বিশ্বকাপ (ICC World Cup) ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ও বিতর্কিত ফাইনাল কোনটি? প্রশ্নের উত্তরে শতকরা নব্বই ভাগ ক্রিকেট অনুরাগীই সম্ভবত বলবেন ২০১৯-এর ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড (ENG vs NZ) ফাইনালটির কথা। লর্ডসের মাঠে সেইদিন টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করেছিলো নিউজিল্যান্ড। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪২ রান তোলে কিউইরা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে চাপে পড়ে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। একটা সময় চালকের আসনে ছিলো নিউজিল্যান্ডই। শেষমেশ বেন স্টোকসের (Ben Stokes) সৌজন্য ম্যাচ ড্র করে তারা। খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। চমকের শেষ হয় নি সুপার ওভারেও। প্রথম ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড। তারা তোলে ১৫ রান। জবাবে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ড’ও থামে ১৫ রানেই। শেষ বলে মার্টিন গাপ্টিলের মরিয়া ডাইভ’ও ট্রফি জেতাতে পারে নি কিউইদের। শরীর শূন্যে ছুঁড়ে উইকেট ভেঙে দেন জস বাটলার (Jos Buttler)।
একই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই দলের মধ্যে ব্যবধান খুঁজে বের করতে এক অভাবনীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা আইসিসি (ICC)। বাউন্ডারি কাউন্ট নিয়ম, অর্থাৎ কে বেশী বাউন্ডারি মেরেছে সেই সাপেক্ষে স্থির হয় বিশ্বজয়ীর নাম। খেতাব জেতে ইংল্যান্ড। পরে বিতর্কের কারণে এই নিয়ম অবশ্য সরিয়ে নিয়েছে ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। এখন প্রথম সুপার ওভারে জয়ী নির্ধারিত না হলে ফের সুপার ওভার আয়োজনের নিয়ম করা হয়েছে। এই ম্যাচের প্রায় পাঁচ বছর পর ইওন মর্গ্যান (Eoin Morgan), বেন স্টোকসদের জয় পড়েছে প্রশ্নের মুখে। আঙুল তুলেছেন খোদ সেই ম্যাচের আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস।
Read More: পাকিস্তানের কোচ হচ্ছেন রবি শাস্ত্রী, পাচ্ছেন বাবর’দের টি-২০ বিশ্বকাপ জেতানোর দায়িত্ব !!
ভুল সিদ্ধান্তে বিশ্বকাপ জয় ইংল্যান্ডের-

আম্পায়ার হিসেবে নিজের দীর্ঘ কেরিয়ারে সম্প্রতি দাঁড়ি টেনেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মারিয়াস ইরাসমাস (Marais Erasmus)। অবসরের পর তিনি আম্পায়ারিং কেরিয়ারের নানা দিক তুলে ধরেছেন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’কে দেওয়া একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে তাঁর এবং সহ-আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার (Kumar Dharmasena) করা বিরাট ভুলের কথা। এই ভুলের কারণেই যে প্রথমবারের জন্য ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ (World Cup 2019) জয়ের স্বাদ পায় তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
লর্ডসের মাঠে তখন লড়ছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2019) জিততে গেলে চাই তিন বলে ৯ রান। পাল্লা ভারী নিউজিল্যান্ডের দিকেই। তখন দুই আম্পায়ারের একটি সিদ্ধান্তই বদলে দেয় ম্যাচের গতি প্রকৃতি। ডিপ মিড উইকেটের দিকে বল ঠেলে দুই রানের জন্য দৌড়েছিলেন বেন স্টোকস। ফিল্ডার বল হস্তগত করে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন উইকেটের দিকে। তা স্টোকসের (Ben Stokes) ব্যাটে লেগে বাউন্ডারি পেরিয়ে যায়। দুই রানের সাথে ওভারথ্রো-এর চার রান যুক্ত করে মোট ছয় রান ইংল্যান্ডের স্কোরে যোগ করেন ইরাসমাস (Marais Erasmus) ও ধর্মসেনা।
তাঁরা খেয়াল করেন নি যে ফিল্ডার বল ধরার আগে মাঝ পিচে একে অপরকে অতিক্রম করে যান নি দুই ইংল্যান্ড ব্যাটার। আদতে ছয় নয়, পাঁচ রান যুক্ত হওয়ার কথা ইংল্যান্ডের স্কোরে। যদি দুই আম্পায়ার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে ড্র করা সম্ভব হত না ইংল্যান্ডের পক্ষে। ২৪১ নয়, হয়ত ২৪০ রানে পৌঁছত তারা। সেক্ষেত্রে এক রানে জিতে প্রথমবারের জন্য ওডিআই বিশ্বকাপ (ICC World Cup) জিততে পারত নিউজিল্যান্ড’ও। এই ঘটনা নিয়ে ম্যাচ শেষে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিলো। কিন্তু মুখ খোলেন নি দুই আম্পায়ার। অবসরের পর অবশেষে দোষ স্বীকার করলেন ইরাসমাস।
সাক্ষাৎকারে ত্রুটি মেনে নিলেন ইরাসমাস-

২০১৯-এর বিশ্বকাপ ফাইনালের পর কিংবদন্তি অজি আম্পায়ার সাইমন টাফেল (Simon Taufel) সিডনি হেরাল্ড পত্রিকায় কুমার ধর্মসেনা ও মারাইস ইরাসমাসের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তিনি লেখেন, “এটা পরিষ্কার বোঝার ভুল। ওদের (ইংল্যান্ড’কে) পাঁচ রান দেওয়া উচিৎ ছিলো। ছয় নয়।” ক্রিকেটের নিয়মাবলী’র ১৯.৮ ধারায় থাকা ওভারথ্রো নিয়মটি সম্পর্কে এরপরে বিস্তারে ব্যাখ্যা দেন তিনি। টাফেল জানান “যে মুহূর্তে ফিল্ডার বলটি ছোঁড়েন, তখন থেকে ওভারথ্রো নিয়ম কার্যকরী হয়।” এক্ষেত্রে যখন ফিল্ডার বলটি ছুঁড়েছিলেন, তখন একে অপরকে অতিক্রম করেন নি দুই ইংল্যান্ড ব্যাটার। ফলত বাউন্ডারির সাথে দুই নয়, এক রান অতিরিক্ত পাওয়ার কথা ইংল্যান্ডের।
ঘটনার প্রায় বছর পাঁচেক পর টাফেলের (Simon Taufel) যুক্তি মেনে নিলেন খোদ ইরাসমাস (Marain Erasmus)। ঘটনার পর দুই আম্পায়ারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘দ্য টেলিগ্রাফ’কে তিনি জানান, “পরের দিন আমি নিজের হোটেলের ঘর থেকে প্রাতরাশ সারতে যাচ্ছিলাম। কুমার ধর্মসেনা নিজের ঘরের দরজা খুলে বাইরে এসে বলে, ‘দেখেছো যে আমরা একটা বড়সড় ভুল করে ফেলেছি?’ তখনই আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারি। মাঠে আমাদের মনে হয়েছিলো ছয়। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করেছিলাম যে ছয় হবে। আমরা বুঝতে পারি নি তখন যে ওরা একে অপরকে অতিক্রম করে নি।”