১৯৯২ সালে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগ পান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাঁকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট। অভিষেকে নজর কাড়তে পারেন নি তিনি। ফেরেন মাত্র ২ রান করে। এরপরই ছেঁটে ফেলা হয় তাঁকে। কিন্তু হার মানেন নি সৌরভ। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্ম্যান্সের সৌজন্যে ১৯৯৬-তে তাঁকে ফেরাতে বাধ্য হয় বিসিসিআই। ‘ক্রিকেটের মক্কা’ লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হয় বেহালার বাম হাতি। স্যাঁতস্যাঁতে এক দুপুরে অসামান্য এক শতরান করে সৌরভ (Sourav Ganguly) বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে চলেছেন তিনি। এরপর এক দশকেরও বেশী সময় দেশের হয়ে খেলেছেন তিনি। প্রচুর ঘাত-প্রতিঘাত সয়েছেন। দেখেছেন কেরিয়ারের ওঠানামা। কিন্তু কিছুই দমিয়ে দিতে পারে নি তাঁকে। বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বারবার নিজের মসনদে ফিরেছেন মহারাজ।
Read More: IND vs ENG 2nd Test: আইসিসি’র নিয়ম ভেঙে বিতর্কে শুভমান, হতে পারেন নির্বাসিত !!
চ্যাপেলের যড়যন্ত্রে বাদ পড়েন সৌরভ-

২০০৩-এর ডিসেম্বরে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি শুরুর দিনকয়েক আগেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে অস্ট্রেলিয়া উড়ে গিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। অজি প্রাক্তনী গ্রেগ চ্যাপেলের (Greg Chappell) থেকে বাউন্স সামলানোর পরামর্শ নেন তিনি। তার সুফলও পেয়েছিলেন তৎকালীন ভারত অধিনায়ক। গাব্বাতে সিরিজের প্রথম টেস্টেই তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১৪৪ রানের অনবদ্য ইনিংস। সেই সাফল্যের কথা ভোলেন নি সৌরভ (Sourav Ganguly)। ফলে জন রাইট যখন ভারতীয় দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেন, তখন তিনিই উদ্যোগ নিয়ে চ্যাপেলকে নয়া প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন। রাইটের হাত ধরে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিলো টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু অধরা থেকে গিয়েছিলো ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। ২০০৭-এর টুর্নামেন্টের কথা মাথায় রেখেই নিয়ে আসা হয়েছিলো চ্যাপেলকে। তাঁর মগজাস্ত্রকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন সৌরভ।
২০০৫ সালের মে মাসে কোচের হটসিটে বসেন গ্রেগ চ্যাপেল (Greg Chappell)। আর তারপরেই কার্যত ভূমিকম্প দেখা যায় ভারতীয় ক্রিকেটে। দল পরিচালনার পদ্ধতি মনপসন্দ হয় নি নয়া প্রশিক্ষকের। জিম্বাবুয়ে সফরে ভারত জিতলেও অধিনায়ক সৌরভকে (Sourav Ganguly) সরাতে চেয়ে তদ্বির করেন তিনি। তাঁর ফিটনেস, ব্যাটিং শৈলি নিয়ে প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তোলেন অস্ট্রেলীয় প্রাক্তনী। চ্যাপেলের লেখা একটি ই-মেল ঘিরে সেই সময় তীব্র বিতর্ক হয়েছিলো। শেষমেশ ২০০৫-এর নভেম্বর মাসে ওয়ান ডে দল থেকে বাদ দেওয়া হয় বাংলার তারকাকে। অধিনায়কত্ব পান দ্রাবিড়। ২০০৬-এর জানুয়ারিতে টেস্ট দলেও জায়গা হারান মহারাজ। গোটা দেশ জুড়ে সেই সময় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিলো। ইডেনে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ চলাকালীন চ্যাপেল ও টিম ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধেই উড়ে আসে কটাক্ষ, কটূক্তির ঝড়।
প্রত্যাবর্তনের রূপকথা লিখেছিলেন মহারাজ-

কেরিয়ারের শুরু থেকেই ‘সংঘর্ষ’ শব্দটির সাথে বিলক্ষণ পরিচয় ছিলো সৌরভের (Sourav Ganguly)। তাই ২০০৫-এ বাদ পড়ার পরেও ভেঙে পড়েন নি তিনি। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়েরই সিদ্ধান্ত নেন। ফেরেন ঘরোয়া ক্রিকেটের আঙিনায়। রঞ্জি ট্রফি, দলীপ ট্রফির মত প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট যেমন খেলেছেন, তেমন বুচিবাবু টুর্নামেন্ট খেলতেও নির্দ্বিধায় দক্ষিণ ভারতে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর ফিটনেসের দিকে আঙুল তুলেছিলেন চ্যাপেল (Greg Chappell)। অজি কোচ’কে ভুল প্রমাণ করতে ইডেনে পিঠে প্যারাশুট বেঁধে ট্রেনিং করতেও পিছপা হন নি তিনি। বেশীদিন তাঁকে দলের বাইরে রাখার ক্ষমতা হয় নি নির্বাচক কমিটির। ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজে ফেরানো হয় সৌরভকে। জোহানেসবার্গের আগুনে পিচে অন্যেরা যখন হিমশিম খাচ্ছেন, তখন ৫১* রানের ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দেন ফুরিয়ে যান নি তিনি। এরপর সৌরভকে আর বাদ দেওয়ার সাধ্য হয় নি চ্যাপেলেরও।