আন্ডারওয়ার্ল্ড, অপরাধজগত সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা যাঁদের রয়েছে, তাঁরা সকলেই এক বাক্যে চেনেন দাউদ ইব্রাহিম’কে (Dawood Ibrahim)। তাঁর কুখ্যাত ডি কোম্পানির নাম জড়িয়ে রয়েছে ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের সঙ্গে। ২০০৮ সালের ২৬/১১-র ঘটনাও নাকি ঘটেছিলো দাউদের মদতেই, এমন কথাও শোনা যায় প্রায়শই। মুম্বই-এর এক পুলিশ কনস্টেবলের পুত্র থেকে দাউদ কি করে অপরধাজগতে হাত পাকালেন, কি করে হয়ে উঠলেন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ক্রিমিনাল, তা নিয়ে একাধিক সিনেমা, ওয়েব সিরিজ অবধি তৈরি হয়েছে বলিউডে। ভারত থেকে পালিয়ে কখনও মধ্যপ্রাচ্য আবার কখনও পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়েছেন দাউদ (Dawood Ibrahim)। এমন খবরও মিলেছে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির রিপোর্টে। যদিও পাকিস্তানের বারবার অস্বীকার করা হয়েছে তাদের জমিতে দাউদের অস্তিত্বের কথা।
বর্তমানে খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন দাউদ ইব্রাহিম (Dawood Ibrahim)। খবর মিলেছে ৬৭ বছরের দাউদ নাকি ভর্তি রয়েছেন করাচী শহরের এক হাসপাতালে। কোনো অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির কারসাজিতে বিষক্রিয়ার শিকার হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পাক সরকারের তরফে মুখে কুলুপ আঁটা হয়েছে এই বিষয় নিয়ে। কিন্তু প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার দাউদ ইব্রাহিম ও তাঁর পরিবারকে গৃহবন্দী করার ঘটনা থেকেই সন্দেহ গাঢ় হয়েছে আরও। দাউদের (Dawood Ibrahim) কন্যার সাথে বিয়ে হয়েছে মিয়াঁদাদের পুত্রের। তাঁর মাধ্যমে কোনো খবর যাতে বাইরে না বেরোয়, তা নিশ্চিত করতেই মিয়াঁদাদকে গৃহবন্দী করেছে সরকার, আন্দাজ বিশেষজ্ঞদের। কেবল মিয়াঁদাদ নয়, ক্রিকেটজগতের সঙ্গে দাউদের (Dawood Ibrahim) যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। টিম ইন্ডিয়ার সাজঘরে দাউদের আনাগোনার এক ঘটনার কথা সম্প্রতি জানিয়েছিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক দিলীপ ভেঙ্কসরকার (Dilip Vengsarkar)।
Read More: শোয়েব আখতারের নিশানায় বিশ্বকাপের প্রোমো ভিডিও, বাবর আজম না থাকায় ICC-কে আক্রমণ পাক প্রাক্তনীর !!
টিম ইন্ডিয়াকে টোপ দিয়েছিলেন দাউদ ইব্রাহিম-
ক্রিকেট ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসাজশ নিয়ে প্রায়শই কথা ওঠে। বর্তমানে আইসিসি বা বিসিসিআই-এর মত আন্তর্জাতিক বা দেশীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থাগুলি ক্রিকেট ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে বিশেষভাবে সচেষ্ট। তার সুফলও পাওয়া গিয়েছে গত কয়েক বছরে। কিন্তু গত শতাব্দীর সত্তর বা আশির দশকে এত কড়াকড়ি ছিলো না নিয়মনীতির ক্ষেত্রে। ফলে ফাঁক গলে দুর্নীতির কালো থাবা মাঝেমধ্যেই গ্রাস করত ক্রিকেটকে। ১৯৮৭-র অস্ট্রালেশিয়া কাপের তেমনই এক স্মৃতি ভাগ করে নিয়েছেন ভারতীয় কিংবদন্তি দিলীপ ভেঙ্কসরকার (Dilip Vengsarkar)। নেতা হিসেবে কপিল দেব কেনো সর্বকালের সেরাদের একজন তাও প্রমাণ হয়েছে তাঁর স্মৃতিচারণ থেকে।
১৯৮৭’তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের শারজা স্টেডিয়ামে ম্যাচ ছিলো ভারতের। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচের আগে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) সাজঘরে ঢুকে পড়েছিলেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘ডন’ দাউদ ইব্রাহিম (Dawood Ibrahim)। যদি পাকিস্তানকে হারাতে পারে ভারত তাহলে প্রত্যেক ক্রিকেটারকে টয়োটা গাড়ি দেওয়ার টোপ দিয়েছিলেন তিনি। ম্যাচ গড়াপেটের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দলনায়ক কপিল দেব (Kapil Dev)।
বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক দাউদ’কে সাজঘরে ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন। অধিনায়কের রুদ্রমূর্তি দেখে কথা বাড়ান নি দাউদ। রণে ভঙ্গ দিয়ে ফিরে যান তিনি। সেই ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন ভেঙ্কসরকার (Dilip Vengsarkar)। এতদিন পর সংবাদমাধ্যমকে জানালেন পুরনো কাহিনী। তবে দাউদের সাথে কপিলের বচসার ঘটনাটি প্রাক্তন বিসিসিআই সচিব জয়ন্ত লেলে তাঁর, “I Was There-Memories of a Cricket Administrator” বইতেও লিপিবদ্ধ করেছেন।
কপিলকে সাবধান করেছিলেন মিয়াঁদাদ-
জলগাঁওতে এক অনুষ্ঠানে গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন দিলীপ ভেঙ্কসরকার (Dilip Vengsarkar)। তিনি জানান সাংবাদিক সম্মেলন থেকে ফিরে এসে দাউদকে দেখে সতীর্থদের কপিল (Kapil Dev) জিজ্ঞেস করেন তাঁর পরিচয়। পুরো ঘটনা শুনে তিনি দাউদকে (Dawood Ibrahim) বেরিয়ে যেতে বলেন। বেরোনোর আগে দাউদ সাজঘরে বলে যান টয়োটা গাড়ির প্রস্তাবটি বাতিল করলেন তিনি। কিছুক্ষণ পর টিম ইন্ডিয়ার (Team India) প্রবেশ করেন পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদ (Javed Miandad)। ভেঙ্কসকারকে তিনি বলেন, “বন্ধু ও (কপিল দেব) জানে না দাউদ ইব্রাহিমকে। ভবিষ্যতে ওর সমস্যা হতে পারে কিছু।” অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়ে ভেঙ্কসরকার (Dilip Vengsarkar) বলেন, “দেশে হোক বা বিদেশে, কপিলের কোনো সমস্যা হবে না।” পাক কিংবদন্তি মিয়াঁদাদ সম্পর্কে দাউদ ইব্রাহিমের শ্যালক।
দাউদ (Dawood Ibrahim) সাক্ষাৎ নিয়ে মুখ খুলেছেন শারজার দলে থাকার আরও কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটার। রবি শাস্ত্রী (Ravi Shastri) জানান পর নিজের রুঢ় ব্যবহারের জন্য দাউদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন কপিল (Kapil Dev)। তবে দাউদ সাজঘরে আসছেন জেনে চা খাওয়ার অজুহাত দিয়ে তিনি বাইরে চলে গিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেই সময় প্রায়ই ভারতীয় সাজঘরে পা রাখতেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘ডন’ জানিয়েছেন তিনি।
শাস্ত্রীর দাবীকে সমর্থন জানিয়েছেন আরেক প্রাক্তনী মনিন্দর সিং’ও (Maninder Singh)। তিনি বলেন, “তখন সাজঘরে বাইরের ব্যক্তিদের যাওয়া-আসা নিয়ে কোনো বাধা ছিলো না। দাউদ শুধু প্রত্যেক ম্যাচে নয়, সবকটি পার্টিতেই উপস্থিত থাকতেন।” তবে ম্যাচ গড়াপেটার ব্যাপারে তাঁদের কোনো ধারণা ছিলো না বলেই দাবী মনিন্দরের।