গত ৯ জুলাই থেকে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে। কোচ হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। এর আগে প্রায় তিন বছর প্রশিক্ষকের চেয়ারে ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। নতুন কোচ আসার পর তাঁর ধ্যানধারণা, স্ট্র্যাটেজির সাথে মানিয়ে নেওয়ার পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া (Team India)। যাকে বলা হচ্ছে টানজিশন পিরিয়ড। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিলো নতুন কোচের। তিনটি করে টি-২০ ও ওডিআই খেলেছে ভারতীয় শিবির। ইতিমধ্যেই দ্রাবিড় ও গম্ভীরের ট্যাকটিক্সের মধ্যে বেশ কিছু তফাৎ চোখে পড়েছে।
পূর্বতন কোচ যেখানে নির্দিষ্ট ব্যাটিং অর্ডার বা বোলিং পরিবর্তনের এক নির্দিষ্ট পন্থা মেনে চলতেন, সেখানে প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়াই গম্ভীরের (Gautam Gambhir) ইউএসপি। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন তিনি। জোর দিয়েছেন অলরাউন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোয়। গম্ভীর-বিরাট (Virat Kohli) সম্পর্কের নদী কোন খাতে বয়, তা নিয়েও প্রশ্ন ছিলো। আপাতত দেখা গিয়েছে ‘ফিল গুড’ পরিবেশ। কোহলিকে রেখেই দল সাজ্জাছেন তিনি। যার ফলে ধাক্কা খাচ্ছে ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের (Ruturaj Gaikwad) কেরিয়ার গ্রোথ।
Read More: সারা’র হাত ছাড়লেন শুভমান গিল, বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন এই বলি অভিনেত্রীর সাথে !!
ভালো খেলেও স্কোয়াডে নেই ঋতুরাজ-
মহারাষ্ট্রের ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের (Ruturaj Gaikwad) আন্তর্জাতিক কেরিয়ার গিয়েছে ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে। ২০২১ সালে আইপিএলে (IPL) দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স করার প্রথমবার সুযোগ পেয়েছিলেন ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামার। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবে বাদ পড়তে হয়। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে ছন্দে ফিরেছিলেন তিনি। দাপুটে পারফর্ম্যান্স ছিলো আইপিএলেও। ২০২৩-এর নভেম্বরে ফেরানো হয় তাঁকে। প্রত্যাবর্তনেই অস্ট্রেলিয়ার (AUS) বিরুদ্ধে করেন টি-২০ শতরান। এরপর ফের বাদ পড়তে হয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। ঋতুরাজ দলে ফেরেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আরও একবার অনবদ্য ব্যাটিং করেন তিনি। ৭৭ ও ৪৯ রানের দুটি চোখধাঁধানো ইনিংস আসে তাঁর থেকে। কিন্তু যথেষ্ট হয় নি তাও।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ ও ওডিআই সিরিজের জন্য যে স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছিলো বিসিসিআই-এর তরফে, সেখানে জায়গা পান নি ঋতুরাজ গায়কোয়াড় (Ruturaj Gaikwad)। মহারাষ্ট্রের ক্রিকেটারের অনুপস্থিতি চমকে দিয়েছিলো কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের মত প্রাক্তনীকেও। তিনি সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানান যে “সীমিত ওভারের দুই ফর্ম্যাটেই নিয়মিত সুযোগ পাওয়া উচিৎ ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের।” কিন্তু চিঁড়ে ভেজে নি। নয়া কোচ গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir) ও নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকারকেও ঋতুরাজের বাদ পড়া নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আগরকার (Ajit Agarkar) রিঙ্কু সিং-এর প্রসঙ্গ টেনে এনে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেন। অপেক্ষা করতে হবে ঋতুরাজকে, নিদান দেন তিনি।
কোহলির জন্যই ব্রাত্য ঋতুরাজ-
টি-২০ ও ওডিআই, সাদা বলের দুই ফর্ম্যাটেই দেখা যাচ্ছে না ঋতুরাজ গায়কোয়াড়’কে (Ruturaj Gaikwad)। ভালো খেলেও তিনি থেকে যাচ্ছেন ব্রাত্য। মহারাষ্ট্রের ক্রিকেটারের বাদ পড়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উঠতে আসছে চমকপ্রদ তথ্য। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবী যে টিম কম্বিনেশনের কারণেই জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। ওডিআই ক্রিকেটে সাধারণত ওপেনিং বা তিন নম্বরে স্বচ্ছন্দ ঋতুরাজ। কিন্তু প্রথম দুই পজিশনে শুভমান গিল (Shubman Gill) ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা’র জায়গা পাকা। তিন নম্বরে খেলেন মহাতারকা বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। ভারতের তিন সেরা ব্যাটিং অস্ত্রকে সরিয়ে কোনো ভাবেই ঋতুরাজকে খেলিয়ে দেখার ঝুঁকি নিতে চান না গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। সেই কারণেই কোচের বাতিলের খাতায় নাম লেখা হয়েছে তাঁর।
পক্ষান্তরে টি-২০তেও প্রায় একই অবস্থা বলা চলে। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তিন বা চার নম্বরে খেলেছিলেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ওপেনিং বা তিন নম্বরেও খেলে থাকেন। পূর্ণ শক্তির ভারতীয় স্কোয়াডে ওপেনিং জুটি হিসেবে ইতিমধ্যেই স্বীকৃত যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal) ও শুভমান গিল। পাঞ্জাবের তরুণের হাতে সহ-অধিনায়কত্ব তুলে দিয়ে বোর্ড বুঝিয়ে দিয়েছে যে আস্থা রাখা হচ্ছে তাঁরই উপর। তিনে ব্যবহার করা হচ্ছে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ঋষভ পন্থকে (Rishabh Pant)। চারে খেলেন বিশ্বসেরা টি-২০ ব্যাটার ও ভারতের নতুন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav)। পাঁচ ও লোয়ার অর্ডারের পজিশনগুলিতে হার্দিক, শিবম দুবে, অক্ষর প্যাটেল, ওয়াশিংটন সুন্দরদের মত অলরাউন্ডারদের ব্যবহার করতে চান গম্ভীর (Gautam Gambhir)। ফলে দরজা বন্ধই থাকছে ঋতুরাজের জন্য।