়ই একমাত্র মন্ত্র হওয়া উচিৎ। পরীক্ষানিরীক্ষা সীমাবদ্ধ থাক ভারত-এ বা ভারত-বি দলের জন্য।”
দলে প্রশ্নের মুখে হার্দিকের স্থান-
কেবল অধিনায়কত্ব নয়, দলে কোন যুক্তিতে হার্দিক পান্ডিয়াকে (Hardik Pandya) জায়গা দেওয়া হবে সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ক্যারিবিয়ান সফরে একদিনের সিরিজ এবং টি-২০ মিলিয়ে মোট আট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা অ্যাকাডেমি মাঠে একটি অর্ধশতক ছাড়া উল্লেখযোগ্য রান একটি ইনিংসেও পান নি তিনি। বরং রোমারিও শেপার্ড, জেসন হোল্ডারদের (Jason Holder) বিপক্ষে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। র্যাঙ্কিং-এ অনেক পিছিয়ে থাকা উইন্ডিজের বিরুদ্ধেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে এশিয়া কাপ বা একদিনের বিশ্বকাপে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডের মত প্রবলতর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কেমন করবেন হার্দিক? ভরসা পাচ্ছেন না সমর্থকেরা।
উইন্ডিজ সফরে বল হাতেও ধারাহিকতা দেখাতে পারেন নি পান্ডিয়া। নিকোলাস পুরান’কে (Nicholas Pooran) তৃতীয় ম্যাচের পর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছিলেন, “নিকি যদি চায় তাহলে আমায় মেরে দেখাক।” এর ফল সুখকর হয় নি তাঁর জন্য। গতকালের ম্যাচে তাঁর বলে জোড়া ছক্কা হাঁকান পুরান। বরং হার্দিকের বদলে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে শার্দুল ঠাকুর (Shardul Thakur) বা শিবম দুবেকে (Shivam Dube) খেলিয়ে দেখার দাবী উঠছে। ওভালের কঠিন উইকেটে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অর্ধশতরান করতে দেখা গিয়েছিলো শার্দুলকে। বল হাতেও গুরুত্বপূর্ণ সময় পার্টনারশিপ ভাঙতে সিদ্ধহস্ত তিনি। পাশাপাশি দুবেও আইপিএল এবং দেওধর ট্রফিতে বেশ ভালো খেলেছেন। তৃতীয় বিকল্প হিসেবে উঠে আসছেন তিলক বর্মা (Tilak Varma)। বাঁ-হাতি ব্যাটিং-এর পাশাপাশি অফস্পিনও করেন তিনি। ভারতের স্পিন সহায়ক উইকেটের কথা মাথায় রেখে হার্দিককে বাইরে রেখে তিলককেও বিশ্বকাপের একাদশে জায়গা দিতে পারে দল।