ক্রিকেটের প্রফেশনাল ওয়েবসাইট সম্প্রতি বিশ্ব ক্রিকেটের গত ২৫ বছরের আল টাইম বেস্ট বাছার দায়িত্ব পালন করেছিল। ইএসপিএনের জুরিরা সম্প্রতিই গত ২৫ বছরের ওয়ান ডে এবং টেস্ট গ্রেট ইলেভেন দলের নির্বাচন করেছিল সেভাবেই এবার ইএসপিএন গত ১২ বছরের গ্রেট টি২০ দল নির্বাচন করেছে।
ক্রিকেট ওয়েবসাইটের একজন জুরি গত ১২ বছরের সবচেয়ে দুর্দান্ত টি২০ দল বাছার চেষ্টা করেছেন যার মধ্যে তিনি তিনজন ভারতীয়কেও জায়গা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দলের অধিনায়কত্বও একজন ভারতীয়র হাতেই অর্পন করেছেন তিনি। এই দলে এক সে এক তারকা প্লেয়ারকে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
ইএসপিএন নির্বাচিত অল টাইম বেস্ট টি২০ দল
ক্রিস গেইল
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলকে টি২০ ফর্ম্যাটে ইউনিভার্সাল বস বলে ধরা হয়। ক্রিস গেইল এই ফর্ম্যাটে এক প্রকার ডন ব্র্যাডম্যানের মতই যিনি ছয় মারায় এবং সেঞ্চুরি ইনিংস খেলায় সকলের আগে থাকার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। গেইল এই ফর্ম্যাটে ৫৩টি ম্যাচে ৩৪.৫৪ গড়ে এবং ১৪৫.৩৭ স্ট্রাইক রেটে ১৫৮৯ রান করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ২টি সেঞ্চুরি এবং ১৩টি হাফ সেঞ্চুরি। এই ফর্ম্যাটে তার সর্বোচ্চ স্কোর ১১৭ রান।
রোহিত শর্মা
ভারতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে কতটা ভয়ঙ্কর তা পুরো ক্রিকেট বিশ্বই জানে। হিটম্যান রোহিত শর্মা ওয়ান ডে এবং টি২০তে সবচেয়ে সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় রয়েছেন। রোহিত এই ফর্ম্যাটে ৭১টি ম্যাচে ৩১.৬৭ গড়ে এবং ১৩৫.১১ স্ট্রাইকরেটে ২টি সেঞ্চুরি এবং ১২টি হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে ১৬৪৭ রান করেছেন।
বিরাট কোহলি

ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ওয়ান ডে এবং টেস্টের মতই টি২০ ক্রিকেটেরও দুর্দান্ত একজন ব্যাটসম্যান। বিরাট সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টি২০ ফর্ম্যাটের শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছেন।এই ফর্ম্যাটে বিরাটের সফলতা আন্দাজ করা যেতে পারে এই পরিসংখ্যানে যে তিনি সবচেয়ে দ্রুত ২৭টি ইনিংসে এক হাজার রান পূর্ণ করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। কোহলি ৫৫টি টি২০ ম্যাচে ৫২.৮৬ গড়ে এবং ১৩৭.৮৪ স্ট্রাইকরেটে ১৮টি হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে ১৯৫৬ রান করেছেন।
এবি ডেভিলিয়র্স
দক্ষিন আফ্রিকার মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান অ্যাব্রাহাম বেঞ্জামিন ডেভিলিয়র্স এই ফর্ম্যাটের এক অদ্ভূত ব্যাটসম্যান। যদিও ডেভিলিয়র্স ক্রিকেট জগতের একজন অতুলনীয় ব্যাটসম্যান কিন্তু তিনি তার খতরনাক রূপ টি২০ ক্রিকেটে আলাদা ভাবেই দেখিয়ে থাকেন। এবি এই ফর্ম্যাটে ৭৮টি ম্যাচ খেলেছেন যার মধ্যে ২৬.১২ গড়ে এবং ১৩৫.১৬ স্ট্রাইকরেটে ১০টি হাফসেঞ্চুরির সাহায্যে ১৬৭২ রান করেছেন। সেই সঙ্গে উইকেটকীপিং করে ২১টি ক্যাচ এবং ৭টি স্ট্যাম্পিং করেছেন।
ব্রেন্ডন ম্যাকুলাম
যখনই টি২০ ক্রিকেটের কথা হয় তখনই নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন উইকেটকীপার ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাকুলামের কথা উঠে আসে। ম্যাকুল্যাম টি২০ ক্রিকেটের একজন ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান। ম্যাকুলাম টি২০ ফর্ম্যাটে সর্বপ্রথম ১ হাজার এবং ২ হাজার রান করা ব্যাটসম্যান। ম্যাকুলাম নিজের টি২০ ক্রিকেটের কেরিয়ারে ৭১টি ম্যাচে ১৩৬.২১ স্ট্রাইকরেট এবং ৩৫.৬৬ গড়ে ১৩টি হাফ সেঞ্চুরি এবং ২টি সেঞ্চুরির সাহায্যে ২১৪০ রান করেছেন। কীপিং করে তিনি ২৪টি ক্যাচ এবং ৮টি স্ট্যাম্পিংও করেছেন।
এমএস ধোনি (কীপার এবং অধিনায়ক)
মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজের টি২০ ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই এই ফর্ম্যাটের অন্যতম উপযোগী ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রমান করেছেন। সেই সঙ্গে ধোনি নিজের অধিনায়কত্বে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপেও ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। ধোনি বড় শট খেলার ক্ষমতা ধরেন। ধোনি নিজের টি২০ ক্রিকেট কেরিয়ারে ৮৬টি ম্যাচ খেলে ১২৫.২স্ট্রাইক রেটে এবং ৩৬.৮৬ গড়ে ২টি হাফ সেঞ্চুরি সহ ১৩৬৪ রান করেছেন। সেই সঙ্গে কীপিং করে তিনি ৪৭টি ক্যাচ এবং ২৯টি স্ট্যাম্পিংও করেছেন।
শাহিদ আফ্রিদি
পাকিস্থানের প্রাক্তন অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি এই ফর্ম্যাটের সবচেয়ে সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে অন্যতম। আফ্রিদি নিজের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নিজের সঠিক বোলিংয়েও এই ফর্ম্যাটে নিজের প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। আফ্রিদি এই ফর্ম্যাটে সবচেয়ে বেশি ১১বার ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কারও জিতেছেন। পাকিস্থানের হয়ে ৯৮টি টি২০ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করে ১৫০.৭৫ স্ট্রাইকরেটে ১৪০৫ রান করার পাশাপাশি বোলিংয়ে ৬.৬১ ইকোনমি রেটে ৯৭টি উইকেটও নিয়েছেন আফ্রিদি।
ডোয়েন ব্র্যাভো
ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা অলরাউন্ডার খেলোয়াড় ডোয়েন ব্র্যাভো টি২০ ফর্ম্যাটের সবচেয়ে চালাক বোলারদের তালিকায় রয়েছেন। এছাড়াও ডোয়েন ব্র্যাভো নিজের ব্যাটিংয়েও দলকে জয় এনে দিতে সক্ষম হয়েছেন। ডোয়েন ব্র্যাভো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারদের মধ্যে অন্যতম। ব্র্যাভো ৬৬টি ২০ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব করে ৮.৪৬ ইকোনমি রেটে ৫২টি উইকেট নিয়েছেন সেই সঙ্গে ব্যাটিংয়েও ১১৬র স্ট্রাইকরেটে এবং ২৪.২৯ গড়ে ১১৪২ রান করেছেন।
রশিদ খান
আফগানিস্থানের চোখের মনি বনে যাওয়া রশিদ খান নিজের রহস্যময় স্পিন বোলিংয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলেছেন। রশিদ খান বিশেষ করে টি২০ ক্রিকেটে দুর্দান্ত বোলিংয়ের প্রদর্শন করে দেখিয়েছেন। রশিদ খানের বোলিং পরিসংখ্যানই আপনাকে তার প্রভাব জানিয়ে দেবে। আফগানিস্থানের হয়ে রশিদ ২৭টি টি২০ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৫.৯১ ইকোনমি রেটে ৪২টি উইকেট নিয়েছেন।
উমর গুল
পাকিস্থানের প্রাক্তন জোরে বোলার উমর গুল এই মুহুর্তে ক্রিকেটের কোনও ফর্ম্যাটে খেলতে না পারলেও তিনি যতক্ষন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন ততক্ষণ নিজের দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন। গুল দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করে ৬০টি ম্যাচে ৭.১৯ এর দুর্দান্ত ইকোনমি রেটে ৮৫টি উইকেট হাসিল করেছেন টি২০ ক্রিকেটে।
লাসিথ মালিঙ্গা
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ইয়র্কার মহারথী লাসিথ মালিঙ্গা টি২০ ক্রিকেটের সবচেয়ে সেরা বোলার হিসেবে নিজেকে সবার আগে রাখতে সাফল্য অর্জন করেছেন। মালিঙ্গা নিজের সঠিক ইয়র্কারে টি২০ ক্রিকেটে বিশেষভাবে সফল হয়েছেন এবং তাবড় তাবড় ব্যাটসম্যানদের তার সামনে নতজানু হতে বাধ্য করেছেন। মালিঙ্গা নিজের টি২০ কেরিয়ারে ৬৮টি ম্যাচ খেলে ৭.৩৬ ইকোনমি রেটে ৯০টি উইকেট নিয়েছেন।
নোট—খেলোয়াড়দের এই পরিসংখ্যান ২৫ বছর অর্থাৎ ১মার্চ ১৯৯৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত।