বছর দুয়েক আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হেরেছিলো টিম ইন্ডিয়া (Team India)। প্রথম সুযোগে লাল বলের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হওয়া হয় নি ভারতের। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সুযোগ এসে গিয়েছিলো ভারতের সামনে। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ফলে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে হারিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালে উঠেছিলো রোহিত শর্মার দল। ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে প্রতিপক্ষ ছিলো সেই অস্ট্রেলিয়াই। বছর বদলালেও ভারতের ব্যর্থতার ছবিটা একই রয়ে গেলো। স্টিভ স্মিথ, প্যাট কামিন্সদের বিরুদ্ধে ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে ঘরে ফিরতে হলো বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma)।
আইপিএল-এর দুনিয়া থেকে বেরিয়ে প্রায় সাথে সাথে টেস্ট ক্রিকেটের বৃত্তে পা দিতে হয়েছিলো ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ওভালে হারের পিছনে একে বড় কারণ বলে বর্ণিত করেছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞই। প্রস্তুতির অভাবকে দায়ী করেছিলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাও (Rohit Sharma)। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, “টেস্ট ক্রিকেটের জন্য অনেক বেশী অনুশাসন চাই। ২০-২৫ দিন সময় পাওয়া গেলে ভালো হত।” অধিনায়ক ২০ বা ২৫ দিনের কথা বললেও বাস্তবে আইপিএল ফাইনাল এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের মধ্যে এক সপ্তাহের মত ব্যবধান থাকায় শুভমান গিল, মহম্মদ শামি, রবীন্দ্র জাদেজাদের পক্ষে ধকল কাটিয়ে ওভালে সেরাটা দেওয়া সম্ভব হয় নি। রোহিতের কথার সূত্র ধরেই তোপ দেগেছেন সুনীল গাওস্কর (Sunil Gavaskar)। প্রস্তুতি পর্ব নিয়ে ভারতের সিনিয়র প্লেয়ারদের ঢিলেমিকে সমর্থন করছেন না ‘লিটল মাস্টার।’ রীতিমত কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি।
Read More: সূর্যকুমারের ক্রিকেট কেরিয়ারে লাগতে পারে গ্রহণ, জাতীয় দলে তাঁর জায়গা কেড়ে নেবেন এই তরুণ তুর্কি !!
ওভালের হার থেকে শিক্ষা নিয়েছে ভারত? প্রশ্ন গাওস্করের-
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লজ্জাজনক হারের পর এক মাস সম্পূর্ণ বিশ্রামে ছিলেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) ক্রিকেটাররা। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় কোনো ম্যাচ ছিলো না ভারতীয় দলের। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা ছুটি কাটাতে চলে গিয়েছিলেন। বিরতির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন তাঁরা। ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে ইতিমধ্যেই ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে তিন দিনেই জিতে নিয়েছে প্রথম টেস্ট ম্যাচ। দাপুটে ক্রিকেট খেলে জেসন হোল্ডার, ক্রেগ ব্রেথওয়েটদের হারালেও ভারতের প্রস্তুতি পন্থা নিয়ে খুশি নন সুনীল গাওস্কর (Sunil Gavaskar)। বরং টানা দুইবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হারের পরও কিছুই বদলায় নি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ক্ষুব্ধ গাওস্কর (Sunil Gavaskar) বলেন, “কোন প্রস্তুতির কথা বলছি আমরা? এখন ওরা (ভারতীয় দল) ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছে। আমাদের সামনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের উদাহরণ রয়েছে। তোমরা কি আদৌ কোনো ম্যাচ খেলছ? তাহলে ২০-২৫ দিনের কথা কোথা থেকে আসছে?” ম্যাচ বলতে এখানে প্রস্তুতি ম্যাচের কথা বোঝাতে চেয়েছেন ভারতীয় প্রাক্তনী। প্রসঙ্গত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নি টিম ইন্ডিয়া (Team India)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো স্থানীয় দলের বিরুদ্ধে অনুশীলন ম্যাচ খেলতে দেখা যায় নি রোহিত-বিরাটদের। বরং নিজেদের মধ্যে দুই দলে ভাগ হয়ে একটি ম্যাচ খেলা হয়। এক পক্ষে ছিলেন কেবল ব্যাটাররা, আর অন্য পক্ষে ছিলেন কেবল বোলাররা।
সিনিয়র ক্রিকেটারদের দুষলেন গাওস্কর-
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারত এক ইনিংস এবং ১৪১ রানের ব্যবধানে জিতলেও এই জয়কে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজী নন সুনীল গাওস্কর (Sunil Gavaskar)। উইন্ডিজ সদ্যই বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে নি। তাদের বিরুদ্ধে সহজ জয়ে নিবিড় প্রস্তুতির গুরুত্ব একটুও কমে নি বলে মনে করেন টেস্ট ক্রিকেটে ১০০০০ রানের মাইলস্টোন স্পর্শ করা প্রথম ক্রিকেটার। তিনি বলেন, “আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল যেমন, তাতে টেস্টের একদিন আগে গিয়েও ওদের হারানো সম্ভব। কিন্তু তা যেন আমাদের অনুশীলনের গুরুত্ব সম্পর্কে অন্ধ না করে দেয়। অন্তত ১৫ দিন আগে যাও, দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলো…” ভারতীয় দলকে পরামর্শের ঢঙে বলেছেন গাওস্কর।
দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের থেকে জুনিয়রদের বা সদ্য সুযোগ পাওয়া খেলোয়াড়দের জন্য প্রস্তুতি ম্যাচ অধিক জরুরী বলে মনে করেন সুনীল গাওস্কর (Sunil Gavaskar)। তিনি তাঁর মন্তব্যের সাথে যোগ করেন, “…প্রধান ক্রিকেটাররা বিশ্রাম নিতে পারে। কিন্তু রিজার্ভে থাকা খেলোয়াড়েরা, ফর্মে না থাকা ক্রিকেটারদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার সুযোগ পাবে। (প্রস্তুতি ম্যাচ) না হলে ওরা প্রমাণ করার সুযোগই পায় না যে ওরাও যথেষ্ঠ যোগ্য।” এরপর ভারতীয় দলের ফিটনেস নিয়ে অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং তাঁর সতীর্থদের নিশানা করেছেন গাওস্কর (Sunil Gavaskar)।
বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) প্রস্তুতিতে ঘাটতি থেকে যাওয়ার পিছনে টিম ইন্ডিয়ার সিনিয়র ক্রিকেটারদের গা ছাড়া মনোভাবকে দায়ী করেছেন গাওস্কর (Sunil Gavaskar)। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সত্যি কথা বলতে আমাদের প্রধান খেলোয়াড়রা আগেভাগে যেতে চান না কারণ তাঁরা জানেন যে কোনো অবস্থাতেই দলে তাঁদের জায়গা পাকা। আগে গেলে তাঁরা ওয়ার্কলোডের কথা বলেন। যখন তোমরা নিজেদের সবচেয়ে ফিট দল বলো, অথবা আগের প্রজন্মের তুলনায় ফিট বলো, তাহলে এত দ্রুত কি করে ক্লান্ত হয়ে পড়ো? মাত্র ২০ ওভারের একটা ম্যাচ খেলে ওয়ার্কলোডের সমস্যা কি করে হতে পারে?” ভর্ৎসনার সুরে বলেছেন ভারতীয় কিংবদন্তি।
Also Read: “সহজে ধরা দিই না…” ইন্সটাগ্রাম রিলে মহম্মদ শামির দিকে তীর হাসিন জাহানের !!