CT 2025: ২০২৪ সালের জুন মাসে টি-২০ বিশ্বকাপ জিতেছিলো ভারত। এগারো বছর পর আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টে জুটেছিলো সেরার শিরোপা। পরবর্তী ট্রফি জয়ের জন্য বেশীদিন অপেক্ষা করতে হলো না ‘মেন ইন ব্লু’কে। দুবাইয়ের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) জিতে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা বুঝিয়ে দিলেন যে সাদা বলের দুই ফর্ম্যাটেই এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দল টিম ইন্ডিয়াই। টসে জিতে আজ প্রথম ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। ২৫১’র বেশী তুলতে সক্ষম হয় নি তারা। খাতায়-কলমে অল্প রানের পুঁজি সম্বল করেও মরণপন লড়াই চালালেন কিউই বোলাররা। রোহিত যে গতিতে ইনিংস শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হয়েছিলো যে ত্রিশ ওভারের মধ্যে ম্যাচ শেষ করে দেবে ভারত। কিন্তু নিয়মিত উইকেট তুলে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছিলেন ব্রেসওয়েল, স্যান্টনাররা। শেষমেশ অবশ্য রাহুল, হার্দিকদের দাপটে তৃতীয়বার খেতাব জয় ভারতেরই।
Read More: CT 2025 IND vs NZ: “ডুবিয়ে দিয়ে গেলো…” ফাইনালে ব্যর্থ বিরাট কোহলি, আক্ষেপের পাহাড় জমলো সোশ্যাল মিডিয়ায় !!
১) ইনিংসের শুরুতে ঝড় রচিনের-
দুবাইয়ের মন্থর পিচে স্পিন যে চাপে ফেলতে পারে তা অনুমান করে শুরুতে ভারতের পেস আক্রমণকে নিশানা করেছিলেন কিউই ওপেনার রচিন রবীন্দ্র। কব্জির মোচড়ে মিড-অন দিয়ে মহম্মদ শামিকে পাঠান বাউন্ডারির ঠিকানায়। ফ্রন্ট-ফুলে পুল মেরে ছক্কা হাঁকান হার্দিক পান্ডিয়ার বলে। তরুণ অলরাউন্ডারের সৌজন্যে নিউজিল্যান্ডের রান রেট একটা সময় ৭ ছুঁয়ে ফেলেছিলো। ভাগ্যের সহায়তাও এই সময় পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর দু’টি ক্যাচ হাতছাড়া করেন মহম্মদ শামি ও শ্রেয়স আইয়ার।
২) ঘূর্ণি বোলিং-এ চাপে পড়ে কিউইরা-

শামি-হার্দিকদের পক্ষে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং আক্রমণ সামলানো যে সম্ভব হচ্ছে না তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। প্রথম পাওয়ার প্লে’তেই তিনি বল তুলে দেন স্পিনারদের হাতে। সাফল্যের জন্য এরপর বেশীক্ষণ আর অপেক্ষা করতে হয় নি। উইল ইয়ং-কে ফিরিয়ে প্রথম ধাক্কাটা দেন বরুণ চক্রবর্তী। ক্রিজে জমে যাওয়া রচিনকেও কিছুক্ষণের মধ্যেই সাজঘরমুখী করেন কুলদীপ যাদব। ৩৭ করে আউট হন তিনি। অভিজ্ঞ উইলিয়ামসন’ও আজ দাগ কাটতে পারেন নি। কুলদীপের বলে তাঁরই হাতে ক্যাচ তুলে ফেরেন ১১ রান করে।
৩) মন্থর অর্ধশতক মিচেলের, নড়বড়ে মধ্যক্রম-
মাঝের ওভারগুলোতে নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের হাত খোলার বিশেষ সুযোগ দেন নি ভারতের স্পিনাররা। এক প্রান্ত আঁকড়ে রেখে ব্যাটিং করেন ড্যারিল মিচেল। তিনি ৬৩ করলেও খরচ করেছেন ১০১ বল। টম ল্যাথাম ১৪ রান করে আউট হন। ধুন্ধুমার ‘ফিনিশার’ হিসেবে সর্বজনবিদিত গ্লেন ফিলিপস’ও বাড়াতে পারেন নি স্কোরবোর্ডের গতি। ৫২ বলে ৩৪ করে আউট হন তিনিও।
৪) ঝোড়ো অর্ধশতক ব্রেসওয়েলের-

লোয়ার অর্ডারে নেমে লড়াই চালিয়ে গেলেন অলরাউন্ডার মাইকেল ব্রেসওয়েল। ডেথ ওভারে পেসারদের উপর চড়াও হন তিনি। মাত্র ৪০ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৫৩ করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ব্রেসওয়েলের দাপটেই নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৫১ তুলতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড। ভারতের হয়ে নজর কাড়েন স্পিনাররা। বরুণ চক্রবর্তী ও কুলদীপ যাদব ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। রবীন্দ্র জাদেজা পেয়েছেন ১টি উইকেট। অক্ষর প্যাটেল উইকেট না পেলেও খরচ করেন মাত্র ৩০ রান।
৫) দুবাইয়ে রোহিতের ব্যাটিং তাণ্ডব-

ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা’র মুখে প্রায়শই শোনা যায় ‘ইনটেন্ট’ শব্দটি। ব্যক্তিগত মাইলস্টোনের দিকে না তাকিয়ে দলের স্বার্থে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার কথা বলেন তিনি। আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে স্বয়ং ব্যাট হাতে সেটাই করে দেখালেন টিম ইন্ডিয়ার ‘ক্যাপ্টেন।’ প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই গগনচুম্বী ছক্কা হাঁকান তিনি। এরপর কখনও দুরন্ত অফ ড্রাইভে ছিনিয়ে নিয়েছেন বাউন্ডারি, আবার কখনও দুরন্ত পুলে প্রতিপক্ষ বোলারকে আছড়ে ফেলেছেন গ্যালারিতে। ৪১ বলে অর্ধশতকের গণ্ডী পেরোন অধিনায়ক। তাঁর সৌজন্যে ১৮ ওভারের মধ্যে ১০০ ছুঁয়েছিলো ভারতের রান।
৬) ব্যর্থ কোহলি, জোড়া ধাক্কায় বেসামাল ভারত-
১০৫ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারিয়েছিলো ভারত। গ্লেন ফিলিপসের আরও একটি অবিশ্বাস্য ক্যাচের শিকার হন শুভমান গিল। আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নজর কাড়তে ব্যর্থ বিরাট কোহলি। ১ রান করে মাইকেল ব্রেসওয়েলের বলে লেগ বিফোর হন তিনি। তিন রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারানোর পর চাপ বেড়েছিলো ‘মেন ইন ব্লু’র উপর। মন্থর হয়ে পড়েছিলো স্কোরবোর্ডের গতি।
৭) শতক হাতছাড়া রোহিতের-
রানের গতি কমে আসায় খানিক অধৈর্য্য হয়ে পড়েছিলেন রোহিত। তারই ফল ভুগতে হলো ভারতকে। স্টেপ আউট করে ছক্কা মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন তিনি। ৮৩ বলে ৭৬ করে সাজঘরে ফেরেন হিটম্যান। মেরেছেন ৭টি বাউন্ডারি ও ৩টি ছক্কা। ভারত অধিনায়ককে ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে লড়াইতে ফিরিয়েছিলেন রচিন রবীন্দ্র।
৮) দুর্দান্ত জুটি অক্ষর-শ্রেয়সের-

চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেকে আলাদা উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ, প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই চার নম্বরে নেমে দলের ত্রাতা হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ব্যতিক্রম হলো না আজও। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে পৌঁছে যাওয়া ‘মেন ইন ব্লু’কে সাফল্যের সরণিতে ফিরিয়ে আনলেন তিনিই। ৪৮ রানের চমৎকার ইনিংস খেললেন তিনি। যোগ্য সঙ্গত করেন অক্ষর প্যাটেল’ও। লো স্কোরিং ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এলো ২৩ রান। ৬১ রানের জুটি গড়েন দুজনে।
৯) সাফল্যে অবদান রাহুল-হার্দিকেরও-

৪২তম ওভারে অক্ষরকে আউট করে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। ঘূর্ণি পিচে অঘটনের আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছিলেন না ভারতীয় সমর্থকেরা। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতেও স্নায়ুর চাপের শিকার হন নি কে এল রাহুল। ‘অ্যাঙ্কর’-এর ভূমিকা পালন করেন তিনি। অপরপ্রান্তে ১৮ বলে ১৮ রানের ঝোড়ো ক্যামিও খেলে আস্কিং রেট কমিয়ে আনেন হার্দিক। শেষমেশ রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাট থেকে এলো উইনিং স্ট্রোক। ৩৩ বলে ৩৪ করে অপরাজিত রইলেন কে এল রাহুল’ও। ২০১৭ সালের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছিলো ‘মেন ইন ব্লু’কে। আট বছর পর সেই আক্ষেপ মিটলো নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।