গত এক দশকের বেশী সময় ধরে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জার্সিতে নিরন্তর পারফর্ম করে চলেছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli) এবং রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। মুম্বইয়ের রোহিতই প্রথম পা রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে বেলফাস্টের মাঠে প্রথমবার একদিনের ক্রিকেটে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। সেই একই বছরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডারবানে টি-২০ অভিষেক হয় তাঁর। টেস্ট খেলতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ কয়েক বছর। ২০১৩ সালে ইডেন গার্ডেন্সে দেশের হয়ে লাল বলের খেলায় মাঠে নামার ছাড়পত্র পেয়েছিলেন।
দেড় দশক বিস্তৃত কেরিয়ারে রোহিত (Rohit Sharma) থেকে হয়ে উঠেছেন হিটম্যান। ২৪৩ একদিনের ম্যাচে করেছেন ৯৮২৫ রান, রয়েছে ২৯টি শতরান। এছাড়াও টি-২০তেও ১৪৮ ম্যাচে ৩৮৫৩ রান করেছেন তিনি। ৪টি আন্তর্জাতিক শতরান করেছেন। লাল বলের ক্রিকেটে খানিক ওঠানামার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে তাঁর কেরিয়ার। ৫০ টেস্টে করেছেন ৩৪৩৭ রান। রয়েছে ৯টি শতরানও।
হিটম্যানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আঙিনায় উজ্জ্বল বিরাট কোহলিও (Virat Kohli) । অধিনায়ক হিসেবে ২০০৮-এ অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জিতে সকলের নজরে পড়েছিলেন তিনি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। ২০০৮ সালেই সিনিয়র দলে অভিষেক হয় তাঁর। ডাম্বুলাতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে প্রথমবার দেশের জার্সিতে মাঠে নামেন তিনি। ২০১০ সালে প্রথমবার খেলেন টি-২০। আর উইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটনের মাঠে হয় টেস্ট অভিষেক।
ধীরে ধীরে ধারাবাহিকতার অন্য নাম হয়ে ওঠেন দিল্লীর বিরাট (Virat Kohli) । ব্যাটের জাদুতে মোহিত করেন ক্রিকেটবিশ্বকে। ‘ওডিআই’ ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার কোহলি ২৭৪ ম্যাচে করেছেন ১২৮৯৮ রান। শতরানের সংখ্যা ৪৬টি। ব্যাটিং গড় ৫৮ ছুঁইছুঁই। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে ১০৯ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৮৪৭৯ রান। শতরান ২৮টি। কুডি-বিশের খেলাতেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই। ১১৫ ম্যাচে করেছেন ৪০০৮ রান। শতরান ১টি।
Read More: WC 2023: বিশ্বকাপ ২০২৩’এর জন্য সেরা ৪ দল বেছে নিলেন সৌরভ, দিলেন এই চ্যাম্পিয়ন টিমকে বাদ !!
রোহিত ও বিরাটের উত্তরাধিকারী পেয়েছে ভারত-
ভারতীয় দলের জার্সিতে দুই মহাতারকা গত দশক জুড়ে রাজ করেছেন। এখনও টিম ইন্ডিয়ার (Team India) প্রধান দুই ব্যাটার তাঁরাই। কিন্তু সময় থেমে থাকে না কারও জন্যই। বর্তমানে রোহিতের বয়স স্পর্শ করেছে ৩৬। আর আগামী নম্ভেম্বরে ৩৫-এ পা দেবেন বিরাট কোহলিও। রোহিত-কোহলির পর ভারতীয় দলের ভবিষ্যত কি? উঠছিলো প্রশ্ন। গাওস্করের পর এসেছিলেন তেন্ডুলকর। মাস্টার ব্লাস্টারের উত্তরসূরী হয়েছিলেন কোহলি (Virat Kohli), রোহিতরা (Rohit Sharma)। তাই বর্তমানের সুপারস্টারের উত্তরাধিকার কাদের হাতে দিয়ে যাবেন এই নিয়ে ছিলো জল্পনা। শুভমান গিল (Shubman Gill) ও যশস্বী জয়সওয়ালের (Yashasvi Jaiswal) উত্থানে সেই জল্পনা থেমেছে খানিক। মনে করা হচ্ছে তাঁরাই হতে চলেছেন আগামীর মহাতারকা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উজ্জ্বল শুভমান গিল-
পাঞ্জাবের ২৩ বর্ষীয় শুভমান গিল (Shubman Gill) ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন তিন ফর্ম্যাটেই। ২০১৮ সালের অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপে পরিচিতি লাভ করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত শতরান তাঁকে জায়গা করে দিয়েছিলো খবরের শিরোনামে। সিনিয়র দলের ডাক প্রথম আসে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২০১৯-এ হ্যামিল্টনে কিউইদের বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০২০-তে মেলবোর্নে প্রথম টেস্ট খেলেন তিনি। টি-২০ ক্রিকেটে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জার্সি গায়ে চাপানোর জন্য শুভমানকে (Shubman Gill) অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও কয়েকটা বছর। ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর।
তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে কারও মনেই কোনো সন্দেহ ছিলো না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই প্রতিভার স্বাক্ষর তিনি নিয়মিত রাখতে শুরু করেন ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনবদ্য ক্রিকেট খেলেন তিনি। বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করেন প্রথম টেস্ট শতরান। ২০২৩-এ ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে দেখা গিয়েছে শুভমানকে। শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এসেছে একদিনের ক্রিকেটে শতরান। করেছেন দ্বিশতরানও। পাশপাশি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট শতরানও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ শতরান, ১৭ ম্যাচে ৮৯০ রান করে আইপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে শুভমান (Shubman Gill) বুঝিয়ে দিয়েছেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জন্য লম্বা রেসের ঘোড়া হতে চলেছেন তিনি। কোহলিকে (Virat Kohli) ভক্তেরা ডাকেন ‘কিং কোহলি’ বলে। শুভমানকে ইতিমধ্যেই ‘প্রিন্স’ তকমা দিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
যশস্বীর ব্যাটে বিস্ফোরণ দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব-
ফুচকাওয়ালার সন্তান যশস্বী জয়সওয়ালের (Yashasvi Jaiswal) উত্থানের কাহিনী হার মানাবে সিনেমার গল্পকেও। আক্ষরিক অর্থেই গলি থেকে রাজপথে উঠে এসেছেন তিনি। বাঁ-হাতি যশস্বীই (Yashasvi Jaiswal) হতে পারেন রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) বিকল্প। শুভমান গিলের (Shubman Gill) সাথে তাঁর ডান হাতি-বাঁ হাতি জুটে জমে যেতে পারে বলে আশা অনেক ক্রিকেটবোদ্ধারই। অনূর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। সেই সময়েই একাধিক দুরন্ত ইনিংস খেলে নজরে পড়েন। এরপর আইপিএলেই গত বছর বেশ কিছু ভালো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০২৩-এ এসে যেভাবে রাজস্থান রয়্যালস জার্সিতে জ্বলে উঠলেন যশস্বী (Yashasvi Jaiswal), তাতে টিম ইন্ডিয়াতে (Team India) তাঁর অভিষেক সময়ের অপেক্ষা বলেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে অদম্য ১২৪, কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে আইপিএলের দ্রুততম অর্ধশতক-একের পর এক মাইলস্টোন পেরিয়েছে যশস্বী (Yashasvi Jaiswal) এই বছর। ১৪ ম্যাচে ৪৮.০৪ গড়ে করেছেন ৬২৫ রান। কোনো আনক্যাপড প্লেয়ারের ক্ষেত্রে আইপিএলের ইতিহাসে যা যথেষ্ট। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের দলে স্ট্যান্ড-বাই হিসেবে ছিলেন তিনি। এরপর উইন্ডিজ সফরে তিন ফর্ম্যাটের দলেই রাখা হয়েছে তাঁকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিং গড় ৮০.২১। ১৫ ম্যাচে করেছেন ১৮৪৫ রান। রয়েছে ৯টি শতরান। ঘরোয়া একদিনের ম্যাচেও প্রায় ৫৪ গড় নিয়ে যশস্বী (Yashasvi Jaiswal) করেছেন ৩২ ম্যাচে ১৫১১ রান। রয়েছে ৫টি শতরান। একুশ বছরের বাঁ-হাতিকে তিন ফর্ম্যাটেই আগামী প্রজন্মের তারকা মনে করা হচ্ছে।