গত কয়েকটা মাস বেশ ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে হার্দিক পান্ডিয়ার (Hardik Pandya) ক্রিকেট কেরিয়ার। আইপিএলের আগে নিজের পুরনো দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে ফেরা নিয়ে বেশ উত্তেজিত ছিলেন তিনি। কিন্তু সমর্থকেরা অধিনায়ক হিসেবে মেনে নেন নি তাঁকে। সোশ্যাল মিডিয়ায়, এমনকি গ্যালারি থেকেও তাঁর দিকে উড়ে আসে কটাক্ষ, কটূক্তি। এরইমধ্যে ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহবিচ্ছেদের সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। যন্ত্রণার উপশম মিলেছিলো টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup)। ট্রফি জয়ের অন্যতম কারিগর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন হার্দিক (Hardik Pandya)। রোহিত শর্মা টি-২০ থেকে সরে দাঁড়ানোয় পরবর্তী নেতার দৌড়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু ফের ধাক্কা খেতে হয় তাঁকে। নয়া কোচ গম্ভীর ও নির্বাচক প্রধান সূর্যকুমার যাদবের (Suryakumar Yadav) হাতে দেন দায়িত্ব। অধিনায়কত্বের মুকুট হাতছাড়া হওয়ার পর নতুন উদ্যমে নিজেকে মেলে ধরার সংকল্প নিয়েছেন হার্দিক।
Read More: রোহিত শর্মা T20 থেকে অবসর নিতেই ক্যারিয়ারে তালা পড়লো জসপ্রীত বুমরাহের, এন্ট্রি নিলেন ক্যাপ্টেনের হামশাকাল !!
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুরন্ত ক্রিকেট হার্দিকের-
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজে কেবল দুটি ম্যাচই খেলেছিলেন হার্দিক (Hardik Pandya)। তৃতীয় ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। ছুটি কাটাতে উড়ে গিয়েছিলেন গ্রীসে। ভুমধ্যসাগরের তীর থেকে তরতাজা হয়ে যে ফিরেছেন তার প্রমাণ তিনি দিলেন গতকাল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। গ্বালিয়রের মাঠে যাবতীয় ক্রিকেটীয় অ্যাকশনের কেন্দ্রবিন্দুতে রইলেন ভারতের তারকা অলরাউন্ডার। প্রথমে তাওহিদ হৃদয় ও রিশাদ হোসেনের (Rishad Hossain) ক্যাচ তালুবন্দী করেন তিনি। এরপর ভূমিকা নেন তাস্কিন আহমেদের রান-আউটে। শরিফুল ইসলামের উইকেট’ও তুলে নেন বল হাতে। গতকাল নিজের ৪ ওভারের বোলিং কোটায় ১ উইকেটের বিনিময়ে মাত্র ২৬ রান দিয়েছেন হার্দিক (Hardik Pandya)। ইকোনমি রেট ৬.৫০। টি-২০তে যাকে চমৎকার বলতেই হয়।
ব্যাট হাতেও গতকাল গ্বালিয়রের বাইশ গজে জ্বলে উঠতে দেখা গেলো হার্দিক পান্ডিয়াকে (Hardik Pandya)। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। তাঁর আগ্রাসী অবতারের সামনে খড়কুটোর মত উড়ে গেলো বাংলাদেশী বোলিং। ৪৯ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতেছে ভারত। তৈরি করেছে নয়া রেকর্ড। সাফল্যের নয়া শৃঙ্গজয়ের অন্যতম কাণ্ডারী হার্দিকই। ১২তম ওভারে তাস্কিন আহমেদকে জোড়া বাউন্ডারি ও ছক্কা মেরে ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করেন তিনিই। অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ৩৯ করে। ওভারের তৃতীয় বলটিতে ‘নো লুক’ আপার কাট মারতে দেখা গেলো হার্দিককে (Hardik Pandya)। বল যখন থার্ড ম্যান বাউন্ডারির দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, একবারও ঘুরেও তাকালেন না তিনি। আত্মবিশ্বাসের শীর্ষে যে তিনি রয়েছেন তার প্রমাণ মিলেছে ঐ একটি শট থেকেই।
আবারও আসতে পারে অধিনায়কত্বের সুযোগ-
২০২২ থেকে টিম ইন্ডিয়ার সহ-অধিনায়কত্ব করে এসেছেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। রোহিত শর্মা’র অনুপস্থিতিতে সাদা বলের দুই ফর্ম্যাটেই দিয়েছেন নেতৃত্ব’ও। হিটম্যানের উত্তরসূরি হিসেবে তাঁকে যে তৈরি করা হচ্ছে তা স্পষ্ট করেছিলো বিসিসিআই-ও। তবুও গম্ভীর-আগরকারদের অঙ্গুলিহেলনে যখন টি-২০’র মসনদ হাতছাড়া হয় হার্দিকের, তখন অবাক হয়েছিলেন অনেকে। নেতা নির্বাচনের পিছনে যুক্তি হিসেবে আগরকার আঙুল তুলেছিলেন হার্দিকের ফিটনেস সমস্যার দিকে। চোটপ্রবণতার কারণে সত্যিই এর আগে বেশ কয়েক দফায় লম্বা সময় মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে তাঁকে। তবে সেই অন্ধকার থেকে তিনি যে বেরিয়ে আসার পথে, গতকাল বাইশ গজে তারকা অলরাউন্ডার বুঝিয়েছেন তা। যদি এই ফিটনেস এবং ফর্ম দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে পারেন তিনি, তাহলে হার্দিকের প্রতি খানিক নরম হতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। ২০২৬-এর টি-২০ বিশ্বকাপের আগে থাকছে নেতৃত্ব ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাও।